কোচিংয়ে গৌরবময় পথ চলায় এক হাজার ম্যাচের মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছেন ৫৪ বছর বয়সি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা। তার হাজারতম ম্যাচে লিভারপুলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। গত বেশ কিছু মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়েছে ম্যানসিটির কোচ গুয়ার্দিওলাকে। কেননা তাদের সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে এই ক্লাবের কাছেই। এবার নিজের কোচিং ক্যারিয়ারের এক হাজারতম ম্যাচে সেই দলকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে খুশি গুয়ার্দিওলা। এত বড় মাইলফলকের ম্যাচে কঠিনতম প্রতিপক্ষকেই সামনে চান তিনি। এই ইতিহাসের ঠিকানায় গুয়ার্দিওলা পা রাখবেন আজ রোববার। প্রিমিয়ার লিগ ঘরের মাঠে ম্যানসিটি লড়বে লিভারপুলের সঙ্গে। গুয়ার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ারের হাজারতম ম্যাচ হবে এটি। ইংল্যান্ডে কাজ করা কোচদের মধ্যে ৩৮ জন এখনো পর্যন্ত স্পর্শ করেছেন এই মাইলফলক।
সেই তালিকায় স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের মতো কিংবদন্তি, আর্সেন ভেঙ্গারের মতো নাম আছেন। মাইলফলক ম্যাচের আগে লিগ ম্যানেজার্স অ্যাসোসিয়েশনের হল অব ফেম-এ জায়গা দেওয়া হয় তাকে। সেই অনুষ্ঠানেই ৫৪ বছর বয়সি কোচ বললেন, লিভারপুলকে এই ম্যাচে পেয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। গুয়ার্দিওলা বলেন, ‘এই দেশে লিভারপুলই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সত্য বলতে, এর চেয়ে ভালো আর হতে পারত না (এই ম্যাচে লিভারপুলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া)। আমার মনে হয়, আমরা লিভারপুলকে আরও ভালো হয়ে উঠতে সহায়তা করেছি, তারাও সহায়তা করেছে আমাদের পরের ধাপে যেতে। এটা নিশ্চিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্য একটি প্রতিপক্ষ বেছে নিতে বললে, আমি অবশ্যই সেরা দলকেই বেছে নিতাম। লিভারপুল, বিশেষ করে ইয়ুর্গেনের (ক্লপ) সময়ে ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। সব সময়ই অনুভব করেছি, পরস্পরকে কতটা শ্রদ্ধা করেছি আমরা।’
ক্লপ কোচের দায়িত্বে থাকার সময় বারবারই সিটির পরীক্ষা নিয়েছে লিভারপুল। বিশেষ করে ২০১৮-১৯ মৌসুম ও ২০১১-২২ মৌসুমে দারুণ জমেছিল দুই দলের লিগ শিরোপার লড়াই। দুবারই অবশ্য গুয়ার্দিওলার দল সফল হয়েছে। তবে লিগে আধিপত্য দেখালেও মুখোমুখি লড়াইয়ে লিভারপুলের সঙ্গে পেরে ওঠেননি গুয়ার্দিওলা। তার কোচিংয়ে লিভারপুলের সঙ্গে ২৪ ম্যাচর ৭টি জিতেছে সিটি, হেরেছে ১০টি। গত মৌসুমে আর্না স্লটের দলের কাছে হেরেছে তারা দুই ম্যাচেই। ইংল্যান্ডের আগে তিনি কোচিং করিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনার মতো শীর্ষ দুই ক্লাবে। বার্সেলোনার ‘বি’ দল হয়ে তার কোচিংয়ের পথচলা শুরু ২০০৭ সালে। এই দেড় যুগে পেছন ফিরে তাকিয়ে ৫৪ বছর বয়সী কোচ আপ্লুত। গুয়ার্দিওলা বলেন, ‘এই পথচলা, এই অভিজ্ঞতা অবিশ্বাস্য। সংখ্যাগুলো তো অতিমানবীয়। এমন কিছু অর্জন করা কঠিন এবং যদি নতুন করে আবার শুরু করতাম, তাহলে অবশ্যই এখানে পৌঁছতে পারতাম না। অনেক পরিশ্রম, অনেক নিবেদন, তাড়না, ভালোবাসা মিশে ছিল এবং এখানে কেউ আমাকে হারাতে পারবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই খেলাটাকে আমি ভালোবাসি। প্রতিপক্ষকে আমরা কী করতে পারি, সেসব রহস্যের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ আমি ভালোবাসি। আশা করি, সোমবারও আমরা তা পারব।’ তিন দেশে ১২টি লিগ শিরোপা, তিনটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিসহ তার সাফল্যের শেষ নেই।
৯৯৯ ম্যাচের ৭১৫টিতে তিনি জিতেছেন। অসংখ্য রেকর্ড, অর্জন তার সঙ্গী। অনেক অনন্য কীর্তি আর প্রথমের জন্ম হয়েছে তার হাত ধরে। সর্বকালের সেরাদের একজন তো বটেই, অনেকের কাছে তিনিই সর্বকালের সেরা। গুয়ার্দিওলা বলেন, ‘তারা পুরোপুরি ঠিক।’ সেরার প্রসঙ্গে শুরুতে এভাবেই মজা করলেন গুয়ার্দিওলা। তবে বরাবরই তিনি বলেছেন, সেরা কখনো হতে চাননি বা এসব নিয়ে তার ভাবনা নেই। এবারও তার কণ্ঠে সেই একই কথা। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে প্রতিটি ম্যানেজারেরই প্রভাব ছিল নিজের মতো করে। আমি বলতে পারি যে, আমিও এটির অংশ, সংখ্যাগুলোই তা বলছে। সাফল্যও পেয়েছি এবং আমার দলকে খেলতে দেখা ছিল দারুণ। তবে কখনোই এমন ভাবা শুরু করিনি যে, আমাকে সবার সেরা হতে হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন