শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ০২:৪৮ এএম

যুদ্ধবিরতি

‘জজ ও জল্লাদ’-এর ভূমিকায় ইসরায়েল

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ০২:৪৮ এএম

‘জজ ও জল্লাদ’-এর ভূমিকায় ইসরায়েল

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছে আল-মাওয়াসি অঞ্চল। এ ছাড়া গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলীয় শুজাইয়া এলাকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবারে ভরা একটি মোড়ে হামলা হয়েছে। জাইতুন মহল্লার একটি ভবনেও বোমা বর্ষণ করা হয়, যেখানে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি পুরো পরিবারও রয়েছে। হানি মাহমুদ বলেন, ‘একজন বাবা, একজন মা আর তাদের তিন সন্তানকে এই ভবনের ভেতর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।’ তিনি জানান, হামলার তীব্রতা গাজাজুড়ে আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলেছে। আল জাজিরার এই প্রতিবেদক আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে গাজার মানুষ প্রতিদিন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।’ উল্লেখ করেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থামেনি। তার ভাষায়, ‘যুদ্ধ চলছেই, আর ফিলিস্তিনিরা এখনো এই সহিংসতার কারণেই প্রাণ হারাচ্ছে।’ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, খান ইউনিস এলাকায় তাদের সেনাদের ওপর হামলার জবাবে তারা বুধবার গাজাজুড়ে ‘হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে’ আঘাত হেনেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি যেকোনো হুমকি দূর করতে সেনাবাহিনী শক্ত হাতে অভিযান চালিয়ে যাবে।’ তবে হামাস এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানায়, ইসরায়েলের সেনাদের ওপর হামলার কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এটি গাজায় তাদের ‘অপরাধ ও লঙ্ঘন’ বৈধতা দেওয়ার ‘দুর্বল ও স্বচ্ছ অজুহাত।’

হামাস এক বিবৃতিতে সাম্প্রতিক হামলাকে ‘বিপজ্জনক উসকানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধাপরাধী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা আবার শুরু করার চেষ্টা করছেন। রামাল্লা থেকে আল জাজিরার নূর ওদেহ জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েল নিজেকে ‘জজ, জুরি ও জল্লাদ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, ‘গাজায় এই যুদ্ধবিরতি মানা হচ্ছে কি না, তা একমাত্র ইসরায়েলই ঠিক করছে। আর তারা যখনই মনে করছে, হামাস যুদ্ধবিরতি মানছে না, তখনই নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শুরু করছে।’

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় কমপক্ষে ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছে চিকিৎসা সূত্র। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির অন্যতম সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন এটি। বুধবার গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে অন্তত ৭৭ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। এটি প্রাথমিক হিসাব। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, ইসরায়েলি বাহিনী তিনটি বিশেষ স্থানে হামলা চালিয়েছে। এর একটি

বুধবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিক হিসাব হিসেবে জানায়, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি, গাজা সিটির শুজায়েয়া জংশন এবং জেইতুন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়। এসব এলাকায় বেসামরিক মানুষের ভিড় ছিল। ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের প্রায় ৪০০ ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। বুধবার গাজার আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৯৩টি নথিভুক্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমান ও কামান হামলা, স্থানীয় বাসিন্দাদের ও তাদের বাড়িঘরের ওপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি আক্রমণের ঘটনা। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় ২৭৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। একই সময়ে অন্তত ৬৫২ জন আহত হয়েছে এবং আরও ৩৫ জন গাজাবাসীকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের কর্মকা- এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তারা মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে জায়নবাদী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। এদিকে, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণের উদ্যোগ শুরু করে। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালায় ।

এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।এ অবস্থায় ৬ অক্টোবর মিশর, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি সমাধানের জন্য হামাস ও ইসরায়েলের পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় শুরু হয়। ৯ অক্টোবর পক্ষগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার চুক্তিতে সই করে। ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘিত হওয়ায় পরিস্থিতি মোটেও ভালোর দিকে এগোচ্ছে না। এমন মন্তব্য করেছেন দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের পাবলিক পলিসি বিভাগের শিক্ষক তামের কারমাউত। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে, তা সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক গতি তৈরি করেছে বলে তিনি মনে করেন।

কারমাউত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রাখা ইসরায়েল এখন আর এককভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে সিদ্ধান্ত ভাগ করে নিতে হচ্ছে, সমঝোতার ভিত্তিতে পরিমর্শ নিতে হচ্ছে, যা তেল আবিবের জন্য অস্বস্তিকর। তার মতে, ‘আমরা এখন যে ইসরায়েলকে দেখছি, তা একধরনের নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে রয়েছে। গাজায় জাতিসংঘের নিরাপত্তাকাঠামোর অধীনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিটি উদ্যোগে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে তারা।’ তিনি আরও বলেন, লেবাননে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং সিরিয়ায় আঞ্চলিক ব্যবস্থায়ও ইসরায়েল একইভাবে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!