ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিশ্বে বাড়ছে সাংবাদিকের নিরাপত্তা ঝুঁকি

পক্ষে গেলে শুভকামনা, বিপক্ষে গেলে হুমকি

আরিয়ান স্ট্যালিন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ০১:২৩ এএম

৬২ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইজ্জেদ্দিন আতিয়ে আল-মাসরি তার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা তার ১৫ বছর বয়সী ভাগ্নে আহমেদ হোসাম আল-মাসরির কাছে তুলে ধরছেন, যিনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছিলেন।

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মোয়াজ আবু তাহা (বামে), ফটোসাংবাদিক হুসাম আল-মাসরি, রয়টার্সের ঠিকাদার, (সি) এবং আল-জাজিরার ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ সালামা (ডানে) -এর মৃতদেহের জন্য মানুষ শোক প্রকাশ করছে, যারা ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।

গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে যে ২৫শে আগস্ট দক্ষিণে নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত কমপক্ষে ২০ জনের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক ।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েল ২৪৬ জন সাংবাদিক হত্যা ।

২০২৪ সালে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে আফগানিস্তান, বারকিনা ফাসো এবং মিয়ানমারে।

বিশ্বে ৩৬১ সাংবাদিক কারাবন্দি, বাংলাদেশে চারজন: সিপিজের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন

ফিলিস্তিনে সাংবাদিক হত্যা, ২০ বছরেও ইসরায়েলের কোন জবাবদিহিতা নেই: জাতিসংঘ

গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ, ১৬ ধাপ উন্নতি

মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তান। গত বুধবার সাবেক দুই সম্পাদককে পাঁচ বছরের কারাদ- দিয়েছে। সাংবাদিক ঝুমার্ট দুলাতোভ ও আলেকজান্ডার আলেকজান্দ্রভকে ‘মিথ্যা তথ্য ছড়ানো তথা গুজব এবং জনশৃঙ্খলা নষ্ট করার’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। গত বুধবার এই আদেশ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সাংবাদিকদের আইনজীবী অভিযোগগুলোকে বানোয়াট ও অন্যায় বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং স্বাধীন মিডিয়াকে নীরব করার প্রচেষ্টার অংশ। ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে নিরাপত্তা বাহিনী ক্লুপের বর্তমান ও সাবেক কর্মচারীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ডুলাতোভ ও আলেকজান্দ্রভকে আটক করে। এ সময় তাদের সরঞ্জামও জব্দ করা হয়। নিখুঁত সংবাদ সংগ্রহের কাজটি সহজ কোনো বিষয় নয়। ঘটনার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আসল সত্যকে বের করে আনতে হয় নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশল দিয়ে। এ ধরনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব চলে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখিয়ে এ ধরনের কাজ করতে হয়। যারা এই কাজগুলো করেন, সংবাদ মাধ্যমে তারা পরিগণিত হন দাপুটে সাংবাদিক হিসেবে।

নেপালে জেন-জি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। সংবাদমাধ্যম কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অপরাধী গোষ্ঠী সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়, সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে ভাঙচুর করে ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে কান্তিপুর ডেইলি, কান্তিপুর এফএম ও কান্তিপুর টিভির কার্যালয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়। অগ্নিকা-ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্নপূর্ণ ডেইলি ও এপি১ টিভির ভবন।

ভারতকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র’ উল্লেখ করলেও দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী ডানপন্থার মূর্ত প্রতীক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনাধীন” দেশটিতে “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, গণমাধ্যমের মালিকানা কেন্দ্রীভূত হওয়া এবং রাজনীতিকরণের ফলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকটে পড়েছে”। প্রতি বছর ভারতে গড়ে দুই থেকে তিন জন সাংবাদিক তাদের কাজের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। দেশটিকে গণমাধ্যমের জন্য ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’ বলে উল্লেখ করেছে আরএসএফ। সূচকে ভারত বিষয়ক পর্যবেক্ষণের অংশে বলা হয়েছে, “ভারতীয় সমাজের বিশাল বৈচিত্র্য গণমাধ্যমের দৃশ্যপটে প্রতিফলিত হয় না। সাংবাদিকতা পেশা, বিশেষ করে পরিচালক পদে এখনো উচ্চ বর্ণের হিন্দু পুরুষদের অধিকারে রয়ে গেছে।” উদাহরণ হিসাবে সন্ধ্যার প্রধান টক শো-তে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১৫ শতাংশেরও কম। আরএসএফ আরো বলেছে, “হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ক্ষমতায় উত্থান ঘটেছে। বেশিরভাগ টিভি, বিশেষ করে হিন্দিতে, তাদের সম্প্রচারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মীয় সংবাদের জন্য ব্যয় করে, কখনো কখনো প্রকাশ্যে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা প্রচার করে।”তবে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বাইরে বিপরীত উদাহরণও তুলে ধরেছে আরএসএফ। খবর লহরিয়া নামের সংবাদমাধ্যমের উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে গ্রামীণ এলাকার নারী সাংবাদিক এবং জাতিগত বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত।

যেসব দেশে স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে এবং পরে আবার ফিরে এসেছে – সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আর আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যায়নি। হংকংয়ে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য হুমকি হয়ে এসেছে নতুন নিরাপত্তা আইন। মিয়ানমারে বিভিন্ন প্রকাশনার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। মালয়েশিয়ায় সরকারের সমালোচনা করায় সাংবাদিকদের হয়রানি ও কারাবন্দী করা হয়েছে। ফিলিপাইনের শ্রদ্ধেয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক মারিয়া রেসাকে দুই বছরে ১০ বার বন্দী করা হয়েছে এবং বিতর্কিত আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে “সাইবার মানহানির” অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্বের সবচে বড় গণতন্ত্র ভারতে, মোদি সরকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করেছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বাংলাদেশ বিষয়ক অংশে বলা হয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে গণমাধ্যম তীব্র স্বাধীনতার সংকটে ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবাদলে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বাংলাদেশ বিষয়ক অংশে।  আইডিইএর নিয়মিত বার্ষিক প্রকাশনা গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি রিপোর্টের ২০২৫ সংস্করণে ১৭৪টি দেশের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী নাটকীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ। ফলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুরবস্থায় রয়েছে। স্টকহোমভিত্তিক থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (আইডিইএ) এক পর্যবেক্ষণে এমন বক্তব্য উঠে এসেছে। আইডিইএর নিয়মিত বার্ষিক প্রকাশনা গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি রিপোর্টের ২০২৫ সংস্করণে ১৭৪টি দেশের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, ১৯৭৫ সালে এ প্রতিবেদন প্রকাশ শুরুর পর থেকে বর্তমানেই সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এর কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের ক্রমাবণতিকে দায়ী করছে আইইডিএ। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিশ্বের ৯৪টি দেশে গণতন্ত্রের অবনতি ঘটেছে। অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশ।  এ বিষয়ে থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব কেভিন কাসাস-জামোরা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপীগণতন্ত্র এখন বড় এক ঝড়ের মুখে। ব্যাপক আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পুনরুত্থান ঘটছে স্বৈরশাসনের।

এর সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তাও। এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হলে গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে নির্বাচন ও আইনের শাসনের মতো গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদানগুলোর সুরক্ষা দিতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কাঠামোর মধ্যেও গভীর সংস্কার আনতে হবে, যাতে তা ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা ও সম্মিলিতভাবে সবার সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে।’ পাকিস্তানে মুক্ত গণমাধ্যমের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে নির্বাচনের দিনগুলোতে মূলধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর চালানো বিধিনিষেধের বিষয়টি নিয়ে জোর দিয়েছে সংগঠনগুলো। ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সাংবিধানিক ও আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এডিটরস অ্যান্ড নিউজ ডিরেক্টরস (এইএমইএনডি) ।

এক বিবৃতিতে এইএমইএনডি বলেছে, পাকিস্তানে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কারণ টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, সম্প্রচার বন্ধ করা হচ্ছে, সাংবাদিকদের ওপর চাপ দিচ্ছে এবং অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করে অবৈধ দাবি করছে।

আইইডিএর হিসাবে, ২০২৪ সালে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে আফগানিস্তান, বারকিনা ফাসো এবং মিয়ানমারে। গৃহযুদ্ধ, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশগুলো এখন ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর পর সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল সমালোচনামূলক সংবাদমাধ্যমকে বারবার টার্গেট করেছেন। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে মানহানির মামলাকে বারবার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। পরে চলতি বছরের শুরুর দিকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। আবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটের সমস্যাও মোকাবেলা করতে হচ্ছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমকে। নিউজিল্যান্ডে সংকট তৈরি হয়েছে গণমাধ্যমের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে। সেখানে পাঁচজন নিয়োগকর্তার মধ্যে মাত্র একজনের অধীনেই চার-পঞ্চমাংশ সাংবাদিক কাজ করছেন। ফিলিস্তিনে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ২০০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আর ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করে রেখেছে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ উভয়েই ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে আল জাজিরাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং কিছু ঘটনার কভারেজ নিয়ে টানাপড়েনের কারণে আল জাজিরার কার্যক্রম স্থগিত করেছে।’মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় ২০২১ সালের পর থেকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে চিলি। সাংবাদিক এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ থেকে করা এক খসড়া আইন এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

২০২৪ সালে ১৮টি দেশের ১২৪ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) বুধবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। ২০২৪ সালে বিশ্বের রেকর্ডসংখ্যক সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। সিপিজের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ২০২৪ সালে ১৮টি দেশের ১২৪ জন সাংবাদিক হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশই গাজায়। সিপিজে জানায়, তারা ৩৬ বছর ধরে সাংবাদিক হত্যার তথ্য রাখছে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।

সিপিজে জানায়, গত বছর গাজায় ৮৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আইডিইএর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক গণতন্ত্রের প্রধানতম সমর্থক হিসেবে দেখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু দেশটি এ বছর থেকে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক সহায়তায় কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং আর্থিক সহায়তা— দুটোই উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রায়ন প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিয়েছে। বিগত ছয় মাসেরও কম সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতীকী মর্যাদা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। দেশটি এখন ক্রমশ নির্বাহী ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং গণতন্ত্রপন্থী আশাবাদীদের চেয়ে পপুলিস্ট নেতাদেরই বেশি উৎসাহ জোগাচ্ছে।’সংস্থাটি ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমবারের মতো ‘পিছিয়ে পড়া’ গণতন্ত্রের তালিকায় যুক্ত করে। ২০১৯ সাল থেকেই সেখানে ‘দৃশ্যমান অবনতি’ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছে আইডিইএ।

বিশ্বে ৩৬১ সাংবাদিক কারাবন্দি, বাংলাদেশে চারজন: সিপিজের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন

সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ২০২৪ সালের জেল শুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৩৬১ জন সাংবাদিক কারারুদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটক হয়েছেন চীনে। দেশটিতে ৫০ জনকে আটক করা হয়। এর পরই আছে ইসরায়েল। দেশটিতে আটক আছেন ৪৩ জন। ইসরায়েলের আটক করা সব সাংবাদিকই ফিলিস্তিনি। কারাবন্দি সাংবাদিকদের সংখ্যার ভিত্তিতে সিপিজের করা র্যা ঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। তিন কারাবন্দি সাংবাদিক নিয়ে প্রতিবেশী ভারত আছে ১৫তম স্থানে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে কারারুদ্ধ তিনজনের মধ্যে দু’জন ২০২৩ সালে কাশ্মির থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত বছর বাংলাদেশ ও ভারতের তুলনায় আফগানিস্তানে কম সংখ্যক সাংবাদিক কারাবন্দি হয়েছেন। দেশটিতে দু’জন সাংবাদিক কারারুদ্ধ হন।

২০২৪ সালে গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মধ্যে একজনকে মৃত্যুদ- ও ১০ জনকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫৪ জন সাংবাদিককে ১০ বছরের বেশি ও ৫৫ জনকে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক প্রতিবেদকরাই সবচেয়ে বেশি আটক হয়েছেন। ৩৫ সাংবাদিক আটক করে তালিকায় তৃতীয় স্থানে মিয়ানমার, ৩১ জনকে আটক করে চতুর্থ স্থানে বেলারুশ ও ৩০ সাংবাদিকে কারাগারে নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া।

বিশ্বজুড়ে ২০২২ ও ২০২৩ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৬২ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। আগের দুই বছরের তুলনায় যা বেশি। প্রকাশিত ইউনেসকোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

চলতি বছরের প্থম ছয় মাসে বাংলাদেশে অন্তত ১৯৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ছয় সাংবাদিক : আইন ও সালিশ কেন্দ্র

সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা সাংবাদিক নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ১৯৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে হত্যার হুমকি পেয়েছেন ৮ জন। এই সময়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলার আসামি হয়েছেন ৪৪ জন সাংবাদিক। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ছয় সাংবাদিক। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা ডয়েসে ভেলেকে বলেন, জুলাই মাসে অন্তত এক ডজন সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগামী রোববার তারা এসব তথ্য হালনাগাদ করবেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার সময় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২১তম। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৫ বছরে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ৪৪ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সূচকে এবারো বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিস্থিতি বেশ গুরুতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৫ সালের সূচক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ৩৩ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। ২০২৪ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। নেপাল (৯০তম), শ্রীলংকা (১৩৯তম) ও মালদ্বীপ (১০৪তম) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।গণমাধ্যম হলো একটা জাতির ভিত্তি। আর এ ভিত্তি মজবুত রাখতে প্রয়োজন এর নিরপেক্ষতা, সত্য প্রকাশের স্বাধীনতা। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকের মূল বৈশিষ্ট্য হলো নীতি ও নৈতিকতা।

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনমন; ৫০ বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সর্বনিম্ন 

সাম্প্রতিক একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে যে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স (ওউঊঅ)-এর ‘গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২৫’ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৭৪টি দেশের মধ্যে ৯৪টিতে গণতান্ত্রিক সূচকের অন্তত একটি ক্ষেত্রে অবনমন ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানুষের অধিকার এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা হ্রাস পাওয়ায় অনেক দেশে স্বৈরাচারী শাসন জেঁকে বসেছে। ওউঊঅ-এর মহাসচিব কেভিন কাসাস-জামোরা জানান, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, বিচার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ এবং কার্যকর সংসদের অভাব গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক হুমকি।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ধস

২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে গত ৫০ বছরের মধ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সবচেয়ে বেশি অবনমবন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কেভেন। বিশ্বের মোট ৪৩টি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের ১৫টি এবং ইউরোপের ১৫টি দেশ। এ ছাড়া এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো। প্রতিবেদনে বলা হয়, চারটি সূচকের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৩৫ এবং অধিকারের ক্ষেত্রে ৩২। প্রতিবেদনটিতে অবশ্য গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগের সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনে সাংবাদিক হত্যা, ২০ বছরেও ইসরায়েলের কোন জবাবদিহিতা নেই: জাতিসংঘ

জাতিসংঘের স্বাধীন মতামত ও প্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক আইরিন খান বলেন, ‘ইসরায়েলকে কখনও ফিলিস্তিনে সাংবাদিক হত্যার জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। এই হত্যাকা- ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে।’জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ফিলিস্তিন অঞ্চল সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় আইরিন খান বলেন, ইসরায়েলি সেনাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি একটি ‘অনুকূল পরিবেশ’ সৃষ্টি করেছে, যেখানে তারা তাদের মনমতো সব কিছু করতে পারে। সত্য প্রকাশে একমাত্র যাদের সাহস আছে সেই সাংবাদিকদের হত্যা করার সাহস তারা কোথায় পাচ্ছে। খবর আল জাজিরার। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনে সাংবাদিক হত্যায় একটি ভয়ানক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ, ১৬ ধাপ উন্নতি

বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বছরের তুলনায় ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সূচকে এবারও বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিস্থিতি ‘বেশ গুরুতর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।আজ শুক্রবার বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) তাদের ২০২৫ সালের সূচক প্রকাশ করেছে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম, স্কোর ৩৩ দশমিক সাত এক। ২০২৪ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম, এর আগের বছর ছিল ১৬৩তম।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ছয় ধাপ পেছাল পাকিস্তান

বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গেল বছরের তুলনায় ছয় ধাপ পিছিয়েছে পাকিস্তান। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে এবার পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৮তম। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) সম্প্রতি তাদের ২০২৫ সালের সূচক প্রকাশ করেছে। মোট পাঁচটি (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা ও আইন) ক্যাটাগরিতে সূচক করা হয়েছে।