জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে নিজ দেশের জন্য সংস্কার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল শারা। তিনি বলেন, ‘সাবেক শাসন পতনের মুহূর্ত থেকেই একটি সুস্পষ্ট কৌশলগত নীতিনির্ধারণ করি, যা তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছেÑ সুষম কূটনীতি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন।’ তিনি অঙ্গীকার করেন যে, সিরিয়া এখন ‘একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন, প্রতিষ্ঠান ও আইন নির্মাণের মধ্য দিয়ে নিজেকে পুনর্গঠন করছে, যেখানে কারো অধিকার বাদ যাবে না।’ নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার সকালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট। এক বছর আগেও আল শারা সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলভিত্তিক একটি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নেতা ছিলেন। ২০২৪ সালের শেষ দিকে তিনি দ্রুত সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে দামেস্কে আসাদ শাসন উৎখাত করেন। জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সিরিয়ান নেতা হিসেবে বক্তব্য দেন আল শারা, যে বিষয়টি নতুন সিরিয়ান সরকারের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
আল-শারা জানান, “ন্যায়বিচারের রূপান্তর প্রক্রিয়া এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের ভাগ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনসভা কাউন্সিল গঠনের প্রস্তুতিও চলছে। বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠিত হয়েছে, পূর্বের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং অংশগ্রহণ জোরদার করতে একটি ‘যোগ্যতাভিত্তিক সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।” জাতিসংঘে বিশ্বদরবারের উদ্দেশে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুরোপুরি পুনঃস্থাপিত হয়েছে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নতুন অংশীদারত্ব গড়ে উঠেছেÑ যার প্রমাণ আংশিকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। ‘বড় বড় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইতিমধ্যে সিরিয়ার বাজারে প্রবেশ করেছে, বিনিয়োগ ও পুনর্গঠনে অবদান রাখছে’, তিনি বলেন।
একই সঙ্গে তিনি সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান, যাতে সেগুলো আর ‘সিরীয় জনগণকে শৃঙ্খলাবদ্ধ না রাখে।’ প্রেসিডেন্ট আল-শারা সিরিয়াকে অস্থিরতা থেকে পুনর্জাগরণের পথে অগ্রসরমাণ একটি দেশ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির এই ভূমি একটি আইনের শাসিত রাষ্ট্র হওয়ার যোগ্য।
যেখানে সবার সুরক্ষা থাকবে, অধিকার রক্ষা পাবে, স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে এবং অতীতের দুঃখ-কষ্ট পেছনে ফেলে জীবন বিকশিত হবে।’ তিনি জবাবদিহির অঙ্গীকার উল্লেখ করেন যে, সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে তথ্য-উপাত্ত যাচাই কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং জাতিসংঘের তদন্তকারীদের জন্য সিরিয়াকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছিÑ যারা রক্তপাতের জন্য দায়ী, সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ একই সঙ্গে তিনি সিরিয়ার ভূখ-ে চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা জানান, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং ১৯৭৪ সালের বাহিনী-বিচ্ছিন্নকরণ চুক্তি বাস্তবায়নে দামেস্কের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন