জুলাই আন্দোলন দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেছেন, আন্দোলন ঘিরে দেশের ৪৩৮ স্থানে হত্যাকা- ঘটেছে; মারণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে অর্ধশতাধিক জেলায়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মঙ্গলবার দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন, যাকে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মো. আলমগীর তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। জবানবন্দির একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালে দেশের ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ৫০টির বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ এ সময় ট্রাইব্যুনাল জানতে চায়, জুলাই আন্দোলনে হত্যাকা- বা নৃশংসতা চলল; এসব বন্ধে আসামিরা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কি না; আপনি কি তদন্তে পেয়েছেন?
জবাবে আলমগীর বলেন, ‘না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকা--নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য আসামিরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। একই সঙ্গে যারা হত্যা-গুম-জখম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মূলত জুলাই আন্দোলনসহ গত ১৫ বছরে খুন-গুম, নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।’ এদিন মো. আলমগীরের জবানবন্দি শেষ হয়েছে। তাকে জেরা করার জন্য আগামী সোমবার দিন ঠিক করা হয়েছে বলে জানান কৌঁসুলি ফারুক আহাম্মদ।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও কৌঁসুলি তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার বিচার শুরু হয়। আর তা শুরু হয় সেই আদালতে, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন