রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

পাঁচশ টাকার জন্য টানা পাঁচ ঘণ্টা গান করতাম

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

পাঁচশ টাকার জন্য টানা পাঁচ ঘণ্টা গান করতাম

অদম্য মনোবল আর উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ে পাড়ি জমানো শত কিলোমিটারের পথ। পথে পথে নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নিজের গানে বেঁধেছেন যিনি জীবনের গল্প। দাম্ভিকতার শিকল ভেঙে, স্বীকৃতির অলক্ষ্যে থেকেও জায়গা করে নিয়েছেন শ্রোতাদের হৃদয়ে। তিনি সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জিসান খান শুভ। তার নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় যাত্রা, স্বপ্ন, বাস্তবতা এবং সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরফান হোসাইন রাফি

সংগীত জীবনের শুরু

আমার সংগীত জীবনের শুরুটা হয়েছিল বন্ধুদের উৎসাহ থেকে। ছোটবেলা থেকেই দু-চার লাইনের ছন্দ লিখতাম, ছন্দে ছন্দে কবিতা লিখতাম, আর গুনগুন করে গান গাইতাম। তখন আমি খেলাধুলার সঙ্গে ছিলাম, সেটা প্রায় সবাই জানে। খেলাধুলা করতে মাঠে যাওয়া কিংবা ফেরার সময়, অথবা বন্ধুদের আড্ডায়, এসব দেখে বন্ধুরাই আমাকে উৎসাহ দিয়ে প্রথম গান রেকর্ডিংয়ের জন্য স্টুডিও পর্যন্ত ধরে নিয়ে যায়। সে গানের নাম ছিল ‘চাঁদের ঐ জোছনা’।

গানটি আপনাকে কখনোই গাইতে শোনা যায় না। ব্যক্তিগত কোনো কারণ আছে কি?

থাকে না, আমরা তো অনেক কিছু দিয়েই ভাত খেতে চাই না। এটার নির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকা জরুরি নয়। গানটি আমি ব্যক্তিগত কারণেই গাইতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না, তাই গাই না।

আপনার বাবা বাংলাদেশ বেতারের শিল্পী ছিলেন। তার প্রভাব আপনার সংগীতজীবনে কতটা পড়েছে বলে মনে হয়?

আমার গান লেখা ও সুর করার ক্ষেত্রে আব্বুর যথেষ্ট প্রভাব আছে। তিনি যেহেতু বেতারের শিল্পী ছিলেন, তাই তার অনেক শিক্ষার্থী আছে, ভায়োলিন ও গানে দুদিকেই। তবে আমাকে যখন তিনি গানের তালিম দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তখন আমি স্পোর্টসের প্রতি ভীষণ আসক্ত ছিলাম। আমার ব্যাচমেটদের অনেকেই এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলসহ ভালো পর্যায়ে আছে। আমারও ওদিকেই যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। সব সময় চাইতাম স্পোর্টসেই আমার ক্যারিয়ার হোক। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর কোনো এক অজানা কারণে সংগীতের প্রতি টানটা বেড়ে যায়। সম্ভবত এটা জেনেটিক প্রভাব, যা আমি পরবর্তী সময়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করি।

নেত্রকোনা থেকে ঢাকা

তখন ২০১৬ সাল। স্পোর্টসের স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে গানের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি। আবরণ পাল্টে গানকে ঘিরেই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সেই সময় তাসরিফ ভাইয়ের সঙ্গে মিলে ‘কুঁড়েঘর’ ব্যান্ড গঠনের চেষ্টা করি। তাসরিফ ভাই আগে থেকেই ঢাকায় থাকতেন, আর আমি থাকতাম নেত্রকোনায়। আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হতো নেত্রকোনাতেই। এভাবে চলতে চলতে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা একটি ব্যান্ড করব। এরপর এই ব্যান্ডটিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই আমাকে ঢাকায় আসতে হয়। সেখানে ‘আমার কাছে তুমি মানে’, ‘তুমি কার পোষা পাখি’ এবং ‘ব্যাচেলার’-এর মতো গানগুলো একের পর এক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

