এশিয়া কাপে দ্বিতীয় ম্যাচেও ভারতের কাছে হেরেছে পাকিস্তান। টানা দুই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর পর ভারত টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার জানালেন, ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচে আগের সেই ঝাঁঝ এখন আর নেই। ম্যাচ শেষ হয়ে গেলেও দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড়দের ঘিরে মাঠের বাইরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে মাঠে শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফের সঙ্গে অভিষেক শর্মার বাগবিত-া এবং রউফের অঙ্গভঙ্গি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চারদিকে।
আগের ম্যাচের চেয়ে পাকিস্তান এবার অন্তত একটু ভালো খেলেছে। এমন একটি প্রশ্ন ছুটে গিয়েছিল ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমারের দিকে। তিনি জবাবে বললেন, এই দুই দলের লড়াইয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই খুঁজে পান না। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের লড়াইয়ে ভারতের একতরফা দাপট চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। এবারের এশিয়া কাপেও দুই ম্যাচে ভারতকে সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি পাকিস্তানিরা। ২০২২ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের জয়ের পর সব সংস্করণ মিলিয়ে ভারত জিতে নিল টানা সাত ম্যাচ। টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে ভারতের জয় হয়ে গেল ১২টি, পাকিস্তানের মোটে ৩টি। ওয়ানডে ইতিহাসে দুই দলের লড়াইয়ে এখনো এগিয়ে পাকিস্তান। তবে গত ২০ বছরে বদলে গেছে চিত্র। ২০০৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের জয় ছিল ৬২টি, ভারতের ৩৫টি। ২০০৬ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত ভারত জিতেছে ২৩টি, পাকিস্তান ১১টি। দুই দলের সবশেষ টানা ছয় ওয়ানডেতে জিতেছে ভারতই।
এবারের এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে ১২৭ রান তুলতে পেরেছিল পাকিস্তান। সুপার ফোর পর্বে রোববার তারা তোলে ১৭১ রান। যদিও শেষ পর্যন্ত হারতে হয় ঠিকই। ম্যাচের পর সূর্যকুমার বলেন, ‘মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে একই ব্যাপার। আমার মতে, দুটি দল যদি ১৫-২০ বার মুখোমুখি হয় এবং সেই লড়াইয়ের ফল থাকে ৭-৭ বা ৮-৭, তাহলে সেটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে। কিন্তু যদি ১৩-০ বা ১০-১ হয়ৃ আমি জানি না, এখানে পরিসংখ্যান কেমন। তবে এটি এখন আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। তবে হ্যাঁ, আমরা ওদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছি।’
দুবাইয়ে গত রোববার ম্যাচের প্রথম দিকে দাপট ছিল পাকিস্তানেরই। প্রথম ১০ ওভারে ৯১ রান তুলে ফেলেছিল তারা স্রেফ ১ উইকেট হারিয়ে। তবে এরপরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। পরের সাত ওভারে মাত্র ৩৮ রান তুলতে পারে সালমান আলি আগার দল। টানা ৪০ বলে আসেনি বাউন্ডারি! সূর্যকুমার বলেন, ম্যাচের ভাগ্য বদলে গেছে সেই মোড় থেকেই। তিনি বলেন, ‘ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল প্রথম ইনিংসের প্রথম পানি পানের বিরতি। ওই বিরতির পর সবার শরীরী ভাষা বদলে গেছে। সাধারণত দেখা যায়, পাওয়ার প্লে শেষে খেলার চিত্র বদলায় অনেক সময়।
তবে আজকে বদলেছে ১০ ওভারের পর।’ তিনি আরো বলেন, ‘বোলাররা তাদের লাইন-লেন্থ বদলেছে, উপলবব্ধি করতে পেরেছে পরিস্থিতির দাবি এবং আরেকটু বেশি প্রাণশক্তি দেখিয়েছে। স্পিনাররা ভালো বল করেছে। আমার চোখে, টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারেন শিভাম দুবের স্পেলটি।’ অন্যদিকে, ভারতের ইনিংস চলাকালে বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করছিলেন হারিস রউফ। গ্যালারি থেকে কিছু ভারতীয় সমর্থক তাকে উসকে দিচ্ছিল। সেই উসকানিতে হারিস রউফ আঙুল তুলে ‘৬-০’ দেখান এবং হাত নেড়ে এমন ভঙ্গি করেন যেন একটি যুদ্ধবিমান উড়ছে এবং পরে ভেঙে পড়ছে। তার এই ইঙ্গিত যে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর মে মাসের ‘অপারেশন বুনইয়ান-উম-মারসুস’ সম্পর্কিত, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি।
ওই অভিযানে পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল, যার মধ্যে কয়েকটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান। হারিস রউফের এমন ভঙ্গি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সমর্থকরা এটিকে সাহসী ও গর্বের ইঙ্গিত হিসেবে দেখলেও, ভারতীয় সমর্থকরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ম্যাচে শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফের সঙ্গে অভিষেকের বাগবিত-া হয়। কিন্তু অভিষেক ব্যাট হাতেই এর জবাব দেন।
শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৭৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে ১৯তম ওভারেই ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তিনি। ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। ম্যাচ শেষে অভিষেক বলেন, ‘ওরা বিনা কারণে উসকে দিচ্ছিল। আমি ব্যাট দিয়েই জবাব দিয়েছি। দলের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। গিলের সঙ্গে অনেক দিন ধরে খেলছি, আজ দুজনেই একে অপরকে সাপোর্ট করেছি। দলের আস্থা থাকায় আমি এমনভাবে খেলতে পারি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন