বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ০১:৩৬ এএম

জাতিসংঘে বিস্ফোরক প্রতিবেদন

‘গাজা গণহত্যা: এক যৌথ অপরাধ’

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ০১:৩৬ এএম

‘গাজা গণহত্যা: এক যৌথ অপরাধ’

দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পেশ করা এক নতুন প্রতিবেদনে বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেছেন। এতে তিনি জানানÑ পশ্চিমা শক্তি, কিছু আরব রাষ্ট্রসহ ষাটেরও বেশি দেশ গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যার যন্ত্র’ সচল রাখতে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের ডেসমন্ড অ্যান্ড লিয়া টুটু লেগাসি ফাউন্ডেশন থেকে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদে তার ২৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।  তার এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘গাজা গণহত্যা: এক যৌথ অপরাধ’। খবর প্রেসটিভির। আলবানিজ বলেন, এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে কীভাবে এসব দেশ চোখ বুজে থেকেছে, যখন গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে বোমা হামলা, অনাহার ও অবরোধের মাধ্যমে ধ্বংস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন ও বার্লিন থেকে শুরু করে লন্ডন এবং তারও বাইরে পর্যন্ত সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক যোগসাজশের এক বিশাল জাল বিস্তৃত।’  দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি একে ‘বর্ণবৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের প্রতীকী কেন্দ্র থেকে দেওয়া এক সাক্ষ্য’ বলে বর্ণনা করেন।

আলবানিজ বলেন, বিশ্বশক্তিগুলো ‘ইসরায়েলের সামরিকায়িত বর্ণবৈষম্যের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, রক্ষা করেছে এবং শক্তিশালী করেছে, যার ফলাফল হলো এই গণহত্যা, যা ফিলিস্তিনের আদিবাসী জনগণের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অপরাধ।’ জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত বলেন, সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর পাঠানো অস্ত্র, প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ইসরায়েলকে গাজায় ‘শ্বাসরুদ্ধ, অনাহারে নিপতিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত’ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। ফ্রান্সেসকা আলবানিজের এই প্রতিবেদনে ইসরায়েলের যুদ্ধ অর্থনীতির কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশটি ইসরায়েলের অস্ত্র আমদানির দুই-তৃতীয়াংশ জোগান দেয় এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সাতবার ভেটো প্রয়োগ করে ইসরায়েলকে দায়মুক্তি দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জার্মানি, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যদিও ‘গণহত্যার প্রমাণ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছিল’। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিচারিতারও সমালোচনা করে বলেন, ‘ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যে তারা এখনো প্রধান অংশীদারÑ এটি মানবিক সহায়তাকে অস্ত্রে পরিণত করার এক উদাহরণ।’ আলবানিজ উল্লেখ করেন, গাজার ওপর প্রায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসর য়েল যে নৃশংসতা চালিয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সেটিকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।

এই প্রতিবেদনে আরব দেশগুলোকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। আলবানিজ বলেন, ‘গাজা জ¦লতে থাকলেও’ কিছু আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। তিনি বিশেষভাবে মিশরের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশটি ‘ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা ও জ¦ালানি সহযোগিতা বজায় রাখছে এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রেখেছে’, যা গাজার শেষ মানবিক জীবনরেখাও চেপে ধরছে।

অস্ত্র, বাণিজ্য ও কূটনীতির বাইরেও আলবানিজ বলেন, ‘জাতিসংঘ ও বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোর দশকের পর দশকের নৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ এই গণহত্যাকে বাস্তব সময়ে ঘটতে দিয়েছে, এমনকি সরাসরি সম্প্রচারিত হলেও তা থামাতে বিশ্ব ব্যর্থ। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ব এখন এমন এক সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে, যা আইনের শাসনের পতন ও ন্যায়ের পুনর্জাগরণের মধ্যবর্তী এক ছুরির ধারালো প্রান্ত।’ আলবানিজ বলেন, ‘পুনর্জাগরণ তখনই সম্ভব, যখন যোগসাজশের মুখোমুখি হওয়া হবে, দায় স্বীকার করা হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

এদিকে আলবানিজের বক্তব্যের পরই জাতিসংঘ অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কারণ ওই সময় ইসরায়েলি দূত ড্যানি দানন ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়ে তাকে ‘দুষ্ট ডাইনি’ বলে গালিগালাজ করেন। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা তার এই আক্রমণকে ‘অশোভন ও লজ্জাজনক’ বলে নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি দেখায় যে, ‘স্বাধীন জাতিসংঘভুক্ত কণ্ঠগুলো স্তব্ধ করার মরিয়া চেষ্টা চলছে’। এদিকে মৌখিক আক্রমণের জবাবে অবিচল আলবানিজ বলেন, ‘যদি আপনারা আমার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হিসেবে জাদুবিদ্যার কথা বলেন, আমি তা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু যদি সত্যিই আমার কোনো মন্ত্রশক্তি থাকত, আমি তা ব্যবহার করতাম আপনাদের অপরাধ থামাতে এবং দায়ীদের শাস্তি দিতে।’

তিনি বক্তৃতার শেষে রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সব সামরিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্থগিত করার আহ্বান জানান, বিশেষ করে দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য পণ্য আদান-প্রদান, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। আলবানিজ বলেন, ‘সময় এসেছেÑ কিছু মানুষের নয় বরং সবার মর্যাদা ও অধিকারের ওপর ভিত্তি করে এক জীবন্ত কাঠামো গড়ে তোলার।’ এদিকে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা তার এই প্রতিবেদনকে গাজার যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সবচেয়ে কঠোর ও স্পষ্ট অভিযোগপত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ৩৫ শিশুসহ ১০৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ অবস্থায় বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের লাগাম টানতে আরব রাষ্ট্রগুলোর উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়া। লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রভাষক রব গেইস্ট পিনফোল্ড এ কথা বলেছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) ব্রিটিশ বিশ্লেষক বলেন, ট্রাম্প অন্যান্য বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার আগে তুরস্ক ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মতো মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিগুলোকে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে ফিরে যেতে এবং তা মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। পিনফোল্ড আল জাজিরাকে বলেন, এখানেই আঞ্চলিক শক্তিগুলোর বলা উচিত, তোমাকে (যুক্তরাষ্ট্রকে) ইসরায়েলের লাগাম টানতে হবে। ইসরায়েল নতুন করে আক্রমণের মাধ্যমে পুনরায় গণহত্যার এই ধারা বজায় রাখতে চাইবে।

ইতিমধ্যে তারা গাজার ৫০ শতাংশেরও বেশি সরাসরি দখল করে আছেÑ বাকি অংশ একটি ‘অবরুদ্ধ’ অঞ্চল, যেখানে ইসরায়েলি অবরোধ চলছেই। রব গেইস্ট পিনফোল্ড বলেন, ‘ইসরায়েল ঠিক এটাই চায়Ñ এই স্থিতাবস্থা, যা অস্থায়ী বলে মনে করা হয়, তা স্থায়ী হয়ে উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘এটি দ্বন্দ্ব সমাধানের কোনো উপায় নয়। এটি দ্বন্দ্ব এবং অভিযোগকে স্থায়ী করার একটি উপায়, যাতে আরও দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে ওঠে।’ প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল ও হামাস একটি শান্তি পরিকল্পনার চুক্তিতে পৌঁছেছে। প্রথম পর্যায়ের মধ্যে সমস্ত বন্দির মুক্তি এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি রেখার বাইরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১০ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। গাজা অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়। গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!