ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ঢাকা কেন্দ্রীয়  বিশ্ববিদ্যালয়

স্কুলিং মডেল বাতিলের দাবিতে  শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুলিং মডেল বাতিলের দাবিতে রাজধানীর পৃথক তিন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা, তিতুমীর, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা স্কুলিং মডেলের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তা বাতিল ও নিজ নিজ কলেজের স্বাতন্ত্র্য ও অস্তিত্ব রক্ষার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। 

গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল সহকারে সায়েন্সল্যাব মোড়ে গিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় তাদের ‘স্কুলিংয়ের ঠাঁই নাই, ঢাকা কলেজের আঙ্গিনায়’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘স্কুলিংয়ের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘স্কুলিংয়ের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি সংবলিত স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের খসড়া সংশোধন করতে হবে। খসড়ার স্কুলিং মডেলের মাধ্যমে ৭ কলেজকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে ঢাকা কলেজের অনার্স-মাস্টার্স। অস্তিত্ব সংকটে পড়বে ইন্টারমিডিয়েট।

তারা আরও বলেন, স্কুলিং মডেল ৭ কলেজের অনুপযোগী-অযৌক্তিক। মডেল প্রণয়নে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। স্কুলিং মডেল কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। দাবি আদায়ে যতদিন প্রয়োজন ততদিন রাজপথে আন্দোলন করার কথাও জানান তারা।

তিতুমীর কলেজের প্রধান ফটনের সামনে গতকাল বেলা ১১টার দিকে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরাফাত হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘৭ কলেজের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা যখন মন্ত্রণালয়ে যাই, সেখানে আমাদের আশ্বস্ত করা হয় যে, কলেজগুলো তাদের নিজস্ব পরিচয় ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেই পরিচালিত হবে। কিন্তু আমরা আলোচনাস্থল থেকে বের হয়ে আসার পর আবারও স্কুলিং পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

একই দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ নিজ কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া রাফিদুল হক বলেন, ‘দাবি নিয়ে আমরা বারবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গিয়েছি কিন্তু তারপরও কোনো আশানুরূপ ফল এখনো পাইনি। আজকে আমরা বলে দিচ্ছি, আমাদের কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না। আমরা ৭ কলেজ একসঙ্গে আন্দোলনে নামব, আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা জানান, আগামী কর্মসূচি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বড় ভাইদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার এসব তিন প্রধান সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভের ফলে রাজধানীজুড়ে সকালে দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় অফিসগামী মানুষকে। নীলক্ষেত-মিরপুর রোড, সায়েন্সল্যাব সড়ক ও গুলশান-আমতলি রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, যানজটে সড়ক স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকে হেঁটেই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন।

সায়েন্সল্যাবে কথা হয় নিউমার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী নাহিদ আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডি পর্যন্ত জ্যাম ছাড়িয়েছে। গাড়ি চলছে না, এখন হেঁটেই দোকানের দিকে যাচ্ছি। এভাবে হঠাৎ সড়ক বন্ধ হয়ে গেলে আমরা সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ি।’ 

প্রসঙ্গত, রাজধানীর ৭ সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে খড়সা অধ্যাদেশও জারি করা হয়েছে। এর আগে কলেজগুলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিও বাতিল করা হয়েছে।