দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তথ্য অনুসারে, পার্শ্ববর্তী দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিটের সহায়তায় প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশের টাঁকশালে ছাপা নোটের আদলে নিখুঁতভাবে তৈরি করা কাগজের জাল মুদ্রাগুলো পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরি করার পর গোয়েন্দারা চোরাপথে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। এরপর বিভিন্ন হাত ঘুরে এগুলো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাল নোট তৈরির ও দেশে প্রবেশ করানোর চক্রে গোয়েন্দাদের সঙ্গে ভারতে পলাতক কিছু আওয়ামী লীগের নেতাও সরাসরি জড়িত। এই সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চক্রটি একটি নতুন চেইন তৈরি করেছে, যেখানে ডিলার থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবাই তাদের নিয়ন্ত্রণে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, জাল নোট চক্রের সদস্যরা ফেসবুক, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জাল নোটের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। চটকদার অফার দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করা হচ্ছে। বিশেষ ‘সিক্রেট গ্রুপ’ তৈরি করে সেখানে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। দেখা গেছে, কিছু বিজ্ঞাপনে ১ লাখ টাকার জাল নোট মাত্র ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রির অফার দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের জন্য ‘মানি ব্যাক গ্যারান্টি’ বা ‘মানের নিশ্চয়তা’সহ মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে।
চক্রের পোস্টগুলোতে এমন সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে না পারে। যেমন : ‘নতুন মডেলের রঙিন প্রিন্ট’, ‘পুজোর বাজারের জন্য স্পেশাল অফার’, ‘ঈদ অফারের মতো দারুণ সুযোগ’, ‘উচ্চমানের রেপ্লিকা’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে জাল নোটকে বৈধ পণ্য হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
একটি ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘জাল টাকা বানানোর প্রসিকিউটর’, যেখানে জাল নোটের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। ভিডিওর শিরোনাম ‘জাল টাকা নিতে চান’। এখানে দেওয়া ফোন নাম্বার ০১৩২৬০...। ফোন করলে বলা হয়, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট দেওয়া যাবে। এক লাখ টাকার জাল নোটের দাম ১৮ হাজার টাকা। নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্য ফোনে জানা যায়, ব্যক্তি টাঙ্গাইলে অবস্থান করছেন এবং মাঝে মাঝে গাজীপুরের ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি দাবি করেন, তার কাছে ‘এ’ গ্রেডের নিখুঁত নোট রয়েছে। এসব নোট নেওয়ার জন্য কিছু অগ্রিম টাকা পাঠাতে হবে। নগদ বা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী জাল টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে।
আরেক জাল নোট ব্যবসায়ী জানালেন, নতুন ক্রেতার আস্থা অর্জনের জন্য প্রথমে কিছু অগ্রিম টাকা নিয়ে টাকার স্যাম্পলও পাঠানো হয়। একটি গ্রুপের নাম ‘জাল টাকা বিক্রি করি’। এখানে ‘ইমরোজ কালেক্ট’ নামের একটি আইডি থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞাপনে লেখা আছে, ‘এ গ্রেডের মাল। ওয়াটারপ্রুফ জলছাপ সুতা তৈরি। মেশিন ছাড়া কারো ধরার ক্ষমতা নেই।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান আরও জোরদার করেছি। জনগণকে কোনোভাবেই জাল নোটে আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। এই চক্র দেশের অর্থনীতিকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করলেও, সাধারণ নাগরিকদের সচেতন থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন