ঢাকাই সিনেমার লাস্যময়ী চিত্রনায়িকা পরীমণি সবসময় রঙিন মুডে থাকেন। তার এবারের জন্মদিন একটু অন্যরকম ভাবে কাটিয়েছেন। এই প্রথম জন্মদিনে দেশে ছিলেন না তিনি। জন্মদিনটা মালয়েশিয়ায় উদযাপন করেছেন পরী। টানা ১০ দিন নানা আনন্দঘন মুহূর্ত কাটিয়ে সেখান থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন সুন্দরী এই নায়িকা। ভিনদেশে প্রথম জন্মদিন কাটানোর মুহূর্ত দেশে ফিরেই ভাগ করেছেন ভক্ত-অনুরাগীদের সঙ্গে।
পরীমণির জন্মদিন মানেই একসময় ছিল জমকালো আয়োজনের প্রতীক। বছরের পর বছর পাঁচতারা হোটেলের আলোকছটা, সহকর্মীদের কোলাহল, থিম ধরে রঙিন গাউন, কেক কাটায় ক্যামেরার ফ্ল্যাশÑ সব মিলিয়ে ঢাকাই শোবিজ অঙ্গনের এক অনিবার্য উৎসব হয়ে উঠেছিল তার জন্মদিন। সেই ঝলমলে জন্মদিনগুলো এখন যেন অতীতের গল্প। জন্মদিন পেরিয়ে গেলেও আবারও চেনা ছন্দে ফিরছেন পরী।
আজ বুধবার রাতে কাছের মানুষদের সঙ্গে উদযাপন করবেন বলে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে পরীমণি জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে আয়োজন নিয়ে রহস্যে জিইয়ে রেখেছেন আলোচিত এই নায়িকা। মজার ছলে পরীমণি বলেন, ‘আজ আমার বিয়ে। ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় মিরপুর নোঙ্গর রুফটপে চলে আসবে।’ এরপর একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। গত সোমবার রাতে নোঙ্গর রুফটপ চেকিং দিয়ে ফেসবুকে লিখেন, ‘উত্তরা না নোঙ্গর তো মিরপুর!’ এবারও রহস্যে জিইয়ে রাখলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাছের মানুষদের নিয়ে জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন পরীমণি। সেইসঙ্গে নতুন কাজের খবর দেবেন তিনি। তবে এ নিয়ে আপাতত কিছু বলতে নারাজ এই অভিনেত্রী।
আগামী ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে পরীমণি অভিনীত সিনেমা ‘ডোডোর গল্প’। বেশ আগেই সিনেমাটির শুটিং শেষ করেছেন তিনি। অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজ প্রযোজিত সিনেমাটির কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ, পরিচালনা করেছেন কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা রেজা ঘটক। মাতৃত্বকালীন বিরতির পর এই সিনেমার মাধ্যমেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ সিনেমার মাধ্যমেই দীর্ঘ সময় পর বড় পর্দায় ফিরছেন তিনি। পরী বলেন, ‘এটি আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সিনেমা। এর মাধ্যমে ফেরা হচ্ছে, খুব আনন্দিত আমি।’
পরীমণির জীবনের গল্প একেবারেই সিনেমার মতো। ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর তার জন্ম হয়েছিল সাতক্ষীরায়। তবে তিনি বড় হয়েছেন পিরোজপুরের শঙ্করপাশা গ্রামে। চলচ্চিত্রজগতে তিনি পরীমণি নামে পরিচিত হলেও তার জন্মনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি।
নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে (বাফা) নাচ শিখতে ভর্তি হন পরী। এরপর সুযোগ পান টিভি নাটকে অভিনয়ের। ‘সেকেন্ড ইনিংস’, ‘এক্সক্লুসিভ’, ‘এক্সট্রা ব্যাচেলর’ নামের নাটকে দেখা গেছে তাকে। এরপর ‘নারী ও নবনীতা তোমার জন্য’ নামের একটি নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান।
২০১৫ সালে সিনেমায় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় পরীর। ওই সময় নজরুল ইসলাম খানের পরিচালনায় ‘রানা প্লাজা’ নামের একটি সিনেমাতে অভিনয় করেন পরী। নানা জটিলতায় আজও সিনেমাটি আলোর মুখ দেখেনি। শাহ আলম ম-ল পরিচালিত ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় নাম লেখান পরীমণি। রোমান্টিক চরিত্রে সহজ-সাবলীল অভিনয়ে নজর কাড়েন নতুন এই মুখ। সে সময় একসঙ্গে দুই ডজনের মতো সিনেমায় চুক্তি করে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
পরের বছর ‘রূপবান’-এ গ্রামীণ মাটির মেয়ে হয়ে তিনি জানান দেন গ্ল্যামারের বাইরেও তার ভেতরে আছে এক অন্তরঙ্গ সংবেদনশীল অভিনেত্রী। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’-এ রূপার চরিত্রে পরীমণি ছিলেন একদম অন্য রকম। সীমান্তঘেরা দুই জীবনের ভালোবাসা আর আকাক্সক্ষার ভেতরে তিনি ছিলেন নরম অথচ দৃঢ়। গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত সেই সিনেমায় ‘শুভ্রা’ চরিত্রে তার অভিনয় প্রমাণ দেয় পরীকে জানতে-বুঝতে পারে, এমন একজন অভিজ্ঞ পরিচালকের হাতের পুতুল হলে পরী নিজেকে প্রমাণ দিতে সক্ষম।
‘বিশ্বসুন্দরী’-তে পরীমণি আবারও ভিন্ন ছায়া ছুঁয়েছেন। ‘গুণিন’-এ তার চোখের ভাষা, শরীরের নীরবতাÑ সবই প্রমাণ করেছে তিনি নিজেকে চরিত্রে ঢেলে দিতে জানেন। অন্যদিকে, তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে আরেক ব্যতিক্রম চরিত্র ছিল ‘মা’ সিনেমাতে। সন্তান হারানো এক মায়ের চরিত্রে পরীমণি রূপান্তরিত হন আবেগের প্রতিমূর্তিতে। এই সিনেমাতে গ্ল্যামার নেই, আছে যন্ত্রণা, মাতৃত্ব, সংগ্রাম, যা তার অভিনয় জীবনের এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।
রুপালি পর্দার বাইরে বাস্তবজীবনের এক ফাইটার পরীমণিÑ যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন, আর প্রয়োজনে ভুল স্বীকার করতেও ভয় পান না। আইনি ঝামেলা, মিডিয়ার সমালোচনা, সামাজিক কটাক্ষÑ সব পেরিয়েও তিনি বারবার ফিরে এসেছেন আরও শক্ত হয়ে। যেন আগুনে পুড়ে আরও দীপ্ত হয়েছে তার আলো। ২০২২ সালে ছেলে শাহীম মুহাম্মদ পুণ্যর জন্ম পরীমণির জীবনে এনেছে নতুন আলো। এখন তিনি শুধু তারকা নন, একজন মা। পুণ্যকে ঘিরে তার পৃথিবী এখন ছোট অথচ পরিপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন