*** সারা দিন অপেক্ষায় থেকেও মিলছে না কাজ
*** দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কঠিন হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা
ভোরের আলো ফোটার আগেই কাজের খোঁজে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ভিড় জমান দিনমজুরেরা। সারা দিন অপেক্ষায় থেকেও বেশিরভাগ সময় কাজ না পেয়ে তারা খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হন। ফলে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটানো নিয়ে পড়ছেন মারাত্মক সংকটে। একাধিক দিনমজুর জানান, আগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৮০০ টাকা মজুরি পেতেন। এখন সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি কাজ মেলে না। তা ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ায় গ্রামীণ শ্রমজীবীরাও শহরমুখী হচ্ছেন। সুনামগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন দেখা যায় গ্রাম থেকে আসা দিনমজুরদের কাজের অপেক্ষায় বসে থাকতে। কিন্তু কাজের সংকটে তাদের বেশিরভাগকেই নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে এবং বাড়ছে হতাশা।
সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল হামিদ বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, অথচ কাজ পাই না। যে কয়টা টাকা রোজগার করি, তাতে সংসার চলে না। একই ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের জিয়াউর রহমান বলেন, আগে কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকতাম, এখন মেশিনে সব কাজ হয়। ফলে আমরা বেকার হয়ে পড়েছি।
লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মইনুল ইসলাম, মোহাম্মদ হায়াতুল ইসলাম ও হবতপুর গ্রামের জমির উদ্দিন জানান, প্রতিদিন কাজ না পেয়ে তারা চরম কষ্টে দিন কাটান। গৌরারং ইউনিয়নের জগাইরগাঁও গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, আগে প্রায় প্রতিদিনই কাজ পেতাম, এখন বর্ষায় পুরোপুরি বেকার হয়ে যাই। ছয়জনের সংসার নিয়ে মহাসমস্যায় আছি।
সুনামগঞ্জ শহরের হাছননগরের আছিয়া বেগম বলেন, স্বামী অসুস্থ, তাই আমি নিজেই কাজের খোঁজে বের হই। শরীর মানে না, কিন্তু কাজ না করলে খাব কী? নবীনগর এলাকার দিনমজুর বাচ্চু মিয়া বলেন, প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না, অথচ ঘরভাড়া ও বাজার খরচে টান পড়ছে। তাহিরপুর উপজেলার জামালপুর গ্রামের টুনু পাল বলেন, গ্রামে কাজ না পেয়ে শহরে এসে ভাড়া বাসায় থাকি। কখনো কাজ পাই, কখনো পাই না। এভাবেই কষ্টে দিন কাটছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুর ওয়াদুদ, বাহাদুরপুরের রহিম উদ্দিন, ইসলামপুরের তাজ উদ্দিন, গৌরারং গ্রামের জুয়েল মিয়া, টুকেরগাঁওয়ের আজিজুল হক, মোল্লাপাড়ার আজিজুর রহমান, কুরবাননগরের আমবাড়ির জিয়াউর রহমান, ব্রাহ্মণগাঁওয়ের আরজ আলী, আরপিননগরের সালমা বেগম, হাছননগরের শাহজাহান মিয়া, নতুনপাড়ার বিজয় দাস ও বাঁধনপাড়ার আকাশ দাস প্রমুখ।
তাদের সবার অভিন্ন দাবি ‘সরকার যেন দ্রুত গ্রামীণ পর্যায়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। তা না হলে আগামী দিনে আরও বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ কাজের খোঁজে শহরমুখী হবে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য বড় সংকট বয়ে আনবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন