রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে ক্রিকেটে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই যুদ্ধের আবহ। আর এমন আবহ বাংলাদশ ও ভারত লড়াইয়েও। ২০১৫ বিশ^কাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ‘নো বল’ বিতর্ক দিয়ে শুরু। এরপর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ভারতকে ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে দেওয়ায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। মাঠে তুমুল লড়াই, মাঠের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্ক, সামাজিকমাধ্যমে তোলপাড় আর আবেগের ঝড় মিলিয়ে একটা সময় বাংলাদেশ ও ভারত লড়াইয়ের উত্তেজনা ছাড়িয়ে গিয়েছিল সবকিছুকে। সময়ের পরিক্রমায় এশিয়া কাপের বড় মঞ্চে আবার পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছে দুদল। প্রতিবেশী দুই দেশের লড়াই দেখতে মুখিয়ে আছে ক্রিকেট বিশ^। আগামীকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে সুপার ফোর পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে তারা। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
এশিয়া কাপের শিরোপা জেতার লক্ষ্য বাংলাদেশের। তাই ফাইনালে চোখ রেখেই ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবেন লিটনরা। ভারত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও জয়ের অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবেন তারা। ফাইনালে উঠতে হলে বাংলাদেশের জয়ের বিকল্প নেই। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে চার ম্যাচ খেলে তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিল টাইগাররা। সবশেষ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই সুপার ফোর পর্বে দুর্দান্ত সূচনা করে বাংলাদেশ দল। গত ম্যাচে পাওয়া জয়ের আত্মবিশ^াস কাজে লাগিয়ে ভারতের বিপক্ষেও ভালো কিছু করে দেখাতে আত্মবিশ^াসী লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। অন্যদিকে, টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য ভারত দল। সর্বশেষ তারা পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোরে যাত্রা করেছে। এর আগে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতেছে ভারতীয়রা। যে ধরনের ক্রিকেট খেলছে ভারত, তাতে বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি খুবই কঠিন পরীক্ষার হতে যাচ্ছে।
এ পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশ মোট ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে দিল্লির মাঠে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক জয়টি পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে ও পরে কোনো ম্যাচই আর জিততে পারেনি লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা ভারতের অর্জনের ভান্ডারও সমৃদ্ধ। বর্তমানে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের চ্যাম্পিয়ন তারা। এশিয়া কাপে সবচেয়ে সফল দল ভারত। দুর্দান্ত ফর্মেও আছে তারা। ভারতের ব্যাটিং বিভাগ বিশ^নন্দিত। আর বোলিং বিভাগ খুবই বিধ্বংসী। যেকোনো কন্ডিশনে তাদের হারানো সহজ নয়। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য যে চ্যালেঞ্জের হতে যাচ্ছে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশের ব্যাটাররা হাতখুলে ব্যাটিং করতে শুরু করেছে। গত ম্যাচে অনেক দিন পর দলে ফেরা সাইফ হাসান ষাটোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন। রানে ফিরেছেন তাওহীদ হৃদয়।
পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তা ছাড়া লিটন দাসও ছন্দে আছেন। সব মিলিয়ে ভালোভাবে ব্যাটিং বিভাগ ক্লিক করতে পারলে ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছুই করতে পারে বাংলাদেশ। আর বোলিংয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। পেস ও স্পিনের দারুণ সমন্বয় রয়েছে। তাসকিন ও মোস্তাফিজ পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ মেহেদী, নাসুম, রিশাদরা স্পিন বিভাগের মূল শক্তি। যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপের জন্য হুমকি হতে পারেন। বাংলাদেশের ধারালো বোলিং আক্রমণের সামনে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে ভারতকে। সব মিলিয়ে মরুর বুকে বাংলাদেশ ও ভারত ক্রিকেট রোমাঞ্চ উপভোগ করার উপলক্ষ্য তৈরি হতে পারে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন