রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার গাঁওপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার পেশায় একজন মাছের আড়ৎ শ্রমিক। অন্যের মাছ বাজারজাত করেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, তিন দশকেরও বেশি সময় তিনি এ কাজ করছেন। তার ছেলে মো. শাহরিয়ার হোসেন এখন গর্বিত বিসিএস ক্যাডার। মাছের আড়তের শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহরিয়ার ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় এলাকায় আনন্দের জোয়ার বইছে। ৪৩তম বিসিএসে সারা দেশে ২৩২তম স্থান অর্জন করে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি নড়াইল জেলায় সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার সাভারে অবস্থান করছেন তিনি। তার এই অর্জনের পেছনে লুকিয়ে আছে এক সংগ্রামী বাবার অব্যাহত পরিশ্রম ও পরিবারের ত্যাগ।
অভাব-অনটনের মধ্যে বাবা আব্দুস সাত্তার রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অন্যের মাছ বাজারজাতকরণের কাজ করে ছেলেকে গড়ে তুলেছেন। শাহরিয়ার সারা বাংলাদেশে ২৩২তম স্থান অর্জন করে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তার এই অর্জনে গাঁওপাড়াসহ পুরো এলাকায় বইছে আনন্দের বন্যা। শিক্ষক, প্রতিবেশী ও শুভাকাক্সক্ষীরা তার সাফল্যে গর্বিত ও আশাবাদী।
শাহরিয়ারের বাবা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে পুঠিয়ার আমিনুল ইসলাম ম-লের মাছের আড়তে খেটে আমার ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করেছি, যেন ছেলেটা মানুষ হয়। আমি খুব কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি। আজ সে ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে, আমি চাই সে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করুক।’
তার মা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে, আমরা খুব খুশি। সামান্য সামান্য করে টাকা দিয়ে তার পড়ালেখা চালিয়েছি। ছেলেকে পড়াতে গিয়ে প্রতি মাসে ১-২ হাজার টাকা করেও পাঠিয়েছি। অনেক কষ্ট করেছি। আজ সে সফল, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’
এ বিষয়ে গাঁওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রুবাইয়া সুলতানা বলেন, ‘একজন ছাত্র সফলতা অর্জন করলে শিক্ষক সমাজের কী যে আনন্দ হয়, তা বোঝানোর ভাষা থাকে না। শাহরিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে এ কথা শুনে অনেক আনন্দিত হয়েছি, আবেগাপ্লুত হয়েছি। দোয়া করি সে যেন আরও সফলতা অর্জন করে।’ এ বিষয়ে শাহরিয়ারের শিক্ষিকা আঞ্জুমান আরা তিনি বলেন, পরের বাচ্চাদের পড়াশুনা করিয়ে তারা সফলতা অর্জন করলে, শিক্ষক হিসেবে খুবই ভালো লাগে। ছাত্রদের সফলতা আমাদের শিক্ষকতার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। শাহরিয়ারের জন্য অনেক দোয়া রইল। শাহরিয়ারের এই সাফল্যে শুধু পরিবার নয়, পুরো গ্রাম আজ গর্বিত। তার মতো একজন কর্মঠ, মেধাবী ও মানবিক ম্যাজিস্ট্রেট দেশ ও জাতির জন্য এক আশার আলো। দোয়া করি সে যেন আরও অনেক বড় কিছু হয়।
শাহরিয়ার বলেন, ‘এই অর্জন আমার বাবার কঠোর পরিশ্রম ও আমার শিক্ষকদের দোয়ার ফল। আমি চাই দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে।’
শাহরিয়ারের এই সাফল্যে গর্বিত তার শিক্ষক, এলাকাবাসী ও পরিবার। নিজ এলাকাকে সম্মানিত করার পাশাপাশি, তিনি দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এ যেন এক সংগ্রামী বাবার পরিশ্রম আর এক শিক্ষানবিশ সন্তানের অধ্যবসায়ের জয়গাঁথা। একটি সাধারণ পরিবারের অসাধারণ সাফল্যের গল্প এখন পুরো পুঠিয়ার গর্ব। এই অনুপ্রেরণামূলক গল্প প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর পারিবারিক ত্যাগই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন