বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০২:২১ এএম

গাজার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০২:২১ এএম

গাজার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ

গাজায় প্রকাশ্যে মৃত্যুদ- কার্যকর করে নিজেদের ক্ষমতা পুনর্দখলের ইঙ্গিত দিয়েছে হামাস যোদ্ধারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরায়েলি বাহিনী সরে গেলেও মঙ্গলবারও সহিংসতা ও অস্থিরতা থামেনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। গত সোমবার রাতে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজা সিটির একটি জনসমাগমস্থলে সাত ব্যক্তিকে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে পিছন থেকে গুলি করে হত্যা করছে হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা। হামাসের এক সূত্র ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সংগঠনটির দাবি, নিহতরা ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিল। গাজার বাসিন্দারা জানান, গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় হামাস যোদ্ধারা টহল দিচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে ত্রাণবাহী ট্রাক চলাচল করছে। ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, কয়েক দিনে হামাস ও প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতির মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে আবার ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। ইসরায়েলি সেনাদের সরে যাওয়ার পর হামাস নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় অভিযানে নেমে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী ও মিলিশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত ও বহুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। হামাসের দাবি, গাজার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্ব তারা বহন করবে, কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সমর্পণ করতে অস্বীকার করছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় নতুন দ্বন্দ্ব ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজায় তাদের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে হামাসবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩৩ জনকে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। এই অভিযানে হামাসের ছয়জন সদস্যও প্রাণ হারিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, যদি হামাস তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজেদের নিরস্ত্র না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রয়োজনে সহিংসভাবে’ তাদের নিরস্ত্র করবে। তিনি আরও বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর হলেও ‘কাজ এখনো শেষ হয়নি’, কারণ হামাস এখনো সব মৃত বন্দির দেহ ফেরত দেয়নি, যেমনটি তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি হামাসকে বলেছি, ‘আপনারা অস্ত্র ছাড়বেন, তাই তো?’ তারা বলেছেন, ‘হ্যাঁ স্যার, আমরা অস্ত্র ছাড়ব।’ এটাই তারা জানিয়েছেন। তারা অস্ত্র ছাড়বে, না হলে আমরাই তাদের নিরস্ত্র করব।’ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েলে গতকাল বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনের এমন সব বলা হয়েছে।// ট্রাম্প পরে স্পষ্ট করেন, এটি সরাসরি হামাস নেতাদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কথা নয়, বরং তার ‘মানুষদের মাধ্যমে’ বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখানে তিনি ইঙ্গিত করেছেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনারের দিকে। গত সপ্তাহে উইটকফ ও কুশনার মিশরের শার্ম আল-শেখে হামাসের শীর্ষ আলোচক খালিল আল-হাইয়্যার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তারা আশ্বাস দেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকেও যুদ্ধবিরতির শর্ত মানতে বাধ্য করবে এবং গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া তদারক করবে।

অবরুদ্ধ গাজায় আটক থাকা জিম্মিদের হস্তান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবার চারজনের মরদেহ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দিয়েছে ভূখ-টির শাসকগোষ্ঠী হামাস। গত মঙ্গলবার  মধ্যরাতে (স্থানীয় সময়) আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের মাধ্যমে চার জিম্মির কফিন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নতুন এক জটিলতার কথা প্রকাশ করে। বাহিনীটি জানায়, চতুর্থ মরদেহটির সঙ্গে কোনো বন্দির মিল পাওয়া যায়নি। খবর বিবিসির। গাজা উপত্যকার সঙ্গে মিসরের রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

স্থগিত থাকা মানবিক সহায়তা প্রবাহও স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম কান। এর আগে, ইসরায়েল সরকার গতকাল থেকে নতুন করে কিছু নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সহায়তা সীমিত করা এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখা। তবে শেষ মুহূর্তে এসব সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইসরায়েলকে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার জেরে ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত হামাস যুদ্ধবিরতির পর থেকে ধীরে ধীরে তাদের সদস্যদের গাজার রাস্তায় ফিরিয়ে আনছে। তবে পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে-এমন আশঙ্কায় তারা সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছে। গাজার দুটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।

যুদ্ধ চলাকালীন হামাসের নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছিল বিভিন্ন গোষ্ঠী। গাজা সিটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, যুদ্ধবিরতির পর হামাস বাহিনী ৩৩ জনকে হত্যা করেছে। সংঘর্ষে হামাসেরও ছয়জন কর্মী নিহত হয়েছে। যদিও নিহত সবার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বা তারা ইসরায়েলের সমর্থন পাচ্ছিল কিনা–তা বলা হয়নি।এর পাশাপাশি, রাফাহ অঞ্চলে সক্রিয় হামাস-বিরোধী নেতা ইয়াসের আবু শাবাবের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। গাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, গাজা সিটির সংঘাতের বাইরেও হামাস আবু শাবাবের ‘ডান হাত’-কে হত্যা করেছে এবং আবু শাবাবকে হত্যার প্রচেষ্টা চলছে। হামাস তাকে ইসরায়েলের সহযোগী বলে অভিহিত করে, যদিও তিনি তা অস্বীকার করেন।সোমবার সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশধারী কয়েকজন বন্দুকধারী।

তাদের কয়েকজনের মাথায় হামাসের মতো সবুজ ফিতা বাঁধা ছিল। তারা রাস্তার ওপর হাঁটু গেড়ে বসা অন্তত সাতজন লোককে মেশিনগান দিয়ে গুলি করছে। এটি সোমবার গাজায় ধারণ করা। এ সময় উপস্থিত বেসামরিক দর্শকরা নিহতদের ‘সহযোগী’ বলে উল্লাস করছিল। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। গত মাসেও হামাস-নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের সাথে সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করেছিল।

সোমবার হামাস ইসরায়েল থেকে দুই বছর আগে আটক শেষ জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেয়। এসময় হামাসের কাসাম ব্রিগেড-এর সামরিক শাখার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল, যা গাজায় একটি স্থায়ী চুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জকে মনে করিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যান্য অনেক দেশ হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি জানাচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হামাস ফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘অস্থায়ীভাবে নিরাপত্তা রক্ষার অনুমোদন’ পাওয়ার পর গাজা উপত্যকায় কঠোর অভিযানে ডজনখানেক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করে।রাফাহ এলাকার ইয়াসের আবু শাবাব হামাসবিরোধী সবচেয়ে প্রভাবশালী গোত্রনেতা। তিনি দক্ষিণ গাজার সেই অংশে কার্যক্রম চালান, যা এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আবু শাবাবের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি আকর্ষণীয় বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শত শত যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছেন। হামাস অভিযোগ করেছে, আবু শাবাবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এই অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। তার গোত্র মূলত রাফাহর পূর্বাঞ্চলকেন্দ্রিক এক বেদুইন সম্প্রদায়। পুরো গোত্র তার কর্মকা-ে একমত কি না, তা স্পষ্ট নয়। আবু শাবাবের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৪০০ বলে ধারণা করা হয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!