উত্তর গাজায় বহু ফিলিস্তিনি পরিবার ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উপকূলভূমির ভেতরে আরও গভীরে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে। এতে গাজাবাসীর জনজীবন আরও সংকুচিত এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী ও ট্যাংক গাজা সিটির পূর্বাংশে তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ পার হয়ে প্রায় ৩০০ মিটার ভেতরে চলে গেছে। সংস্থাটি বলেছে, ‘এলাকায় চলমান গোলাবর্ষণের কারণে বহু পরিবারের ভাগ্য এখনো অজানা।’ তাদের দাবি, হলুদ রেখা সম্প্রসারণ যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি ‘স্পষ্ট অশ্রদ্ধা’।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তিতে নির্ধারিত এই হলুদ রেখা হলো সেই অনির্দিষ্ট সীমানা, যেখানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান বদল করে পিছু হটেছিল।
এই রেখার ভেতরে ফিলিস্তিনিদের দিকে নিয়মিত গুলি চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল উপকূলের অর্ধেকের বেশি অংশে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।
বৃহস্পতিবার গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার হিন্দ খুদারি জানান, ইসরায়েলি সৈন্যরা শুজায়েয়ার পূর্বাঞ্চলে নতুন অবস্থান চিহ্নিত করতে হলুদ রঙের ব্লক ও সাইনবোর্ড বসাচ্ছিল। খুদারি বলেন, ‘তবে পুরো সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। ফলে অনেক ফিলিস্তিনি জানেই না ঠিক কোথায় রয়েছে এই লাইন।’
আল জাজিরার এই প্রতিবেদক আরও বলেন, ‘শুজায়েয়ায় নতুন অগ্রসরতার ফলে আরও বেশি মানুষ তাদের ঘরে ফিরতে পারছে না। মানুষ বলছে, তাদের ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে ঠেলে এক খাঁচার মধ্যে আটকে ফেলা হচ্ছে।’
হলুদ রেখা লঙ্ঘনের এই খবর নিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। ঘটনাটি এমন সময়ে সামনে এল, যখন পুরো গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা ফের তীব্র হয়ে উঠেছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও ৮৮ জন।
চিকিৎসকেরা জানান, খান ইউনিসের পূর্বে বানি সুউহেইলার এক বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে এক শিশুকন্যাও ছিল। আহত হয়েছে আরও ১৫ জন।
আল জাজিরার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েল অন্তত ৪০০ বার এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
৩৬ বছর বয়সি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ হামদুন্না এএফপিকে বলেন, প্রতিদিনই মানুষ মরছে, গোলাবর্ষণ থামে না। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো তাঁবুতে থাকি। শহরগুলো ধ্বংসস্তূপ, সব সীমান্ত বন্ধ, জীবনের ন্যূনতম চাহিদাগুলোও নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন