খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় মারমা জাতিগোষ্ঠীর এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় উপজেলার একটি গ্রামের খেত থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় রাতেই ওই কিশোরীর বাবা সদর থানায় মামলা করলে গতকাল বুধবার ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি মো. আব্দুল বাতেন মৃধা।
গ্রেপ্তার শয়ন শীল (১৯) সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকার বাসিন্দা। এদিকে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বুধবার সকালে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে আজ বৃহস্পতিবার জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট শেষে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সময়মতো বাড়ি না ফেরায় স্বজনেরা শিক্ষকের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন প্রাইভেট ছুটি হয়েছে।
পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ের রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে একটি খেতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
ওসি আব্দুল বাতেন বলেন, এ ঘটনায় রাতেই ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেন। রাতভর অভিযানের একপর্যায়ে ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় শয়ন শীলকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত বাকি দুজনকে আটকের চেষ্টা চলছে।
আজ আধাবেলা অবরোধের ডাক:
মারমা সম্প্রদায়ের কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে সকালে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। মিছিলটি খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠ থেকে বের হয়ে চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়া, আদালত সড়ক ও নারকেলবাগান ঘুরে শহরের শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আজকের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে আজ বৃহস্পতিবার আধাবেলা অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থী উক্যেনু মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সুমন চাকমা, বাগীশ চাকমা, কৃপায়ন ত্রিপুরা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের প্রতিনিধি আকাশ ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নারী প্রতিনিধি ওয়াপাই মারমা এবং শিক্ষার্থী অংক্যমং মারমা। সভা পরিচালনা করেন নেপোলিয়ন চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাহাড়ে কোনো নারী নিরাপদ নয়। এখানে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোনো বিচার না হওয়ার অপরাধীরা এ ধরনের কাজ করেই যাচ্ছে। গত ২৭ জুন সদরের ভাইবোনছড়া এলাকায় এক শিক্ষার্থীকে দল বেঁধে ধর্ষণ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর গুইমারা সিন্দুকছড়িতে এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার অপরাধীরা এমন কাজ করেই যাচ্ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন