- বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ৮টি গাছ কর্তনের অভিযোগ
- তহশিলদারকে শোকজ, তবে তিনি বলছেন এসি ল্যান্ডের নির্দেশে গাছ কাটা হয়েছে
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী থানাধীন বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিভিন্ন প্রজাতির সরকারি গাছ টেন্ডার ছাড়াই কাটার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
তবে তহশিলদারের দাবি, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড মো. আশাদুল হকের নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
গত শনিবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এসি ল্যান্ড মো. আশাদুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে তহশিলদারকে শোকজ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) তিনি কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে থাকা ৮টি গাছ কাটেন। সরকারি গাছ কাটার অপরাধে কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে জন্য আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ভূমি অফিসের পাশে একটি নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ভবন নির্মাণের জন্য মাঠে থাকা প্রায় ১০টি গাছ কাটার অনুমতি ও মূল্য নির্ধারণের আবেদন করেন তহশিলদার আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু সে সময় দায়িত্বে থাকা সদর ইউএনও মো. খাইরুল ইসলাম আবেদনটি অনুমোদন দেননি।
পরবর্তী সময়ে ১৪ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন এসি ল্যান্ড আশাদুল হক। তিনি এক বৈঠকে তহশিলদারের অনুরোধে গাছ কাটার মৌখিক অনুমতি দেন বলে দাবি তহশিলদারের। এরপর গত বৃহস্পতিবার গাছগুলো কাটা হলে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
তহশিলদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘স্যারের (এসিল্যান্ড) নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। অথচ এখন আমাকে দায়ী করে শোকজ করা হয়েছে। ইউএনও স্যার ও উপজেলা প্রকৌশলী বিষয়টি জানতেন। স্যার নিজেও অফিসে এসে ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছেন।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, তহশিলদার একার পক্ষে টেন্ডার ছাড়া সরকারি গাছ কাটার সাহস পেতে পারে না। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে বলে তারা মনে করছেন। তাদের অভিযোগ, ‘দোষ করেন কর্মকর্তারা, ধরা খায় কর্মচারীরা। পরে নিজেদের বাঁচাতে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেন।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দেশ দিলেই তিনি গাছ কাটবেন, এটা কোনো আইনি ভাষা না। সরকারি গাছ কাটার আগে অনুমতি ও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা আবশ্যক। ভবন নির্মাণের প্রয়োজনে গাছ কাটার দরকার হলে নিয়ম মেনেই করতে হবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এমনটি ঘটে থাকে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা সরকারি সম্পদ এভাবে টেন্ডার ছাড়া বিক্রি বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কর্তন করা গাছগুলোর বাজারমূল্য লক্ষাধিক টাকা বলে জানা গেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন