কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে সারের তীব্র সংকট। চলতি আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। ডিলার পয়েন্টে সার না পেয়ে তারা এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ঘুরছেন হন্যে হয়ে। খোলাবাজারে দ্বিগুণ দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। এতে কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তালজাঙ্গা ইউনিয়নের আড়াইউড়া গ্রামের কৃষক নব কুমার তালুকদার বলেন, ‘ডিলার পয়েন্টে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও সার মিলছে না। খোলাবাজারে একই সার কয়েকগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।’
রাউতি ইউনিয়নের কারংকা গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেনের অভিযোগ, ‘ডিলারের গুদামে সার থাকলেও তা কৃষকদের কাছে বিক্রি না করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
সরকার নির্ধারিত দরে ইউরিয়া প্রতি কেজি ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি ২০ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও খোলা বাজারে ইউরিয়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, টিএসপি ৩৭ টাকায়, ডিএপি ২৮ টাকায় ও এমওপি ২৮ টাকায়।
তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিকাশ রায় জানান, ‘আমাদের কাছে সারের মজুত আগের বছরের তুলনায় বেশি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছেন। চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে।’
তবে কৃষকরা বলছেন, গুদাম ভরা সার থাকলেও বাজারে তা মিলছে না। এতে দুর্বল হচ্ছে আমন ফসল এবং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাড়াইলের মতো কৃষিনির্ভর এলাকায় সারের সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে তা শুধু কৃষক নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সময়মতো সার না পেলে ধান ও সবজির ফলন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে একদিকে কৃষকের লোকসান বাড়বে, অন্যদিকে বাজারে খাদ্যপণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।
কৃষি বিশ্লেষকরা বলছেন, সারের বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। ডিলারদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং, উপজেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স গঠন এবং কৃষকদের সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ চালু করা গেলে সংকট অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন