দুপুরে সূর্যেরর আলো যখন গাছের পাতায় নেচে বেড়াচ্ছিল, তখনই নওগাঁর বদলগাছীর আকাশে বেজে উঠল এক মায়াবী সুর। টাপুর টুপুর করে ঘোড়ার খুরের শব্দ, সঙ্গে ঝংকারে মিশে যাওয়া ঘণ্টাধ্বনি। যেন সময় থেমে গেছে এক গ্রামীণ রূপকথার পাতায়। সেই স্বপ্নের ছন্দে এগিয়ে আসে এক রাজকীয় বরযাত্রা। গ্রামে এমন দৃশ্য এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে এ দৃশ্য এখন বিরল।
গতকাল শনিবার পুরোনো সেই রীতিতে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে বিয়ে সেরেছেন এক তরুণ। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে কনের বাড়িতে গেছেন উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক আফতাব হোসেনের ছেলে প্রকৌশলী আসিফ হোসেন।
ঘোড়ার গাড়ির চারপাশে সাজানো রঙিন ফিতা, ঝলমলে গাঁদা ফুল, আর গ্রামের মানুষদের মুখে একরাশ হাসি। উপজেলার পয়নারী গ্রামের দুপুরটা যেন পরিণত হলো এক উৎসবের দিনে। ঢোলের তাল, ফুলের গন্ধ, হাসি আনন্দ মিলিয়ে পয়নারী গ্রামে ফিরে এসেছিল হারিয়ে যাওয়া উৎসবের আমেজ।
জানা গেছে, উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক আফতাব হোসেনের ছেলে প্রকৌশলী আসিফ হোসেনের বিয়ে হয় একই উপজেলার পয়নারী গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের মেয়ে মুসফিকা আশরাফির সঙ্গে। আসিফ পেশায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডানা গ্রুপে চাকরিজীবী। আধুনিক সময়েও তিনি বেছে নিয়েছেন অতীতের হারিয়ে যাওয়া বাহন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়া।
ঘোড়ার গাড়ি ছাড়াও ১২টি মাইক্রোবাস ও ৫০টিরও বেশি মোটরসাইকেল আর প্রায় তিন শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে রওনা হয় বরযাত্রা। গ্রামের প্রতিটি মোড়ে তখন মানুষের ঢল, কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে নবদম্পতিকে।
বর আসিফ বলেন, শখের বসেই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার পরিকল্পনা করি। বাবা-মা ও ছোট বোন সবাই উৎসাহ দিয়েছে। অনেক খোঁজার পর অবশেষে মহাদেবপুর উপজেলা থেকে গাড়িটি পাই। এটা আমার জীবনের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতাÑ এককথায় দারুণ।
কনে মুসফিকা হাসতে হাসতে বলেন, এমন আয়োজনের কথা ভাবিনি। এখন তো সবই যান্ত্রচালিত মোটরগাড়ি আর আলোকসজ্জায় ভরা বিয়ে। কিন্তু ঘোড়ার গাড়িতে বিয়েÑ এটা তো একেবারে সিনেমার মতো। আমি সত্যিই অবাক ও আনন্দিত।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আবু সাঈদ রোমেন রিপু বলেন, বর আমার মামাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই ওর রাজকীয় বিয়ের স্বপ্ন ছিল। আজ তা পূরণ হতে দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ। গ্রামের মানুষও দারুণ উপভোগ করছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন