মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিল্লাল হোসেন, যশোর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০১:৪৮ এএম

ফার্মেসিতে স্লিপে ছাপিয়ে তেলেসমাতি

৩৫০ টাকার ওষুধ আড়াই হাজার

বিল্লাল হোসেন, যশোর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০১:৪৮ এএম

৩৫০ টাকার ওষুধ আড়াই হাজার

*** হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেশ কিছু নামমাত্র ফার্মেসি প্রতারণার মূল কেন্দ্র
*** হাসপাতালের ড্রাগ লিস্টের হুবহু কপি তৈরি করে রোগী ও স্বজনদের বোকা বানাচ্ছেন ফার্মেসি মালিকরা

যশোরের চৌগাছা উপজেলার তজবীসপুর গ্রামের জামির হোসেন (৫০) পেটের ব্যথায় আক্রান্ত হলে গত বৃহস্পতিবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আনার পর সহায়তার নামে এক দালাল রোগীর পিছু নেন। রোগীকে ওয়ার্ডে নেওয়ার পর দায়িত্বরত সেবিকা ওষুধ কেনার জন্য একটি কাগজ দেন। রোগীর স্বজনরা ওই দালালের সঙ্গে ‘হ’ আদ্যক্ষরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে গেলে কয়েকটি ওষুধের দাম হিসাবের তুলনায় আড়াই হাজার টাকা হয়ে যায়। সন্দেহ হলে অন্য একটি ফার্মেসিতে গেলে দেখা যায়, আসল ওষুধের দাম মাত্র ৩৫০ টাকা।

একইভাবে সিরাজসিংহা গ্রামের সাহেব আলীর স্ত্রী শাবানা বেগমও একই ফার্মেসিতে প্রতারণার শিকার হন। দেড়শ’ টাকার ওষুধের জন্য তার কাছ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

জানা যায়, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেশ কিছু নামমাত্র ফার্মেসি রোগী ও স্বজনদের প্রতারণার মূল কেন্দ্র। অভিযোগ উঠেছে, ফার্মেসি মালিকরা হাসপাতালের ড্রাগ লিস্টের হুবহু কপি তৈরি করে রোগী ও স্বজনদের বোকা বানাচ্ছেন। অনেক সময় সাদা কাগজে দামি ওষুধের নাম লিখে তা বিক্রি করা হয়। তবে সেই টাকা নেওয়া হলেও আসল ওষুধ দেওয়া হয় না।

ফার্মেসি মালিকদের একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। প্রতিটি ফার্মেসিতে কমিশনে নিয়োগকৃত দালাল থাকেন। দালালরা রোগী ও স্বজনদের কৌশলে নিজ ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। জরুরি বিভাগে দালালরা রোগীকে ডাকানো, ট্রলি ঠেলা, ভর্তি টিকিট সেবিকাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং ওয়ার্ডে বিছানা পেতে সাহায্য করার মাধ্যমে স্বজনদের আস্থা অর্জন করেন। এরপর সেবিকা ওষুধের তালিকা লিখে দালালরা রোগীর স্বজনকে ফার্মেসিতে নিয়ে যান।

ফার্মেসিতে স্লিপের মাধ্যমে শুরু হয় তেলেসমাতি। স্লিপে কৌশলে দামি ওষুধের নাম লিখে স্বজনদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা হাতানো হয়। এরপর ফার্মেসি মালিক ও দালালরা ভাগাভাগি করে নেওয়া টাকা লুফে নেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, যেসব ওষুধের নাম সাধারণত প্রতারকরা স্লিপের মধ্যে সংযোজন করছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রফিসিন, ডরসিকম ১৫ এমজি, ট্রাকশন ৫ এমজি,  সেফটিএক্সোন ২ গ্রাম, টিটাগাম ও আইভি ইনডেকেশন। তাদের খপ্পরে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সহজ সরল মানুষ। এভাবে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফার্মেসি মালিক ও দালালরা ভাগাভাগি করে নেয়।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের সামনে অবস্থিত একটি ফার্মেসিতে অ্যাপোনসেট নামে একটি বমির ওষুধ কিনতে যান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সোহান। তার মা জবেদা বেগম হাসপাতালের মহিলা মেডিসেন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রতারণার মাধ্যমে ওই ওষুধের দাম নেওয়া হয় ১ হাজার ৯০০ টাকা। যার প্রকৃত দাম হচ্ছে মাত্র ৬০ টাকা।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের মাহবুর রহমান জানান, তার স্ত্রীর সিজারিয়ার অস্ত্রোপচারের জন্য একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেন। পরে তাকে হিসেব দেখানো হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা। মাহবুর রহমান অভিযোগ করেন অপারেশনের জন্য হাসপাতাল থেকে দেওয়া মেডিসিন লিস্টের কাগজ ওই ফার্মেসিতে রেখে দেওয়া হয়। টাকা পরিশোধ করার সময় তাদের হাতে যে মেডিসিন লিস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয় তা দেখে রীতিমতো অবাক হন। তিনি ওই লিস্টটি আনেন ওয়ার্ডে। সেখানে দায়িত্বরত সেবিকাদের মাধ্যমে জানতে পারেন ওই লিস্টে যে ওষুধের নাম লেখা আছে তার অধিকাংশ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা নেই। পরে মাহবুর রহমান বিষয়টি এক সাংবাদিককে জানান। ওই সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে ৪ হাজার ৬শ’ টাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।

চান্দুটিয়া গ্রামের শিপন নামে এক ব্যক্তি জানান, হাসপাতালের সামনের এক ফার্মেসি মালিক ৮শ’ টাকার ওষুধ দিয়ে আড়াই হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে ধরাধরি করলে ১১শ’ টাকা ফেরত দেয়া হয় ।  এনায়েতপুর গ্রামের বাবু ম-ল জানান, তার কাছ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকার ওষুধ ২ হাজার ৭শ’ টাকা নেওয়া হয়। স্লিপে নিজেরাই কৌশলে ওষুধের লিখে বাড়তি টাকা আদায় করে।

নামমাত্র এসব ফার্মেসি মালিকদের কমিশনে নিয়োগ করা দালালরা রোগী ও স্বজনদের সহায়তার নামে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা লুফে নিচ্ছে। দালালদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যে পুলিশের হাতে আটক হলেও চক্র প্রধানরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা জানান, রোগীদের কাছ থেকে কৌশলে ওষুধের বাড়তি দাম নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ করলে ফার্মেসি মালিক ও দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!