স্বপ্ন এবং বাস্তবতা

স্বপ্নের তাগিদে ঢাকায় আসা, এরপর শুরু হয় সংগীত জীবনের নানা সংগ্রাম। উল্লেখ করতেই হয়, আর্থিক সংকট আমাকে গভীরভাবে আঁকড়ে ধরেছিল। প্র্যাকটিস করার মতো নিজের একটি গিটারও ছিল না। এক বন্ধুর বাজানোর ফাঁকে ফাঁকে, কিংবা সে যখন ক্লান্ত হয়ে গিটারটা রেখে অন্য কাজে যেত, তখন আমি তার কাছ থেকে গিটারটা চেয়ে আনতাম। ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে দেখে নিজের হাতের উপর অমানবিক অত্যাচার করতাম। এ ছাড়া ধানমন্ডির কিছু ক্যাফেতে মাত্র পাঁচশ টাকার জন্য টানা পাঁচ ঘণ্টা গান করতাম। সেখানে কাটা চামচের পারকাশনের আওয়াজের সঙ্গে গাইতাম; যারা ডিনার করতে আসত, তারা ছোট চিরকুটে গান রিকোয়েস্ট লিখে দিত। আমি তাদের পছন্দের গানগুলো একে একে গাইতাম। এই দিনগুলো এখনো আমাকে ভাবায়, আমি কখনোই সেই সময়গুলো ভুলব না। আজকের যে সামান্য প্রাপ্তি, তা হয়তো সেই দিনেরই ফসল।

আর্থিক সংকট গানের ক্যারিয়ারকে কতটা বাধাগ্রস্ত করে?

আমি তো মধ্যবিত্ত, বলা যায় নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়ার সুবাদে এই ইন্ডাস্ট্রিতে গান করে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন, সেটা সবাই জানে। তবুও প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়, নিচ্ছি।

ব্যান্ড থেকে একক ক্যারিয়ার

আমার শুরুটাই একক গান দিয়ে হয়েছে। আমি আসলে গানটাই করতে চেয়েছি। যেসব গান দেখতাম ব্যান্ড কম্পোজিশনে মানাবে না, সেসব গান আমি লিখে রাখতাম। পরে একসময় সেই গানগুলোই অফিসিয়ালি গাওয়ার চেষ্টা করেছি। যেখান থেকে ‘তোর মনের পিঞ্জিরায়’ ‘ভুলিনি তোমায়’ ‘মেঘ’ ‘আহা আমি’ ‘ঘুণপোকা’ ‘এক সুন্দরী মাইয়া’ ’ঝরে যাওয়া পাতার মতন’ ‘নাইওর’ ‘বিষের ছুরি’ এবং ‘স্কুলজীবন’-এর মতো কিছু গান মানুষের হৃদয়ে সামান্য একটু জায়গা পেয়েছে।

‘স্কুলজীবন’ গান লেখার অন্তরালটা জানতে চাই।

এই গানটি আমি আমার স্কুল জীবনের শেষ দিন, অর্থাৎ বিদায় অনুষ্ঠানের দিন লিখেছিলাম। আমাদের জীবন স্যার ছিলেন, যিনি আমাদের রুডভাবে আদর করতেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘অনেক জ্বালিয়েছিস তোরা, আর আসতে পারবি না স্কুলে। আজকে তোদের শেষ দিন। কাল থেকে বুঝবি, স্কুলটা আসলে কী!’ এই কথাটা শোনার পর আমার খুব খারাপ লেগেছিল। মন খারাপ নিয়ে স্কুলের বারান্দা, ক্লাসরুম, মাঠ আর ক্যান্টিনে হাঁটছিলাম। মনে হচ্ছিল, প্রতিটা জায়গাই আমাকে থামিয়ে কিছু বলছে। সেই মুহূর্তের অনুভূতিগুলো মনের ক্যানভাসে আঁকলাম, আর সেই ছবিগুলোই আজ ‘স্কুলজীবন’ গান হয়ে উঠেছে।

সংক্ষিপ্ত হিসাব কষলে দেখা যায়, প্রায় অর্ধ সহস্র মানুষের কাছে পৌঁছেছে আপনার গানগুলো। তবুও কোথায় যেন একটু প্রতিবন্ধকতা থেকে গেছে, এর কারণ কী হতে পারে?

এত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের এই জায়গাটুকু তৈরি হওয়াটাই কল্পনার চেয়েও সুন্দর। তবে যদি প্রতিবন্ধকতার কথা বলি, তাহলে সেটা মূলত পরিবেশগত কারণেই। আমি যেহেতু বাংলাদেশে গান করছি, এখানে গানের বাইরেও অনেক চেইন অব কমান্ড বা মেইনটেইনের ব্যাপার-স্যাপার আছে, আমি হয়তো সেই জায়গাগুলোতে খুব পারদর্শী নই। সেই কারণেই কখনো কখনো না চাইলেও অগোচরে থাকতে হয়, নিজেকে গোপন রাখতে হয়।

এক যুগের সংগীত ক্যারিয়ারে এখনো আক্ষেপ কী বা কতটুকু?

এটা আক্ষেপের জায়গা থেকে বলছি না মন্তব্য করছি আমি আসলে জানি না। তবে ইন্ডাস্ট্রির কাছে আমার একটাই চাওয়া থাকবে, তারা যেন সব ধরনের বৈষম্য দূরে রাখে। কে কোথা থেকে এসেছে বা কীভাবে এসেছে সেটা বিবেচনা না করে, কে কী করছে বা ইন্ডাস্ট্রিকে কতটুকু দিচ্ছে, সেটা দেখুক। আমি চাই, সেই অবদানের মূল্যায়ন হোক। যেসব মানুষ সত্যিই ভালো কাজ করছেন, ভালো মিউজিশিয়ান, ভালো সুরকার তারা যেন জমকালো জমায়েতে পাশে দাঁড়ানোর, বসার কিংবা স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ পান। আমি অনেক প্রতিভাবান মানুষকে দেখেছি, যাদের অসাধারণ কাজ আছে, অথচ তারা কখনো কোনো অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম বা বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মানটুকুও পায়নি।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উপমহাদেশের শীর্ষ অডিও ভিজ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম টি-সিরিজে গান করার অনুভূতি কেমন?

এটা অপ্রত্যাশিত ছিল, হুট করেই হয়ে গেছে। আমি সব সময় বলি, প্রাপ্তি সব সময়েই আনন্দের। আর দেশের বাইরে উপমহাদেশের শীর্ষ অডিও ভিজ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে কাজ করা অবশ্যই আরও বেশি আনন্দের। এসব কাজে আমি ভীষণ উৎসাহিত হই।

আপনার বহুল জনপ্রিয় গান ‘ভুলিনি তোমায়’ প্রকাশ পেয়েছে হিন্দিতে, কেমন সাড়া পাচ্ছেন এবং হিন্দি গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

গান করতে চাই, তবে হিন্দি ভাষায় গান প্রকাশ করার প্রস্তুতি ছিল না। এটা আমাদের শ্রদ্ধেয় বস, ধ্রুব গুহ দাদা যখন শুনলেন ‘ভুলিনি তোমায়’-এর একটা হিন্দি ভার্সন আছে তখন তিনি গানটি প্রকাশ করতে উৎসাহ দেন এবং দ্রুত গানটি করার কথা বলেন। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি হবে এটা ভাবিনি। অনেকটা মিরাক্কেল হয়ে গেছে। শ্রোতা-দর্শকরাও ভালো সাড়া দিচ্ছে।

‘ফানুশ ব্যান্ড’ এবং একক ক্যারিয়ার থেকে কখনো নির্দিষ্ট কোনো জনরার দিকে ধাবিত হবেন কি-না?

হতেই পারে, মানুষের জীবন তো অনেক বিচিত্র তাই এটা হবে না বলা যায় না। তবে না হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, জীবন কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় বলা যায় না।

গানে কাউকে আইডল মানেন কি?

হ্যাঁ, হ্যাঁ। জুনায়েদ ইভান ভাইকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। ব্যক্তি, লেখক বা গায়কÑ সব দিক থেকেই আমি তার মাধ্যমে প্রভাবিত হই। গান আসলে মানুষের জন্য গাইতে হয়, এই ব্যাপারটা আমি ওনার কাছ থেকেই শিখেছি। তার গান এবং ব্যক্তিজীবন আমার জীবনে অনেকটা প্রভাব ফেলেছে। কতটা প্রভাব ফেলেছে, সেটা বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়, বললে মনে হতে পারে বানিয়ে বলছি। কিন্তু আসলে কতটা প্রভাব ফেলেছে, সেটা একমাত্র আমিই জানি।

নিজেকে নিয়ে এখন স্বপ্ন কী দেখছেন?

আমি অনেক বেশি বাংলা গান করতে চাই। ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক দিতে চাই। যদি সম্ভব হয়, সব শিল্পীর সঙ্গে গান করতে চাই।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!