যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ভারতের কাছে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ও এক্সক্যালিবার আর্টিলারি গোলাবারুদ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। মোট ৯৩ মিলিয়ন ডলারের এই সম্ভাব্য বিক্রির বিষয়টি বুধবার নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সি (ডিএসসিএ)। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আগস্টে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেওয়ার পর ওয়াশিংটনের ফরেন মিলিটারি সেলস (এফএমএস) কর্মসূচির আওতায় ভারতের কাছে প্রথম কোনো প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত বিক্রি এটি। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছিলেন। নয়াদিল্লির রাশিয়ান তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া পদক্ষেপ ছিল এটি। এর আগে, চলতি মাসেই ভারত নিজস্ব উৎপাদিত তেজস যুদ্ধবিমান বহরের জন্য আরও ইঞ্জিন সরবরাহে জেনারেল ইলেকট্রিকের তৈরি ফাইটার জেট ইঞ্জিন পুনরায় অর্ডার দিয়েছে। ডিএসসিএ এক বিবৃতিতে জানায়, এই বিক্রি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত সম্পর্ককে জোরদার করবে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ও দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতি, শান্তি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ভারতের নিরাপত্তা বাড়াতে সহায়তা করবে।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ভারত সফরের আগে দিল্লিকে নতুন পঞ্চম প্রজন্মের এসইউ-৫৭ স্টেলথ ফাইটার জেটের প্রযুক্তিতে সীমাহীন প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো। এর মধ্য দিয়ে ভারতের যুদ্ধবিমানের চাহিদা পূরণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা রোস্টেকের সিইও সার্গেই চেমেজভ জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে রাশিয়ায় তৈরি এসইউ-৫৭ ফাইটার সরবরাহ করা হবে এবং ধাপে ধাপে এর উৎপাদন ভারতে স্থানান্তরিত করা হবে। তবে এটাই শেষ নয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মস্কো ভারতকে একক ইঞ্জিনের স্টেলথ ফাইটার এসইউ-৭৫ চেকমেটও সরবরাহ করতে পারে। এর আগে কোনো দেশই ভারতকে এমন উচ্চমাত্রার প্রযুক্তিগত প্রবেশাধিকার দেয়নি। যদি ভারত প্রস্তাবটি গ্রহণ করে, তাহলে দেশটি পশ্চিমা দেশগুলোর যেসব সামরিক প্রযুক্তি ভাগ করতে অস্বীকার করেছে, তার অনেক ক্ষমতা পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে উন্নত স্টেলথ ফাইটার তৈরি করতে পারবে। দুবাই এয়ার শো ২০২৫-এ চেমেজভ বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, রাশিয়া ভারতের জন্য সম্পূর্ণ পঞ্চম প্রজন্মের বিমান প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত। এর মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিন, সেনসর, স্টেলথ উপকরণ ইত্যাদি।
চেমেজভ রাশিয়া-ভারতের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকলেও আমরা দেশটিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অস্ত্র সরবরাহ করেছি। আজও আমরা আগের বছরের মতো একই নীতি অনুসরণ করি, ভারতের প্রয়োজন অনুযায়ী সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করি এবং সহযোগিতা উন্নয়নে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ নিশ্চিত করি।’ এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা এসইউ-৫৭ নিয়ে ভারত অনুরোধ করেছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্ক আছে, ভারতের যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা নিশ্চিত করব।’ পরবর্তীতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অস্ত্র রপ্তানিকারক রোসোবোরোনেক্সপোর্টের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, মস্কো ভারতের ভবিষ্যৎ বিমানগুলোর জন্য লাইসেন্স উৎপাদন এবং ভারতীয় অস্ত্র সংযোজনের সুবিধাও দিচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া ভারতের কাছে নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি স্থানান্তর ও শেখার সুযোগ দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিন, অপটিকস, এইএসএ রাডার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কম-সিগনেচার প্রযুক্তি এবং আধুনিক বিমান অস্ত্র।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন