রায়েরবাজারে স্মৃতিসৌধের কাছে দাফন করা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১১৪ শহিদের লাশ উত্তোলন করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগÑ সিআইডি। গতকাল রোববার সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি সিবগাত উল্লাহ নিজে উপস্থিত থেকে লাশ উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আর্জেন্টিনার নাগরিক ডা. লুইস ফন্ডেব্রিডার উপস্থিত ছিলেন। এ কার্যক্রমের জন্য তাকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকালে রায়েরবাজার কবরস্থানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহিদদের লাশ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম’ শুরু করে সিআইডির ফরেনসিক টিম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিআইডিপ্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সিআইডিপ্রধান। মরদেহ উত্তোলনের মূল উদ্দেশ্য পরিচয় শনাক্ত। পাশাপাশি এসব ব্যক্তির মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সে বিষয়টিও জানার চেষ্টা করা হবে। এ কারণে আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইসকে আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডিপ্রধান বলেন, ‘শহিদদের লাশ উত্তোলন করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের কাজ আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে করা হবে। যেসব লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে এসব লাশের পরিচয় শনাক্ত প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।’ সিআইডিপ্রধান বলেন, ‘রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে ১১৪ জনের মতো জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছে। এসব লাশের পরিচয় শনাক্তে মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ নমুন সংগ্রহে সিআইডিকে দায়িত্ব দেন আদালত। দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য রায়েরবাজার কবরস্থানেই একটি অস্থায়ী ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।’
সিআইডিপ্রধান সিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘স্বজনরা চাইলে মরদেহগুলো তাদের হস্তান্তর করা হবে, যাতে তারা কবরস্থ করতে পারেন। যদি কোনো লাশের স্বজন পাওয়া না যায় তা হলে পরীক্ষার পর মরদেহগুলো যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দাফন করা হবে।’ সিআইডিপ্রধান বলেন, ‘কোনো দেশে এ ধরনের গণহত্যার ক্ষেত্রে তদন্ত ও লাশ শনাক্তের জন্য মিনেসোটা প্রটোকল অনুসরণ করা হয়। সেই অনুযায়ী এই লাশ শনাক্ত ও তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। তাই কবে নাগাদ শেষ হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস আর্জেন্টিনা থেকে ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন। সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, জুলাই আন্দোলনে নিহত শতাধিক শহিদকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। যে জায়গায় তাদের দাফন করা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের তরফে সে জায়গাটি মার্বেল পাথর, টাইলস দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। গত ২ আগস্ট রায়েরবাজার কবরস্থান পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিহতদের পরিচয় শনাক্তে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘দাফন করা অনেককেই শনাক্ত করা যায়নি। কিভাবে শনাক্ত করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা আছে। এতদিন পর কবর থেকে মরদেহ উঠানো হোক এটা রাজি হয়নি অনেকেই। এখন মোটামুটি সবাই রাজি হয়েছে। সবাই রাজি হলে শনাক্ত করব ডিএনএ’র মাধ্যমে। কেউ যদি তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায় ওটাও আমরা অনুমতি দেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন