পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমির। মিষ্টি হাসি, প্রাণবন্ত অভিনয় আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির মাধ্যমে তিনি খুব অল্প সময়ে অর্জন করেছেন বিপুল জনপ্রিয়তা। নেট দুনিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, নেটিজেন থেকে শুরু করে ভক্ত-অনুরাগীরা পাকিস্তানের এই অভিনেত্রীকে নিয়ে বেশ আলোচনায় মগ্ন। অভিনয় ছাড়াও ফ্যাশন এবং স্টাইলের জন্যেও ২৮ বছর বয়সি হানিয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে একজন আইকন। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা ১৮.৮ মিলিয়ন।
হানিয়া আমির বাণিজ্যিক সফল চলচ্চিত্র ‘পারওয়াজ হ্যায় জুনুন’এবং পাঞ্জাবি কমেডি চলচ্চিত্র ‘সর্দারজি ৩’-এর মাধ্যমে আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন হানিয়া আমির। প্রতিষ্ঠানটির এক আয়োজনে হাজির হয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়- তোমরা শাকিব খানকে অনেক বেশি পছন্দ করো, তাই আমারও পছন্দ শাকিব খান।’
এর পর থেকেই চর্চা হচ্ছে, শাকিব খানের নায়িকা হচ্ছেন হানিয়া আমির। বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান জানালেন, আসলেই একটি সিনেমা নিয়ে হানিয়া আমিরের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সম্প্রতি কনটেন্ট ক্রিয়েটর রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের এক ভিডিওতে বিষয়টি নিয়ে শাকিব খানকে কথা বলতে দেখা গেছে।
ভিডিওতে রাফসানের উদ্দেশ্যে শাকিব খান বলেছেন, ‘তোমার অনেকগুলো ভ্লগ দেখলাম আমার ফিউচার হিরোইনের সঙ্গে, হানিয়ার সঙ্গে।’ এ সময় পাশ থেকে একজন জানতে চান, উনি (হানিয়া আমির) কি আপনার সঙ্গে সিনেমা করছেন? উত্তরে শাকিব খান বললেন, ‘হ্যাঁ, একটা সিনেমার কথা হচ্ছে।’ কোনো সিনেমা নিয়ে কথা হচ্ছে, তা এখনো খোলাসা করেননি শাকিব খান।
প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছিলেন হানিয়া আমির। তার এই সফর ঘিরে বাংলাদেশি ভক্তদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এক আয়োজনে অংশ নিয়ে কথা বলেন শাকিব খানকে নিয়ে। শাহরুখ খান নাকি শাকিব খান কাকে পছন্দ করেন? উত্তরে শাকিব খানকেই বেছে নিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
হানিয়া ঢাকায় পা রেখে ঐতিহ্যবাহী আহসান মঞ্জিল ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নাগা মরিচ দিয়ে ফুচকা-ঝালমুড়ি খান এবং মাটির ভাঁড়ে দুধ চা পান করেন। হানিয়ার ঢাকায় কাটানো কিছু ছবি ও ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব ছবি তিনি ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন।
পাকিস্তানের গ-ি পেরিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে হানিয়া আমিরের পরিচিতি রয়েছে। ২০২৪ সালে পাকিস্তানি টিভি সিরিয়াল ‘কাভি মে কাভি তুম’Ñএ অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। এই সিরিয়ালে এক অদম্য তরুণী গৃহবধূ, প্রেমিকা সারজিনা চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের সুবাদে এখন ঘরে ঘরে তার তুমুল জনপ্রিয়তা। সবার প্রিয়মুখ এ পরিণত হয়েছেন এই পাক তন্বী অভিনেত্রী। ইতোমধ্যেই ‘সরদারজি থ্রি’সিনেমা দিয়ে বলিউডেও অভিষেক ঘটেছে হানিয়ার। সিনেমাটি পাকিস্তানে সাফল্য পেয়েছে। হানিয়া আমির ‘মুঝে পেয়ার হুয়াথা’, ‘মেরে হামসফর’, ‘সাং-এ-মাহ’, ‘আন্না’ ও ‘দিলরাবা’র মতো টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
সর্বশেষ ফাহাদ মোস্তফার বিপরীতে ‘কভি মে কভি তুম’টিভি সিরিয়ালে দেখা গিয়েছিল তাকে, যা শেষ হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে। এরপর প্রায় এক বছর টিভি সিরিয়াল থেকে বিরতি নিয়ে তিনি মনোযোগ দেন তার প্রথম ভারতীয় পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র ‘সর্দারজি’-এ, যেখানে তার সহঅভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবার টিভি সিরিয়ালে ফিরেছেন হানিয়া। মরি জিন্দেগি হ্যায় তু’ সিরিয়ালে প্রথমবারের মতো জুটি হয়েছেন হানিয়া আমির ও বিলাল আব্বাস খান। প্রায় দশ মাস অপেক্ষার পর নতুন কোনো সিরিয়ালে দেখা গেল তাকে।
অভিনয় থেকে স্টাইল, সবখানেই তাকে নিয়ে অনুরাগীদের উন্মাদনা দেখা যায়। ২০১৬ সালে ‘জনান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে হানিয়ার। এক দশকের ক্যারিয়ারে ‘মেরে হাম সাফার’, ‘ফেইরি টেল’, ‘দিলরুবা’, ‘আনা’, ‘কাভি মে কাভি তুম’-এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। রোমান্টিক থেকে কমেডি, গ্ল্যামারাস থেকে সিরিয়াস রোলে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন চমৎকারভাবে। সুঅভিনয়ের মাধ্যমে সব ধরনের চরিত্রেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই অভিনেত্রী।
কোথায় পড়াশোনা করেছেন, কলেজ জীবন কেমন ছিল? তা নিয়ে হানিয়া আমিরকে খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। পড়াশোনাকে আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন তিনি। কয়েক বছর আগে ‘দ্য ফোর্থ আম্পায়া’ নামের একটি টক শোতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন হানিয়া আমির। উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে হানিয়া আমির জানান, তিনি কলেজে ভর্তির পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন। অভিনয়ে ক্যারিয়ার শুরুর পর একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাননি।
হানিয়া আমির বলেন, ‘আমি পড়াশোনায় ভালোই ছিলাম। অভিনয় থেকে যখন ভালো উপার্জন করা শুরু করি, তখন টাকার গুরুত্ব বেশি ছিল। কারণ, পুরো সংসারের দায়িত্ব আমার ওপরই ছিল।’ পাকিস্তানের অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজন হানিয়া। তিনি ধারাবাহিকের প্রতি পর্বের জন্য প্রায় তিন লাখ রুপি পারিশ্রমিক পান। জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় পারিশ্রমিকও বেড়েছে। বর্তমানে চার লাখ রুপি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।
সম্প্রতি আইএমডিবির শীর্ষ ১০ জন সুন্দরী অভিনেত্রীর তালিকায় ষষ্ঠ হয়েছেন হানিয়া আমির। ইনস্টাগ্রামে পাকিস্তানি তারকাদের মধ্যে হানিয়া আমিরের অনুসারী সর্বাধিক। ২০১৫ সালে প্রথম পাকিস্তানি নারী মুনিবা মাজারির পর দেশটির দ্বিতীয় পাকিস্তানি নারী হিসেবে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএন উইমেন পাকিস্তান’-এর শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন হানিয়া। শুভেচ্ছাদূত হিসেবে এখন থেকে নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবেন অভিনেত্রী।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন