উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) মারাত্মক শিক্ষক সংকটে ভুগছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের অভাব রয়েছে ১৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে পারছে না। এই সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছে। তবে সেখানে ১৮২টি পদের জন্য মাত্র ৬টি পদ অনুমোদন করা হয়েছে।
অনুমোদন পওয়া বিভাগগুলো হলোÑ অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ভূগোল ও পরিবেশ এবং গণিত বিভাগে একজন করে শিক্ষক নিয়োগের পদ অনুমোদন দিয়েছে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক সংকটে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২০৪ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩৯ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। অথচ ইউজিসির শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানদ- অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে একজন শিক্ষককেই গড়ে ৮ থেকে ১০টি কোর্স নিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষার চাপে গবেষণা কার্যক্রমে যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগে ২০৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ২৮ শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। এ ছাড়া আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি ৩ জন ও যৌন হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার আছেন ১ জন। বাকি ১৭২ শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান।
শিক্ষক সংকটের প্রভাব পড়ছে একাডেমিক কার্যক্রমে। অনেক বিভাগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাস ও পরীক্ষা শেষ করা যাচ্ছে না। স্নাতকোত্তরে বছরে ১২ থেকে ১৪টি কোর্স থাকলেও স্নাতক পর্যায়ে ৪ বছরে পড়ানো হয় অন্তত ৪৮ থেকে ৫৬টি কোর্স। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এক শিক্ষককে নিতে হচ্ছে ৯ থেকে ১০টি কোর্স। কিছু কিছু বিভাগে তারও বেশি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই দাবি, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া বেরোবির একাডেমিক পরিবেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। তারা দ্রুত অতিরিক্ত পদ অনুমোদন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষক জানান, শিক্ষক সংকটের জন্য প্রধানত একাডেমিক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকদের যেমন ব্যক্তিগত গবেষণার জায়গা থাকে, নিজেদের পড়াশোনার জায়গা থাকে, সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সেশন জটের বিষয়টা উপাচার্যের নেতৃত্বে এবং আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কমিয়ে এনেছি, কিন্তু গবেষণা ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা এখনো রয়েই গেছে।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষকরা ভালো মানের গবেষণা করতে পারছেন না। ডিগ্রি অর্জনের জন্য তারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের উচ্চাকাক্সক্ষাও পূরণ হচ্ছে না। ১৮২টি পদের জন্য মাত্র ৬টি পদ অনুমোদন হওয়া আমাদের জন্য খুবই দুঃখের বিষয়।
এ ব্যাপার যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, ১৮২টি পদের বিপরীতে মাত্র ৬টি পদ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যেটা আমাদের জন্য খুবই হতাশার। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাকে বলা হয়েছে, আমরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পেয়েছি। অনেক নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পদ তেমন পদ পায়নি। আমি আশা করি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তারা বিবেচনায় নিবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন