সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ের হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ সুপার ওভারে রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল মিরপুরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২১৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ঠিক ২১৩ রানই তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অনেক নাটকীয়তার পর ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারে এক রানে জিতে সিরিজে ফিরল উইন্ডিজ। ফলে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের। আগামী ২৩ অক্টোবর একই ভেন্যুতে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
সুপার ওভারে বাংলাদেশের পক্ষে বোলিংয়ের দায়িত্ব পান মোস্তাফিজুর রহমান। তার প্রথম বলে এক রান নেন শাই হোপ। তবে পরের বলেই রাদারফোর্ডের উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। এরপর ব্র্র্যান্ডন কিংস নেমে তৃতীয় বলে নেন ২ রান। চতুর্থ বলে এক রান দেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার। শেষ দুই বলে আরও ৫ রান তুলে সফরকারীরা। সুপার ওভারে জয়ের জন্য ১১ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নামেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। আকিল হোসেনের এক বলে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে জমা হয় ৫ রান। প্রথম বলটি ওয়াইড আর দ্বিতীয় বলটি নো করেন আকিল। এর মধ্যে দৌড়ে ৩ রান নেন সৌম্য। ম্যাচ হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। এরপর এক উইকেট হারিয়ে ৯ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ। সুপার ওভারে এক রানে ম্যাচ জিতে নেয় ক্যারিবীয়রা।
এর আগে ইনিংসের শেষ ৬ বলে জয়ের জন্য ৫ রান প্রয়োজন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তখন সাইফ হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ৪ বলে ২ রান দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন সাইফ। পঞ্চম বলে আকিল হোসেনের উইকেট শিকার করে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে দেন এই তরুণ। কিন্তু শেষ বলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ উইকেটটি তুলে নিতে পারতেন সাইফ। কিন্তু ক্যাচ মিস করলেন নুরুল হাসান সোহান। এ সুযোগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খারি পাইরে ২ রান সংগ্রহ ম্যাচ নিয়ে যান সুপার ওভারে।
জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই ছিল। তবে ২১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। তবে দ্বিতীয় উইকেটে আথানেজ ও কার্টি ৫১ রানের জুটি গড়েন। এই জুটি ভাঙার পর মিডল অর্ডারে হাল ধরেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক শাই হোপ। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ৫৩ রানের অপরাজি থাকেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ হোসেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। নাসুম আহমেদ ও তানভীর ইসলাম দুটি করে উইকেট শিকার করেন। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মিরপুরের চিরাচরিত টার্নিং উইকেটে সংগ্রাম করলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তবে সেখানে কিছুটা সফল হলেন সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে শেষদিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে দলীয় পুঁজি দুইশ পাড় করেন রিশাদ হোসেন। খেলেন দারুণ এক ক্যামিও। তাতে লড়াকু পুঁজি পেয়েছে স্বাগতিকরা। স্পিনারদের স্বর্গে এদিন চার জন স্পিনার নিয়েই মাঠে নামে দুই দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন দুই পেস অলরাউন্ডার। কিন্তু সেখানে পার্টটাইম স্পিনার আলিক আথানেজকে দিয়ে পুরো ১০ ওভার বল করিয়েছেন তারা। পেসারদের এক ওভারও বল করাননি। অবশ্য আথানেজ ছিলেন দুর্দান্ত। পুরো ১০ ওভার বল করে মাত্র ১৪ রানের খরচায় পেয়েছেন ২টি উইকেট। দলের সবচেয়ে কৃপণ বোলারই তিনি। অবশ্য এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই সংগ্রাম করেছে বাংলাদেশ। ওপেনার সাইফ হাসান প্রথম ১৪ বলে কোনো রান পাননি। ১৫তম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে আউট। মূলত ইনিংস যত গড়িয়েছে ব্যাটারদের সংগ্রাম তত বেড়েছে। ১১.৫ ওভারে দলীয় ফিফটি এলেও ২৯.৩ ওভারে আসে দলীয় শতক।
যেখানে স্বভাববিরুদ্ধ ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য সরকার। যার জন্য তাকে বল খেলতে হয়েছে ৮৯টি। এমন ইনিংস তার ক্যারিয়ারেই হয়তো প্রথম। তবে দলের প্রায় সব ব্যাটারই উইকেটে সেট হয়েছিলেন। যদিও কেউই ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। সৌম্যর ইনিংসই সর্বোচ্চ। মিরাজ খেলেছেন অপরাজিত ৩২ রানের ইনিংস। তবে বাংলাদেশের ইনিংসের পূর্ণতা দিয়েছেন রিশাদ। ১৪ বলে খেলেন হার না মানা ৩৯ রানের ক্যামিও। যেখানে ৩টি করে চার ও ছক্কা মারেন তিনি। এ ছাড়া নুরুল হাসান সোহানের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান। গুডাকেশ মোতি ক্যারিবিয়ানদের হয়ে তিনটি উইকেট নিয়েছেন। তবে রান খরচ করতে হয়েছে ৬৫। তিনিই একমাত্র খরুচে বোলার। এ ছাড়া ২টি উইকেট পান আকিল হোসেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন