ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ৩০টি বন্ধ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করেছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা বাড়তে থাকা কারসাজির ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারেন। বাজারে এ ধরনের উদ্যোগ এটাই প্রথম। লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত অবস্থা জানানো এবং অপারেশন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো নিয়ে গুজব বা ভুল তথ্যের মাধ্যমে শেয়ারদরের কারসাজি থেকে তাদের রক্ষা করা। তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে তালিকাভুক্ত টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান হামিদ ফ্যাব্রিকস। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস সংকটের কারণে গত সোমবার কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ১২ আগস্ট রহিমা ফুড করপোরেশন কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট বন্ধ করে কার্যক্রম স্থগিত করেছিল।
ডিএসইর তালিকা অনুযায়ী, অন্যান্য কোম্পানি ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বন্ধ রয়েছে আর একটি প্রতিষ্ঠান ২০০২ সাল থেকে বন্ধ। একই দিনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মে ২০২৪ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাসের বেশি সময় উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে বারাকা পাওয়ার ও জাহিন স্পিনিং মিলসকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দিয়েছে ডিএসই।
বন্ধ কোম্পানির তালিকাÑ অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, আরামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বারাকা পাওয়ার, দুলামিয়া কটন, এমেরাল্ড অয়েল, ফ্যামিলিটেক্স (বিডি), জিবিবি পাওয়ার, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং মিলস, মিঠুন নিটিং, নিউ লাইন ক্লথিংস, নর্দার্ন জুট, নূরানী ডাইং, প্রাইম টেক্সটাইল, আরএসআরএম, রিজেন্ট টেক্সটাইল সুহিৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, টুং হাই নিটিং, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস, রাষ্ট্রায়ত্ত শ্যামপুর সুগার মিলস ও রাষ্ট্রায়ত্ত উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরিজ।
জানতে চাইলে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্না ইমন বলেন, বন্ধ কোম্পানির তালিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা। প্রকৃত অবস্থা না জানায় তারা বহু সময় গুজবের শিকার হন এবং শেয়ারদরের কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি আরও বলেন, অনেক দিন ধরেই এই তালিকা প্রকাশের দাবি ছিল। কারণ শেয়ারবাজার ছাড়া অন্য কোথাও থেকে প্রকৃত অবস্থা জানার সুযোগ নেই। বোর্ড বৈঠকে শেয়ারহোল্ডার পরিচালকেরা বিষয়টি জোরালোভাবে তুলেছিলেন এবং আলোচনার পর তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়।
হামিদ ফ্যাব্রিক্সে গ্যাসের সংকট
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, দুই বছর ধরে গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। সিএনজি ও এলএনজি ব্যবহার করে উৎপাদন চালানোর চেষ্টা করলেও সংকট বাড়ায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধি, ২০১৫ অনুযায়ী ২২ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।
রহিমা ফুডের কার্যক্রম বন্ধ
১২ আগস্ট রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেড দুর্বল বাজার চাহিদা ও কাঁচামালের ঘাটতির কারণে নারিকেল তেল ও কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্টের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারিকেল তেল উৎপাদন শুরু করলেও বাজারে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। তবে তারা এখন সয়াবিন ও সরিষার তেল বোতলজাত ও বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
জেড ক্যাটাগরি শেয়ারের সংখ্যা ১০০
বারাকা পাওয়ার ও জাহিন স্পিনিংকে জেড ক্যাটাগরিতে নামানোর পর এখন মোট ১০০ শেয়ার এই ক্যাটাগরিতে আছে। আগে শুধু লভ্যাংশ না দিলে কোম্পানিগুলোকে জেড ক্যাটাগরিতে নামানো হতো। তবে বিএসইসির নতুন নির্দেশনায় এখন এজিএম না করা, উৎপাদন বন্ধ থাকা এবং পেইড-আপ মূলধনের চেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটেইন্ড আর্নিংস থাকা কোম্পানিগুলোও জেড ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে সেটেলমেন্ট বিলম্বিত হয়, মার্জিন ঋণ পাওয়া যায় না এবং শুধু নগদ লেনদেন করা যায়। বর্তমানে ডিএসইতে মোট ৩৬০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে এ ক্যাটাগরি: ২১৭, বি ক্যাটাগরি: ৮০ ও জেড ক্যাটাগরি: ১০০।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন