যশোরের শার্শা সীমান্তে হাকর নদের পাড়ের একটি বাঁশবাগান থেকে উদ্ধারকৃত নবজাতককে দত্তক নিয়েছেন নিঃসন্তান দম্পত্তি সানাউর ও সুমাইয়া। তারা ঢাকার গুলশান-বাড্ডার বাসিন্দা। গতকাল বুধবার উপজেলা প্রশাসন সানাউর রহমান ও সুমাইয়া নামে দম্পত্তির হাতে শিশুটিকে হস্তান্তর করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বেনাপোল পোর্ট থানার নামাজ গ্রামের হাকরপাড়ের একটি বাঁশবাগানে পরিত্যক্ত অবস্থায় নবজাতককে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর ভিড় জমে যায় হাক নদের পাড়ে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেনাপোল পৌর প্রশাসক ডা. নাজিব হাসান ঘটনাস্থলে পৌঁছে নবজাতকটিকে উদ্ধার করেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শিশুটির ভবিষতের জন্য উপজেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। এরপর স্থানীয় পত্রিকায় উদ্ধারকৃত শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য আগ্রহী নিঃসন্তান ব্যক্তিদের আবেদন করতে বলা হয়। সে মোতাবেক ১২ জন দম্পত্তি শিশুটিকে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। সেখানে যাচাই-বাছাই করে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গাইদঘাট গ্রামের সানাউর রহমান ও সুমাইয়া দম্পত্তির কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়। তারা বর্তমানে গুলশানের বাড্ডায় বসবাস করেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের আবেদনের পর আর্থিক সচ্ছলতা, সামাজিক অবস্থান ও সন্তান লালন-পালনের সক্ষমতা যাচাই করে আনুষ্ঠানিকভাবে সানাউরের স্ত্রী শিশুটিকে কোলে তুলে নেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিপক কুমার সাহা, সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম, বিআরডিপি কর্মকর্তা সাকির হোসেন, নারী ও শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা জাহান ই গুলশান ও শার্শা থানার ওসি আব্দুল আলীম, বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ৯২৫-এর সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোর্শেদ প্রমুখ।
জানতে চাইলে শিশুটির দত্তক সানাউর রহমান ও সুমাইয়া জানান, তাদের ১৫ বছরের বিবাহিত জীবন। অথচ তাদের আজও কোনো সন্তান হয়নি। এ জন্য পত্রিকায় খবর দেখে ছেলেশিশুটি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তারা শিশুটিকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন। এখন থেকে শিশুটির বাবা ও মা আমরা দুজন। তারা শিশুটিকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নামাজ গ্রামের আলি হোসেন কালু (৪৫) বলেন, ওই দিন আমার বসতবাড়ির পাশে বাঁশবাগানে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। সকালে স্ত্রী মোছা. নারগিস বেগমসহ স্থানীয় লোকজন নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, এক পাগলি নবজাতকটি প্রসব করেছে। তখন পাগলিকে কাপড় পরানো হয় এবং বাচ্চার নাড়ি কাটা হয়। তবে পাগলি তার সন্তান রেখে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে আর পাইনি। সেই থেকে ছেলে বাচ্চাটি আমাদের হেফাজতে ছিল। সে সময় এ বিষয়ে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ইউএনও।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন