রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. নূর হামজা পিয়াস

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা পোশাক খাতের প্রধান অন্তরায়

মো. নূর হামজা পিয়াস

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা পোশাক খাতের প্রধান অন্তরায়

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ভরকেন্দ্র যে তৈরি পোশাক খাত এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। দেশের মোট রপ্তানির প্রায় আশি শতাংশ আসে এই এক খাত থেকে। আর এতে সরাসরি যুক্ত প্রায় চল্লিশ লাখ শ্রমিক যাদের অধিকাংশই নারী। এই বিশাল শিল্প শুধু রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতে স্থায়ী আয়ের ক্ষেত্র তৈরি করে কোটি মানুষের জীবনযাত্রাকে স্থিতিশীল রাখে। কিন্তু সম্প্রতি একের পর এক ধাক্কায় এই খাত যেন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। রপ্তানি কমছে, নতুন অর্ডার আসার হার কমে গেছে, বাতিল হচ্ছে পূর্বের অর্ডারও। অনেক কারখানা উৎপাদন সংকোচন করছে, অনেকটি আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর এই ধস নামা পরিস্থিতির ছায়া শুধু শিল্পেই নয়, বরং পুরো জাতীয় অর্থনীতিতে অস্বস্তির ঢেউ তুলছে।

সংকটের প্রথম বড় আঘাত এসেছে বৈশ্বিক বাজারের অনিশ্চয়তা থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার নীতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বড় পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কবাধা বাড়ায় চীন ইউরোপীয় বাজারে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে, আর তার সরাসরি চাপ পড়ছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত বাজারে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এখন আরও কম দামে পণ্য চাইছেন, অথচ উৎপাদন খরচ বাড়ছে শ্রমমূল্য, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম ও কাঁচামালের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা, যা অনেক ক্রেতাকে অর্ডার কমিয়ে আনতে বাধ্য করেছে। এই দ্বিমুখী চাপ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে আরও দুর্বল অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে।

গত তিন মাস ধরে পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে যেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল তিনশ ছিয়ানব্বই কোটি ডলার, সেখানে অক্টোবরে তা নেমে এসেছে তিনশ দুই কোটি ডলারে। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় আট শতাংশ পতন যা এই খাতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় ধাক্কা। পরিসংখ্যান বলছে, এ প্রবণতা যদি আগামী ছয় মাস অব্যাহত থাকে, তাহলে পুরো অর্থবছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, রপ্তানির এই পতন ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বাণিজ্য ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

সংকটের আরও গভীরে আছে অবকাঠামোগত ত্রুটি। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে শতকোটি টাকার কাঁচামাল, পোশাকপণ্য এবং রপ্তানির চালান পুড়ে গেছে। এতে প্রায় আড়াইশ কারখানার অর্ডার ঝুঁকির মুখে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের মাঝে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববাজারে সময়মতো সরবরাহই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ব্যাঘাত বাংলাদেশের সরবরাহব্যবস্থার প্রতি সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিমানবন্দরের সুরক্ষা, কার্গো ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ অবকাঠামোর এমন দুর্বলতা দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থাকলেও এই অগ্নিকা- দেখিয়ে দিয়েছে, ব্যর্থতার দায় এখন অনেক বড়।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অস্থিরতা এখন তৈরি পোশাকশিল্পের প্রধান অন্তরায়। বিভিন্ন ব্যাংক রপ্তানিকারকদের এলসি খুলতে পারছে না, ডলারের সংকট এতটাই তীব্র যে, কাঁচামাল আমদানিতে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার টাকা আটকে যাচ্ছে এবং কিছু ব্যাংক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এক্সিম ব্যাংক ও এসআইবিএলসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকটে টালমাটাল। ব্যাংকিং খাতের এই দুরবস্থা মূলত গত এক দশকে গঠিত লুটপাটনির্ভর দুর্বল শাসনব্যবস্থার ফল। যার প্রতিক্রিয়া এখন বুমেরাং হয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পে আঘাত হানছে।

ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতি উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়েছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আনতে দেরি হচ্ছে, আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দামও বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ এখন দুই দিক থেকেই বাড়ছে। একইসঙ্গে ব্যাংকে সুদহার বাড়ায় মালিকদের ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে অনেক উদ্যোক্তা উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছেন কিংবা সম্পূর্ণ কারখানা বন্ধ করছেন। এসব মিলেই সক্ষমতা হ্রাসের যে চক্র তৈরি হয়েছে, তা পুরো শিল্পের কর্মশক্তিকে দুর্বল করছে।

গত এক বছরে অন্তত দুইশ আটান্নটি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ সময় কর্মহীন হয়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। যদিও একই সময়ে নতুন একশ ছেষট্টি কারখানা চালু হয়েছে, কিন্তু সামগ্রিক উৎপাদন ক্ষমতা এখনো আগের অবস্থায় ফেরেনি। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি মালিকরা বাড়তি ব্যয়, মজুরি বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতার কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। শ্রমিকেরা চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ ঋণের বোঝা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক চাপও বাড়াচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের পক্ষ থেকে পরিবেশগত, সামাজিক ও শাসনব্যবস্থা (ঊঝএ)সংক্রান্ত মানদ- মেনে চলার চাপ বর্তমানে শিল্প খাতে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ক্রেতারা এখন আরও বেশি সবুজ কারখানা (খঊঊউ সার্টিফায়েড), শূন্য নির্গমন সনদ এবং নৈতিক শ্রম অনুশীলন দাবি করছেন। যদিও বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে সর্বোচ্চসংখ্যক সবুজ কারখানার অধিকারী, কিন্তু এই কমপ্লায়েন্স বজায় রাখার খরচ ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর (ঝগঊং) জন্য অত্যন্ত বেশি। ক্রেতারা দাম কমালেও এই কমপ্লায়েন্স খরচ কমাতে পারে না। ফলে মুনাফার মার্জিন কমে যাওয়ায় অনেক ঝগঊ হয় বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, নয়তো মানদ- রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারি নীতিগত সমর্থন বা অর্থায়নের অভাব এই শিল্পকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় দুর্বল করে তুলছে।

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নারীর কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। লাখ লাখ নারী শ্রমিকের আয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তাদের পরিবার, সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাবারের নিশ্চয়তা। কারখানা বন্ধ হওয়া বা উৎপাদন সংকোচনের কারণে যেসব নারী চাকরি হারাচ্ছেন, তাদের জীবনে ফিরে আসছে অনিশ্চয়তা। নারীশক্তির অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে এই ধস ভবিষ্যতে সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও বিপর্যস্ত করতে পারে। গবেষণা বলছে, নারী শ্রমিকের আয় কমলে পারিবারিক সহিংসতা ও দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়। তাই এ সংকট কেবল শিল্পের নয়, সমাজেরও।

সম্প্রতি সরকার কর্তৃক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি একটি মানবিক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হলেও, শিল্পের ওপর এর অর্থনৈতিক চাপ বিরাট। মালিকদের উৎপাদন ব্যয় রাতারাতি বহুলাংশে বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এই বর্ধিত ব্যয়কে মেটাতে হবে উচ্চতর উৎপাদনশীলতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে। দুঃখের বিষয় হলো, শ্রমিকের দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় মজুরি বাড়লেও উৎপাদনশীলতার হার সেভাবে বাড়েনি। ফলে একক প্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা অন্য দেশে ঝুঁকছেন।

তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ বহু বছরের নি¤œস্তরে নেমে এসেছে এবং এতে আমদানি খরচ, শিল্প কাঁচামাল, খাদ্যসামগ্রী ও জ্বালানি আমদানিতে চাপ বাড়ছে। যদি আগামী ছয় মাস রপ্তানি পুনরুদ্ধার না হয়, তবে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি আরও বাড়বে। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের লেনদেন আরও জটিল হবে, আর তা পুরো আর্থিক খাতকে আরও দুর্বল করবে। অর্থনীতির এই শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া থামাতে হলে দ্রুত রপ্তানি পুনরুদ্ধারই মূল চাবিকাঠি।

তৈরি পোশাক খাতে দীর্ঘদিনের মানব-শ্রমনির্ভরতার কারণে প্রযুক্তির ব্যবহার ও স্বয়ংক্রিয়তা এখনো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। উন্নত বিশ্বে যেখানে রোবোটিক্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও) ব্যবহার করে দ্রুত উৎপাদন ও নির্ভুল মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানায় এখনো পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির পশ্চাৎপদতার ফলে পণ্যের গুণগত মান, উৎপাদনশীলতা এবং দ্রুত বাজারের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এই খাতে নতুন করে প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ করার জন্য মালিকদের কাছে ডলারের অভাব এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার একটি বড় বাধা।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের মূল সমস্যা হলো এখনো তুলনামূলকভাবে কম দামের (খড়-িাধষঁব) সুতির পোশাকের যেমন : টি-শার্ট ও সাধারণ জিন্সের ওপর অতি নির্ভরশীলতা। অথচ বিশ্ববাজারে এখন ফ্যাশন ট্রেন্ড পরিবর্তিত হচ্ছে; কৃত্রিম তন্তু বা ম্যান-মেড ফাইবার (গগঋ) ভিত্তিক, জটিল ডিজাইনের এবং টেকনিক্যাল পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। গগঋ পোশাকের বাজার তুলার পোশাকের বাজারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে গগঋ উৎপাদনে সক্ষমতার অভাব এবং দক্ষ ডিজাইনারের ঘাটতি থাকায় আমরা উচ্চ-মূল্যের এই বাজারে প্রবেশ করতে পারছি না। এর ফলে প্রতি ইউনিটে আমাদের গড় রপ্তানি মূল্য তুলনামূলকভাবে কম থাকে, যা বর্তমান সংকটে মুনাফার মার্জিনকে আরও সংকুচিত করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে শিল্পকে দুর্বল করে রাখছে।

আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এখন আগের মতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বা অর্ডার দিচ্ছেন না। প্রথমত, সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতা, দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট, তৃতীয়ত, রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্ভাবনা তাঁদের অর্ডার দেওয়ার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে। ফলে অনেক ক্রেতা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত বা তুরস্কের দিকে ঝুঁকছেন। এই আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ একবার বাজার হারালে তা পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে যায়।

এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমত, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য বিশেষ ডলার উইন্ডো চালু করে কাঁচামাল আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা বাড়াতে হবে, যাতে শ্রমিকদের বেতন ও উৎপাদন ব্যয় নির্বিঘেœ প্রদান করা যায়। তৃতীয়ত, পণ্য পরিবহন ও কার্গো ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন অপরিহার্য আগুন, ক্ষতি বা বিলম্ব যেন আর কোনোভাবে রপ্তানিকে ব্যাহত না করে।

পোশাকশিল্প এমন একটি খাত যেখানে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় বোঝাপড়া অপরিহার্য। মজুরি কাঠামো, উৎপাদন ব্যয়, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এসব বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো সমাধান কার্যকর হবে না। বর্তমানে শ্রমিকদের দাবি, মালিকদের সংকট ও সরকারের নীতিগত চাপে একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনই প্রয়োজন আস্থাভাজন সংলাপ ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ, যাতে সবাই সমানভাবে লাভবান হয় এবং শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের পোশাক খাত বহু বছর ধরে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে মূলত সাশ্রয়ী খরচ, দক্ষ শ্রমশক্তি ও সময়মতো সরবরাহের ওপর ভর করে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যাংক খাত সংস্কার, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদনে যথাযথ বিনিয়োগ না হলে এই প্রতিযোগিতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্ববাজারে এখন মূল্য নয়, গুণগত মান, স্থায়িত্ব ও সবুজ উৎপাদনই মূল বিষয়। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে দ্রুত নতুন রূপে এগোতে হবে।

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প একদিনে তৈরি হয়নি। এটি চার দশকের সংগ্রাম ও শ্রমিকের ঘামের ফসল। এর পতন মানে কেবল অর্ডার হারানো নয়, হারাতে হবে লাখো নারীর আয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি। তাই এখনই সময় সরকার, মালিক, শ্রমিক এবং নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে বসে সামনে এগোনোর রূপরেখা তৈরি করার। সময় নষ্ট হলে শুধু কারখানা নয়, হারিয়ে যাবে ভবিষ্যতের উন্নয়নের স্বপ্নও।

মো. নূর হামজা পিয়াস
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!