আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে এক অস্বাভাবিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি তৈরির নানা ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হবে’ এই বক্তব্যই প্রমাণ করে নির্বাচন বানচাল করতে একাধিক মহল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য শুধু একটি সতর্কবার্তা নয়, এটি রাষ্ট্রযন্ত্রের সামনে থাকা এক কঠিন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জর প্রতিফলন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আসন্ন নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক পরীক্ষার মুখে।
অতীতে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের আগে-পরে নানা ষড়যন্ত্র, সহিংসতা ও গুজবের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াস হয়েছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন এই অস্থিরতার অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টা যে বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন তা হলো, এআই-নির্মিত ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি। যা অত্যন্ত গুরুতর। এই যুগে অপতথ্য একটি অস্ত্র, যা রাষ্ট্র ও জনগণের আস্থা মুহূর্তেই ভেঙে ফেলতে সক্ষম। তাই সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে এমন সব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগত ও আইনগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকে, সেই লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি প্রশংসনীয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর সম্মিলিত প্রস্তুতি নির্বাচনি নিরাপত্তা জোরদার করবে। কর্মকর্তাদের পদায়নে নিজ জেলা বা আত্মীয়স্বজনের প্রভাবমুক্ত থাকার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শুধু নির্দেশনা নয়, তার কঠোর বাস্তবায়নই হবে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে ও বিদেশে যেসব গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে, তাদের মোকাবিলায় সরকারের উচিত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উভয় প্রস্তুতি নেওয়া। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের নির্বাচনের ভাবমূর্তি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অভ্যন্তরীণভাবে জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণও সমান জরুরি। নির্বাচনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, ভোটের নিয়ম-কানুন জানানো, এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এসব প্রচেষ্টা এখন থেকেই শুরু করতে হবে।
আশার কথা হলো প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক, আমাদের অতিক্রম করতে হবে’। তার এই বক্তব্য জনমনে আশার সঞ্চার যুগিয়েছে। এটা শুধু প্রশাসনের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য প্রেরণার বার্তা।
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। তাই এ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের সব অঙ্গকে একযোগে দায়িত্ব পালন করতে হবে। একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যত প্রকার ষড়যন্ত্রই হোক না কেন তা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
যারা নির্বাচনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, যারা অপতথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, কিংবা বিদেশি স্বার্থে দেশের অস্থিতিশীলতা কামনা করে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। নির্বাচনি গণতন্ত্র কোনো দুর্বলতার স্থান নয়, এটি রাষ্ট্রের দৃঢ়তার প্রতীক।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশ আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে গণতন্ত্র, সুশাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা একসূত্রে গাঁথা। এই সময় প্রয়োজন দূরদর্শী নেতৃত্ব, ঐক্যবদ্ধ প্রশাসন এবং সজাগ নাগরিক সমাজ। ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে রাষ্ট্র যদি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে পারে, তবে সেটিই হবে জাতির প্রতি সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন