ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে তার পদ থেকে অপসারণ করে বিচারের দাবি তোলা হয়। সমাবেশে বিচার চাইতে গিয়ে পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার আবেগাপ্লুত বক্তব্যে পিন্টুকে গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের চিত্র উঠে আসে।
গতকাল রোববার সকালে শহিদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদ ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাসিরউদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুকে কারাগারে হত্যা এবং ৫৭ জন সাহসী সেনা কর্মকর্তার নির্মম হত্যাকা-ের প্রতিবাদ’ শীর্ষক এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সভা থেকে ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ কর্তৃক আইজিপি বাহারুল আলমকে অনতিবিলম্বে অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
সভায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাসিমা আক্তার কল্পনা বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকা-ের ঘটনায় গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে তৎকালীন এসবি প্রধান ও বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমের নাম এসেছে। আমরা তাকে আইজিপির পদ থেকে অপসারণ ও বিচারের দাবি করছি।’
কল্পনা বলেন, ‘নাসিরুদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু একটি দেশের জন্য, একটি দলের জন্য জীবন দিয়েছেন। তিনি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তিনি পরিবার ও ম্যাডাম খালেদা জিয়ার একজন আদর্শ সৈনিক ছিলেন। তবু তাকে ষড়যন্ত্র করে ২০০৯ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট চত্বর থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তখনকার সিআইডি প্রধান আবদুল কাহার আকন্দ তাকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে উত্তরা র্যাবের টিএফ সেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে পিন্টুকে ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি যখন টিএফ সেলে যাই ওষুধ ও কাপড় দিতে, তখন আমাকে গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমার সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি। পিন্টুকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে টর্চার করা হয়। তাকে বারবার বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, বিএনপি নেতারা পিলখানা হত্যায় জড়িত।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পিন্টু ছাড়াও তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার তাপস ও হাজী সেলিম বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তাদের পরিবারকেও নির্যাতন করেছে। তার ভাইকে (কল্পনার) অপহরণ করে নির্যাতন করা হয় এবং তাদের ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে পিন্টুকে রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তৎকালীন এসবি প্রধান বাহারুল আলম এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করেন বর্তমান আইজিপি। এ মিথ্যা তথ্য প্রদানের সঙ্গে যারা জড়িত আমি সবার বিচার চাই। এই হত্যাকা-ে কারা কারা সম্পৃক্ত ছিল সব এখন পরিষ্কার। অন্তর্র্বর্তী সরকার যেন অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় আনে। আমরা নিজেরা কিছু বলছি না, তদন্ত কমিশন বলছে। যদি রিপোর্টে বর্তমান আইজিপির স¤পৃক্ততা থাকে, তাহলে তার অপসারণ চাই।’
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পিন্টুর ছেলে নাহাম আহম্মেদ, যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের সভাপতি রফিক আহমেদ ডলার, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির সেলিমসহ নাসিরুদ্দিন পিন্টুর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা ছাত্রদল-যুবদল নেতারা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন