আজকের দ্রুতগতির ও ব্যস্তজীবনে মানুষ দিন দিন আরও ক্লান্ত এবং মানসিকভাবে চাপে ভুগছে। অফিস, ব্যবসা, পড়াশোনাÑ সব মিলিয়ে জীবনের ব্যস্ততা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে একটু বিশ্রাম বা মানসিক প্রশান্তির সময় বের করাই যেন কঠিন। কিন্তু মানুষ স্বভাবে ভ্রমণপ্রেমী। নতুন জায়গা দেখা, প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া, প্রিয়জনের সঙ্গে কিছু স্মরণীয় সময় কাটানো এই চাওয়াটা চিরন্তন। কিন্ত বাস্তবে ভ্রমণ মানে শুধু আনন্দ নয়, অনেক প্রস্তুতির ব্যাপারও আছে। টিকিট বুকিং, হোটেল খোঁজা, খাবারের ব্যবস্থা, ভিসা প্রসেসিং এসব ঝামেলা অনেকের ভ্রমণের আগ্রহই নষ্ট করে দেয়। ঠিক এই জায়গাতেই জন্ম নিয়েছে এক নতুন সম্ভাবনাময় ব্যবসা ট্রাভেল এজেন্সি। বিডি বেস্ট ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাদি আব্দুল্লাহর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মিনহাজুর রহমান নয়ন
এক জায়গায় সব ভ্রমণসেবা
বর্তমানে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুধু টিকিট বিক্রি বা হোটেল বুকিংয়ে সীমাবদ্ধ নেই। আধুনিক ট্রাভেল কোম্পানিগুলো এখন ওয়ান-স্টপ সলিউশন প্রদান করে যেখানে একজন গ্রাহক এক জায়গা থেকেই বিমান টিকিট, ভিসা প্রসেসিং, হোটেল বুকিং, গাইড সার্ভিস, খাবার ব্যবস্থা, এমনকি ট্যুর ফটোগ্রাফার পর্যন্ত পেয়ে যান। এর ফলে ভ্রমণ হয় ঝামেলাহীন ও আনন্দময়। পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা অফিস ট্যুর সবকিছুই এখন এজেন্সির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করা যায়।
ট্রাভেল এজেন্সির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশে ভ্রমণ সংস্কৃতি গত এক দশকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে মানুষ বছরে একবার ঘুরতে যেত, এখন অনেকেই মাসে একবার বা ছুটির সুযোগে ঘুরে আসেন। তরুণ প্রজন্ম এখন শুধু দেশ নয়, বিদেশ ভ্রমণেও আগ্রহী। এই পরিবর্তিত প্রবণতাই ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দেশীয় পর্যটন যেমনÑ কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন বা সিলেট এগুলোর পাশাপাশি এখন এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাই, সৌদি আরব, নেপাল, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশে সাশ্রয়ী প্যাকেজ দিচ্ছে।
উদ্যোক্তা হিসেবে সম্ভাবনা
এই খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা অর্জন সম্ভব যদি থাকে দক্ষতা, সততা ও সৃজনশীল চিন্তা। কারণ এই ব্যবসা কেবল সেবা বিক্রির নয় এটি মানুষের বিশ্বাস ও স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত একটি পেশা। এই পেশায় আসার জন্য একজন সফল ট্রাভেল উদ্যোক্তার জানা উচিত তা হলো-
ভিসা ও টিকিটিং প্রক্রিয়ার পূর্ণ ধারণা, হোটেল ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, ট্যুর প্ল্যানিং ও গ্রাহক ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, অনলাইন প্রোমোশন ও ডিজিটাল মার্কেটিং টেকনিক, যত বেশি দক্ষতা ও বিশ্বাস অর্জন করা যায়, তত দ্রুত ব্যবসার প্রসার ঘটে।
ট্রাভেল এজেন্সির সামাজিক ভূমিকা
ট্রাভেল এজেন্সি কেবল ব্যবসা নয় এটি সমাজে এক ধরনের মানবিক অবদান রাখে। যারা আগে ভ্রমণ করতে সাহস পেতেন না, তাদের জন্য নিরাপদ ও পরিকল্পিত ভ্রমণের ব্যবস্থা করে এই খাত। একটি ভালো ট্রাভেল কোম্পানি পর্যটনশিল্পে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করে। ট্যুর গাইড, ড্রাইভার, হোটেল কর্মচারী, রেস্টুরেন্ট সার্ভিসÑ সব মিলিয়ে একটি ট্যুর পরিচালনায় অসংখ্য মানুষ যুক্ত থাকে। ফলে এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পর্যটন খাতের উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখে।
ভ্রমণের আনন্দই আসল সাফল্য
একজন ট্রাভেল উদ্যোক্তার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হচ্ছে গ্রাহকের হাসি। যখন কেউ ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে বলে, আমাদের যাত্রা ছিল অসাধারণ!, তখন সেই তৃপ্তিই আসল সফলতা। আমরা, বিডি বেস্ট ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস, বিশ্বাস করি ভ্রমণ কেবল বিনোদন নয়, এটি জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর এক শক্তিশালী মাধ্যম। মানুষকে নতুন শহর দেখানো, নতুন সংস্কৃতি চিনতে সাহায্য করা এবং জীবনে একটু প্রশান্তি ফিরিয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। মো. সাদি আব্দুল্লাহ জানান, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা হলো এমন এক পেশা, যেখানে অর্থের পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতাও অর্জিত হয়। দক্ষতা, সততা, সেবা মনোভাব ও স্বপ্ন দেখার সাহসÑ এই চারটি গুণ যদি একজন উদ্যোক্তার থাকে, তাহলে তিনি শুধু সফল ব্যবসায়ী নন, মানুষের জীবনের আনন্দযাত্রার অংশীদারও হবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন