বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:৩৯ এএম

শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও ১৮ সমিতি

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:৩৯ এএম

শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও ১৮ সমিতি

**** রাজশাহী বাগমারা
*** ২৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা করেছিলেন গ্রাহকরা
*** মেয়াদ শেষে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সমিতিগুলো
*** কষ্টে উপার্জিত অর্থ লাভের আশায় জমা দিয়ে এখন নিঃস্ব
*** তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া আশ^াস ইউএনওর

রাজশাহী বাগমারায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে ১৮টি সমিতি। দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়কারীরা তাদের কষ্টে উপার্জিত অর্থ লাভের আশায় জমা করিছিলেন এই সমিতিগুলোতে। কিন্তু বর্তমানে এ সমিতিগুলো কার্যত বন্ধ, এবং গ্রাহকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাহক জানান, প্রথমে সমিতিগুলো মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক উচ্চ মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে সঞ্চয় সংগ্রহ করত। কেউ পাঁচ বছরে দ্বিগুণ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিত। কৃষক, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ও শ্রমিকরা তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় এসব সমিতিতে রেখেছিলেন। সমিতিগুলোতে সঞ্চয় করেছিলেন ২ হাজার ৩০০ জন গ্রাহক। কেউ ২৮ লাখ, কেউ ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা করেছিলেন। গ্রাহকের এসব টাকা তছরুপ করে গা-ঢাকা দিয়েছে সংস্থার মালিকরা।

উপজেলার একডালা গ্রামের খোদেজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বছরের পর বছর মানুষের বাসায় কাজ করে ও হাঁস-মুরগি লালন করে জমানো চার লাখ টাকা সেখানে রেখেছিলাম। অধিক মোনাফার দেখিয়ে সমিতিতে সেই টাকা জমা দিয়েছিলাম। এখন তাদের কোনো হদিস নেই আজ আমি নিঃস্ব। মেয়াদ শেষে দ্বিগুণ টাকা ফেরত পাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এখন তাদের অফিস নেই। কোনো সাইনবোর্ড নেই।

শাহানাজ নামের আরও এক নারী বলেন, তিনি ও তার স্বজনেরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতিতে রেখেছিলেন ৩৩ লাখ টাকা; তার মধ্যে এক স্বজনের অবসরের টাকাও ছিল। কথামতো একসময় মুনাফা মিললেও এখন সব বন্ধ। থানায় অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। বেসরকারি এসব সমিতির দায়ভার কেউ নিতে চায় না। ভুক্তভোগীরা কোনো প্রতিকারের রাস্তা পাচ্ছে না।

রাজশাহী সমবায় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বাগমারা উপজেলায় মোট ৩০৩টি সমিতির নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগের পর দুই দফায় ৬৮টি সমিতির অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। প্রায় ১০০টি সমিতি এখন কালো তালিকা রয়েছে। ২০১৮ সালের পর নিবন্ধন সহজ হওয়ায় সুযোগ নেয় একটি প্রভাবশালী চক্র। পাইলট প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে যেসব সমিতি নিবন্ধন পেয়েছিল, অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর দুবছরেই সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রথমে মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক আকর্ষণীয় মুনাফা সুবিধা দিয়ে গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করত এসব সমিতি। কেউ পাঁচ বছরে দ্বিগুণ মুনাফার স্বপ্ন দেখাতেন। কেউ বছরে প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা দিতে প্রতিশ্রুতি দিতেন। কৃষক, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, শ্রমিক -সব শ্রেণির মানুষ তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় এসব সমিতিতে আমানত হিসাবে রাখেছেন। কেউ ২৮ লাখ, কেউ ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে আমানত সংগ্রহ করে সমিতিগুলো এখন উধাও হয়ে গেছে। এতে সারা জীবনের সঞ্চিত পুঁজি হারিয়ে গ্রাহকদের কান্নার রোল পড়ে গেছে।

গ্রাহকদের ভাষ্য, চলতি বছর থেকেই শুরু হয় টালবাহানা। একসময় নিয়মিত মুনাফা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর একে একে ১৮টি সমিতির পরিচালকরা টাকা নিয়ে উধাও। সাইনবোর্ড আছে, অফিস নেই; আছে শুধু তালাবদ্ধ কক্ষ আর শূন্যতার দীর্ঘশ্বাস। বাগমারায় উধাও হওয়া সমিতিগুলো হলো- আত তিজারা, আলোর বাংলা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, আল-বায়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড, তোরা ফাউন্ডেশন, মোহনা সমাজকল্যাণ সংস্থা, স্বচ্ছতা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, আঁত তাবারা শিক্ষক কল্যাণ সমিতি, আল আকসা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, আমেনা ফাউন্ডেশন, নদী সঞ্চয় ঋণদান সমিতি, চানপাড়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, সাফল্য গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, সোনালি সকাল ঋণদান সমিতি, সালেমা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, ম্যাসেঞ্জার সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি, জনপ্রিয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি, গোল্ডেন স্টার সমিতি, অগ্রণী সমবায় সমিতি ও স্বনির্ভর সঞ্চয় সমিতি।

আলোর বাংলা সমিতির গ্রাহক কমিটির সভাপতি মজনুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শুধু এই একটি সমিতির তিন শাখা থেকেই ৪৫০ গ্রাহকের ২৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে পরিচালকরা। এখন গ্রাহকদের দায়িত্ব নেওয়ার কোনো লোক নেই। তারা চরম হতাশায় রয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বীরেন্দ্রনাথ সরকার বলেছেন, তিনি ৯ লাখ টাকা রেখেছিলেন মোহনা নামের সমিতিতে। টাকা ফেরত না পেয়ে ২০ গ্রাহক মিলে মামলা করেছেন। পরিচালক মুরাদ হোসেন গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে পরে পালিয়ে গেছে।

ভবানীগঞ্জের মাহাবুর রহমানসহ ৭০ গ্রাহক আল-বায়া সমিতিতে রেখেছিলেন প্রায় ৪ কোটি টাকা। মামলা করার পর দুই পরিচালক গ্রেপ্তার হলেও বাকি টাকাগুলোর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

এক কলেজশিক্ষক বলেন, তিনি ২০ লাখ টাকা রেখে মাসে মুনাফা পেতেন। সাত মাস ধরে মুনাফা বন্ধ। পরিচালকেরা পুরো অফিস গুটিয়ে উধাও। ‘লোভে পড়ে জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে আজ নিঃস্ব,’ -বললেন তিনি।

পালিয়ে থাকা কয়েক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা গ্রাহকের টাকা তাদের কাছেই আছে এবং ব্যবসায় লোকসানের অজুহাত দিয়ে সময় চাইছেন। আলোর বাংলা ফাউন্ডেশনের আজিজুল হক বলেন, ‘মাঠে কিছু টাকা আছে, একটু সময় পেলে ফেরত দেব জানিয়েছেন। অন্যদের ফোনে পাওয়া যায়নি।  বাগমারা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কাউসার আলী বলেন, সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদন তাদের প্রদত্ত তথ্যের ওপরই তৈরি হয়। অনেক সমিতি একাধিক সংস্থা থেকে অনুমতি নিয়ে আমানত সংগ্রহ করেছিল- যা নজরদারির বাইরে রয়ে যায়। তাই তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না।

বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, পলাতক কয়েকটি সমিতির পরিচালক কয়েকটি মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রায়দিনই নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করনে। তিনি বলেন, এসব সমিতি সমবায় নীতিমালা মানেনি। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!