ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন

‘কাতার নিঃসঙ্গ নয়, পাশে আরব ও ইসলামিক বিশ্ব’

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ১১:৫২ পিএম

কাতার নিঃসঙ্গ নয়। তার পাশে আছে আরব ও ইসলামিক বিশ্ব। কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলার পর আরব ও ইসলামিক নেতাদের জরুরি সম্মেলনের প্রস্তুতি মিটিংয়ে এ অভয়বাণী দিয়েছেন আরব লিগের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ আবুল গেইতি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ। এতে বলা হয়, তিনি রবিবার ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করেছেন। সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, একটি অপরাধের সময় নীরবতা আরও অপরাধের জন্য পথ তৈরি করে দেয়।

দোহায় বসছে এই জরুরি সম্মেলন। সেখানে আবুল গেইত বলেন, এই সামিট নিজেই একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। তা হলো, কাতার একা নয়। এর পাশে আছে আরব ও ইসলামিক বিশ্ব। তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজায় যে গণহত্যা চলছে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্ব দুই বছর ধরে নীরবতা অবলম্বন করছে। এর সরাসরি ফল হলো ইসরায়েলের হামলা। উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর হামাসের কয়েকজন কর্মকর্তার দোহার বাড়ি লক্ষ্য করে অপ্রত্যাশিত হামলা চালায় ইসরায়েল। এর ফলে পুরো বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। ফলে আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর টনক নড়েছে। তারা জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। এর আগেও যখন গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে, তখন থেকেই এসব দেশ বা সংগঠন জোরালো নিন্দা প্রকাশ করেছে।

ব্যস, ওই পর্যন্তই। ফলে ইসরায়েল দেখেছে গাজাবাসীকে মেরে শেষ করে দিলেও তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলার কেউ নেই। তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। ইসরায়েল ভালো করেই জানে, গাজার মাটিকে যদি ‘দোজখের আগুনে’ জ¦ালানো হয়, তবু ইসরায়েলকে কেউ কিছু করতে পারবে না। ফলে এবারের এই সম্মেলন যখন আয়োজন করা হয়েছে, তা কিন্তু গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে নয়। এটা আয়োজন করা হয়েছে দোহায় হামলার কারণে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারির মতে, সোমবার এই সামিটে কাতার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার একটি খসড়া প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। তার কথায় এটা স্পষ্ট যে, এটা দোহা হামলাকে কেন্দ্র করে। যখন এই সম্মেলন হচ্ছে, তখন গাজায় রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল।

মুসলিম দেশগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। কাতারে হামাস সদস্যদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার দোহা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার আগে তিনি এই আহ্বান জানান। মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, “ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলিকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে এবং এই শাসনব্যবস্থা বয়কট করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোকে একে অপরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা বর্জনের জন্য অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসরায়েল সমস্ত আন্তর্জাতিক কাঠামো এবং নিয়ম লঙ্ঘন করে মুসলিম দেশগুলোতে আক্রমণ করার সাহস করবে না।’ ইরানের রাষ্ট্রপতি জোর দিয়ে বলেন,  ‘তেল আবিব সরকার কোনো সীমানা মানে না। তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনে কাতার, লেবানন, ইরাক, ইরান এবং ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশে আক্রমণ করেছে।’ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘বর্ণবাদী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন ও রসদ সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যাকে বৈধতা দিচ্ছে।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দোহা শীর্ষ সম্মেলন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ‘একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে’।

কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত জরুরি সম্মেলন থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জনসাধারণের প্রত্যাশা হয়তো পূরণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দোহা ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মিডিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি। তিনি বলেন, সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে থাকতে পারে সামরিক জোট গঠন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি বিমান চলাচলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া কিংবা আব্রাহাম অ্যাকর্ড থেকে প্রত্যাহার। তবে সম্মেলনের আগে যে ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, তা ‘সম্ভবত কিছুটা বেশি’ হয়ে গেছে। এলমাসরি বলেন, সম্মেলনে প্রত্যাশার তুলনায় তেমন ফল আসবে না, কারণ এখানে অনেক দেশ রয়েছে। তাদের স্বার্থ ভিন্ন ভিন্ন, আর সবাই এ ধরনের পদক্ষেপে একমত নয়।

রাজধানী দোহায় ইসরায়েলি হামলার পর কাতারের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, কাতারকে রাজনৈতিকভাবে আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং ইসরায়েলকেও হামলার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। সোমবার টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দোহায় ইসরায়েলি হামলার পর কাতারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন। তিনি উপসাগরীয় এই দেশকে ‘মহান মিত্র’ আখ্যা দিয়ে বলেন, কাতারকে তাদের অবস্থানের কারণে ‘কিছুটা রাজনৈতিকভাবে সতর্ক’ থাকতে হবে।