পৃথিবীতে ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে তাপপ্রবাহের সংখ্যা। দিন যত গড়াবে তত দীর্ঘ, উষ্ণ হবে। এমনকি পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নেমে গেলেও তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি মিলবে না। এমনটাই দাবি করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাদের দাবি, ২০৫০ সাল নাগাদ যদি পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামে, তা হলে কিছু দেশে তার পরের হাজার বছরেও থামবে না তাপপ্রবাহ।
‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ : ক্লাইমেট’ পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। আগামী হাজার বছরে তাপপ্রবাহ কতটা ভয়ানক রূপ নিতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাতেই তারা দেখেছেন, যত সময় গড়াবে, তত প্রবল হতে থাকবে তাপপ্রবাহ। কার্বন নিঃসরণ শূন্য হলেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলাবে না।
ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কতটা ঘন ঘন হতে পারে তাপপ্রবাহ, তা কতটা কষ্টদায়ক হতে পারে, বছরে কতটা দীর্ঘ সময় ধরে তা চলতে পারে, এসব বোঝার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করেন, তাপপ্রবাহের সঙ্গে একটা সূত্র রয়েছে কার্বন নিঃসরণের। সেই নিঃসরণ কতটা পরিমাণ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তারা ধরে নিয়েছেন, ২০৩০ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে কোনো সময়ে সারা পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নেমে যাবে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ড্রিউ কিংয়ের দাবি, পরিস্থিতি যেমনই হোক, কার্বন নিঃসরণ শূন্য হলেও কিছু কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন হতে থাকবে তাপপ্রবাহ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব দেশ নিরক্ষরেখার কাছে রয়েছে, সেখানে অবস্থা আরও শোচনীয় হতে পারে। প্রতি বছরই তাপপ্রবাহ ভেঙে দিতে পারে তার আগের বছরের রেকর্ড। কার্বন নিঃসরণ শূন্যে যত দেরিতে নামবে, তত পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকবে। দক্ষিণ মহাসাগর উষ্ণ হওয়ার কারণেও তাপপ্রবাহ আরও জোরালো হতে পারে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে। কার্বন নিঃসরণ শূন্য হলেও তা কমার সম্ভাবনা নেই। তাদের দাবি, কার্বন নিঃসরণ যদি পৃথিবীতে শূন্য হয়, তার পরের হাজার বছরেও পৃথিবীর জলবায়ু শিল্পবিপ্লবের আগে যেমন ছিল, তার মতো হবে না। তাপপ্রবাহও খুব একটা কমবে না। উল্টো কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামার ১০০ বছর পরেও তাপপ্রবাহের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারাহ পার্কিনস জানিয়েছেন, অনেকেরই ধারণা রয়েছে, কার্বন নিঃসরণ শূন্যে পৌঁছে যাওয়ার পরে ধীরে ধীরে জলবায়ুর পরিবর্তন হবে। উষ্ণায়ন কমবে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। তারপরেও তাপপ্রবাহ চলবে। তবে পার্কিনস জানিয়েছেন, এ জন্য কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থেকে সরলে চলবে না। যত দ্রুত সেই লক্ষ্য পূরণ হবে, তত তাপপ্রবাহের তীব্রতা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
সাধারণত কোনো স্থানের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৫ ডিগ্রি বেশি থাকলে এবং দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁলে, সেই পরিস্থিতিকে তাপপ্রবাহ বলে ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি হয়েছে ইউরোপে। ইউরোপজুড়ে প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। ফ্রান্স এবং ইতালির কিছু জায়গায় দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির গ-ি ছাড়িয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনই এই তাপপ্রবাহের নেপথ্য কারণ। তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও তার প্রভাবে তাপপ্রবাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এক-একটি দেশে আগের তুলনায় দীর্ঘ সময় ধরে ঘন ঘন হতে পারে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬০ সালে বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা যত ঘন ঘন ৪০ ডিগ্রির গ-ি ছাড়াতে দেখা যেত, ২০২৫ সালে তা ২০ গুণ বেশি দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক বলছেন, কার্বন নিঃসরণ শূন্যে পৌঁছোলেও খুব দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। তবে সেই লক্ষ্য দ্রুত পূরণ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন