ব্যাংক খাতে আমানত বাড়লেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বড় ধাক্কা লেগেছে। এ খাতে মানুষের বিনিয়োগে আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৩৩৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯৬ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিট বিনিয়োগ এসেছিল ৮ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো এখন আমানতকারীদের বাড়তি সুদ দিতে পারছে। এ জন্য মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখছে। আবার সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ সেখানে স্থানান্তর হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগে প্রভাব পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে এক হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের চেয়ে ৫২ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময় বিনিয়োগ হয়েছিল চার হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, সরকার পরিবারের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা সীমা দিয়েছে। আবার সম্প্রতি সময় দেখা যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদ বাড়ছে। এই দুই কারণে বিনিয়োগ কমতে পারে।
সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ সরকারের ঋণ হিসেবে গণ্য হয় এবং তা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার করা হয়। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র মোট বিনিয়োগ স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা।
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দাখিলের শর্ত শিথিল করে সরকার, আগে এই সীমা ছিল পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া গত অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যক্তিপর্যায়ের সব সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা চালু করা হয়। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবের পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা আবার চালু করা হয়। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগসীমা প্রত্যাহার করা হয়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা তিন মাসের পরিবর্তে প্রতি মাসে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি গত জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে একটি সীমা পর্যন্ত সুদের হার বাড়িয়েছে সরকার। এসব সুবিধা বাড়ানোয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে মনে করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রথম তিন মাসে নিট বিনিয়োগ আসার গতিতে সেই প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয় এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৬৯ শতাংশ কম ছিল।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন