ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আফগানিস্তানকে সতর্ক করেছে পাকিস্তান

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:১১ এএম

সম্প্রতি পাকিস্তানে, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। সংগঠনটি তখন নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে হামলা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেশটির মাটি থেকে এ গোষ্ঠীকে নির্মূলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। রাষ্ট্রীয়ভাবে পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) বোঝাতে ‘ফিতনা আল খাওয়ারিজ’ শব্দ ব্যবহার করে। আবার বেলুচিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকে তারা ‘ফিতনা আল হিন্দুস্তান’ বলে উল্লেখ করে থাকে।

এর মধ্য দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও অস্থিতিশীলতা তৈরির অভিযোগ তুলে ধরে তারা। ইসলামাবাদের হুঁশিয়ারি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে তা ‘শত্রুতামূলক কর্মকা-’ হিসেবে বিবেচিত হবে। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভি। ‘দ্য নিউজ’ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এ বার্তা জানানো হয়। কাবুলের মাটিকে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না, এ কথাই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন পাকিস্তানি কর্মকর্তারা। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রদূত সারদার আহমেদ শাকিবকে তলব করে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ আলী আসাদ গিলানি পাকিস্তানের উদ্বেগের কথা জানান।

তলবের পেছনে কারণ হলো সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে টিটিপি সংশ্লিষ্ট ‘ফিতনা আল-খারেজ’ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া। ইসলামাবাদের দাবি, এসব সন্ত্রাসী আফগানিস্তানের ভেতর আশ্রয় পাচ্ছে এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিশেষ সহকারী (মন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন) মুহাম্মদ সাদিক খান সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন। তিনি আফগানিস্তান-সংক্রান্ত এক গোপন সফরে সেখানে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করবেন। সাদিক খান এ সপ্তাহেই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে কাবুল সফরে যেতে পারেন।

সফরে তিনি আফগান সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছে পাকিস্তানের কঠোর বার্তা পৌঁছে দেবেন এবং অন্তর্বর্তী আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আমির মুত্তাকির সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ইরানের চাবাহার এলাকার কাছে সাম্প্রতিক অভিযানে ১৮ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জন আফগান নাগরিক এবং নিহতরা পাকিস্তানবিরোধী সশস্ত্র সংগঠন বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল। এ বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অতিরিক্ত সচিব শফকাত আলী খান কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী একটি করুণ পরিসংখ্যান দেন। তিনি বলেন, গত এক বছরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে পাকিস্তানের ৩৮৩ জন কর্মকর্তা ও সৈন্য নিহত হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এ সময়ে প্রায় ৯২৫ জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে, যাঁদের অনেকে টিটিপির সদস্য। তিনি জানান, টিটিপি সরাসরি পাকিস্তান ও পাকিস্তানের নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং তারা আফগানিস্তানে আশ্রয় পাচ্ছে।

এ বক্তব্যে প্রচ- দ্বৈততা ফুটে ওঠে। কারণ, অতীতে পাকিস্তানই মার্কিন বাহিনী ও আগের আফগান সরকারকে উৎখাত করতে আফগান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে এসেছে। এসবেরই ফলে ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানে আবার ক্ষমতায় আসে। কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন দৃশ্যপট বদলে গেছে।