সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম, গাজীপুর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ০৬:৪৭ এএম

ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

সেতু আছে, রাস্তা নেই

শহিদুল ইসলাম, গাজীপুর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ০৬:৪৭ এএম

সেতু আছে, রাস্তা নেই

**** সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হয়নি সংযোগ সড়ক
**** প্রতিদিন ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে ১২ গ্রামের মানুষ

গাজীপুর জেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে বিভক্ত করে রেখেছে তুরাগ নদের একটি অংশ। সেই নদের ওপর ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু উদ্বোধনের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে আশপাশের অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষকে প্রতিদিন ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চার কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু কওে, যা ২০২০ সালের ১১ জুলাই সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সাবেক ক্রীড়া যুব ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল উদ্বোধন করেন। কিন্তু ১২০০ মিটার সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ায় বাস্তবে এটি পরিণত হয়েছে ‘অকার্যকর স্থাপনায়’।

এক সময় সংযোগ সড়কের জন্য দরপত্র অনুমোদন হলেও প্রশাসনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় কাজটি আটকে যায়। তবে সেতুটি দিয়ে পারাপার হওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভারি মাটির বস্তা ফেলে হাঁটার ব্যবস্থা করে নেয়। কিন্তু এই পথ দিয়ে সেতুতে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে সেতুর এক পাশ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচল করতে হচ্ছে। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো যানবাহন চলে না এ সেতুটিতে।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ১০ মিনিটের রাস্তা অথচ সংযোগ সড়ক না থাকায় সময় লাগছে ১ ঘণ্টার বেশি। সংযোগ সড়কটি হলে সাধারণ মানুষ গাড়ি, ভ্যান-রিকশা নিয়ে ওই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারত। এতে ঝুঁকির পাশাপাশি সময় অপচয়ও এড়ানো যেত। এলাকাবাসী জানান, কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে সড়ক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না। যার কারণে রোগী নিয়ে আমাদের অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা জানান, সড়কে না থাকায় আমাদের স্কুলে যথা সময়ের আধাঘণ্টা আগে রওনা দিতে হয়। ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা জামান হোসেন জানান, আমাদের এলাকার এক বৃদ্ধ ব্রিজ থেকে নিচে নামতে গিয়ে পড়ে হাত ভেঙে গেছে। এছাড়াও প্রায় এরকম ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।

সেতুর পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের কোল ঘেঁষে বহু পুরোনো সাকাশ^র বাজার। আশপাশের ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ এখানে হাট-বাজার করতে আসেন প্রতিদিন। যখন সেতুটি ছিল না, তখন নদী পারাপারের জন্য নৌকা ছিল। কিন্তু সেতুটি হওয়ার পরে বন্ধ হয়ে গেছে সেই নৌকা। এখন আর নৌকায় পারাপারের কোনো সুযোগ নেই।

স্থানীয়রা জানান, খালিশাবর্তা মৌজার অংশজুড়ে ফসলি জমি। সেতু নির্মাণের পূর্বে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিল নৌকা। সেতু হওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কৃষক ও আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। সেতুতে ওঠার রাস্তা ভাঙাচোরা, উঁচু ও ঝুঁকিপূর্ণ। বয়স্ক, নারী ও শিশুদের অন্যের সহযোগিতায় সেতুতে উঠতে হয়। এতে প্রায়ই ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে থাকে অথৈ জল। ব্রিজ না থাকলে আশপাশের গ্রামের লোকজন সাকাশ^র বাজারে নৌকা নিয়ে যেতেন। এখন সেটি সম্ভব হয় না, ফলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ৭ বছর আগে সেতু হয়েছে, অথচ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সেতু নির্মাণকালে এলাকাবাসী যেমন আনন্দিত হয়েছিল এখন ততটাই দুঃখবোধ ঘিরে ধরেছে। এই সেতু এখন আশপাশের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। সেতুটিতে উঠতে পাহাড়ের মতো মনে হয়। কৃষকরা তাদের কাজ করতে পারে না, মালামাল ওঠানামা করতে পারে না। এই এলাকাবাসী ভোগান্তি থেকে মুক্তি চায়।

ওই এলাকার মৌসুম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সেতুটির সঙ্গে সড়কের সংযোগ না থাকায় ১০-১২টি গ্রামের হাজারো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা কৃষক ও স্কুলপড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের। বেশ কয়েকবার রাস্তা হওয়ার গুঞ্জন উঠলেও আবার অজানা কারণে সড়ক নির্মাণ হয় না। এলাকাবাসী মেয়র-কাউন্সিলরের কাছে বহুবার গিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট আশ^াস পায়নি।

এলাকাবাসীরা আরও জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বরাত দিয়ে জানান, তার মাধ্যমে শুনেছি একবার রাস্তার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, কিন্তু এলাকার মানুষ জমি দেয়নি। এজন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর আবারও একটি প্রজেক্ট দেওয়া হয়। কিন্তু সেটাতেও মাটি কাটতে বাধা তৈরি হয়।

যেভাবেই হোক না তবে আমাদের রাস্তাটা হওয়া খুবই প্রয়োজন। এতে আমাদের কালিয়াকৈরসহ এলাকাগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাস্টারবাড়ী এলাকা হতে সাকাশ^র পর্যন্ত খুব শিগগিরই কাজ শুরু করব। ১২০০ মিটার রাস্তার সংযোগ সড়কের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। খুব শিগগিরই টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!