খালেদ আল-সাইদি। ইসরায়েলি বর্বতায় এক পা হারিয়েছেন ফিলিস্তিনের গাজার আল আকসা হাসপাতালে চিকিৎসক। এ জন্য তাকে লম্বা সময় ধরে কাটাতে হয় হাসপাতালের বেডে। শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে বর্তমানে এক পা নিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তিনি। গাজার আল আকসা হাসপাতালে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কাজ করছেন ডা. খালেদ আল-সাইদি। তিনি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ছয় মাস আগে ইসরায়েলি হামলায় এক পা হারিয়েছেন ডা. খালেদ আল-সাইদি। ফলে ডা. খালেদ আল-সাইদি নিজেই রোগী হন। কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তিনি। ডা. খালেদ আল-সাইদি আলজাজিরাকে জানান, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) হামলার পর এক পা ক্ষতবিক্ষত হয়। সেই সময়ে আমার শরীরে ডায়াবেটিস অনেক বেশি ছিল। বাধ্য হয়ে পা কেটে ফেলতে হয়। তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা মানবিক পেশা। কাজই হলো মানুষকে সেবা দেওয়া। নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’ জানা গেছে, ইসরায়েলি হামলার অন্যতম লক্ষ্য গাজার শিশুরা। প্রতিদিনই আল আকসা হাসপাতালে শিশুদের ভিড় থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বসে থাকবেন কীভাবে এ চিকিৎসক। তাই কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করে আবার উপস্থিত হাসপাতালে। লক্ষ্য একটাই, নিজ দেশের অসহায় শিশুদের চিকিৎসা করবেন। সেবা দিয়ে যাবেন মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত।
ইসরায়েলের হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭২৩ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ। গতকাল মঙ্গলবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আলজাজিরা অ্যারাবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুনির আল-বুরশের বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ৩৮টি হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যেখানে কমপক্ষে ১ হাজার ৭২৩ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, গাজা শহরের সেন্ট জন চক্ষু হাসপাতাল, আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতাল এবং শেখ হামাদ হাসপাতাল এখন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। তিনি সতর্ক করে বলেন, জ্বালানিসহ ত্রাণ সরবরাহের ওপর ইসরায়েলের অবরোধ ‘বড় বিপর্যয়’ ডেকে আনছে। যদি পেট্রল প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া হয় তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ক্ষুধায় অনাহারে থেকে অপুষ্টিতে ভুগে ৪৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার নতুন করে অনাহারে আরও চারজনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৩৫ জনে পৌঁছেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, আন্দোর্রা, মোনাকো। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিক্রিয়া হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলো এ স্বীকৃতির দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবমাননা, হত্যাকা- ও শত- সহস্র ফিলিস্তিনিকে ঘরছাড়া করার বিরুদ্ধে এটি একটি ক্ষুদ্র ও প্রতীকী পদক্ষেপ। তবে এর বাইরেও পদক্ষেপটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক রয়েছে।তবে পশ্চিমা দেশগুলোর ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক মুখপাত্র বলেন, এই স্বীকৃতি ‘হাস্যকর’। এটি ‘সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করবে’ বলে আরও উল্লেখ করেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এদিকে আল জাজিরাকে এক বিশ্লেষক বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ক্রমবর্ধমান প্রতিশোধের জন্য ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে আরও জমি অধিগ্রহণ করতে পারে অথবা বিদেশবিরোধী দলগুলোকে সমর্থন করতে পারে; যারা এ সিদ্ধান্তের বিরোধী।
উদাহরণস্বরূপ আদেল আবদেল গাফর আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু স্বীকৃতি দেওয়ার পদ্ধতি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ছিল। এরই মধ্যে দেশটির বিরোধীদলীয় নেত্রী সুসান লে বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে স্বীকৃতি ফিরিয়ে নিবেন।’
হামাস এবং তার মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ভাষণে আব্বাস বলেন, হামাস এবং তার মিত্রদের অবশ্যই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। আমরা চাই একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রÍ যেখানে সাধারণ নাগরিকদের কাছে কোনো অস্ত্র থাকবে না, পুরো রাষ্ট্র এক আইনের অধীনে চলবে এবং একটি বৈধ নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে।সৌদি আরব ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় দেশটি। সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধীনে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের শান্তি সম্মেলনে সৌদি আরব এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে। সম্মেলনটি সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন জোরদার করা।গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং মানবিক সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম প্রধান একাধিক দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, এই বৈঠকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের নেতা বা শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ফিলিস্তিনকে একের পর এক দেশ স্বীকৃতি দেওয়ায়, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।ফক্স নিউজের খবর অনুযায়ী, তারা এরইমধ্যে চিঠিটির খসড়া তৈরি করেছে, যা বর্তমানে কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আছে এবং এই সপ্তাহে ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।চিঠিতে হামাস জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তির বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা চেয়েছে।