শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০৩:০৬ এএম

ইসরায়েলি আগ্রাসন

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও অনিশ্চয়তা

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০৩:০৬ এএম

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও অনিশ্চয়তা

যুদ্ধের ধাক্কায় গাজার আল-আকসা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ঘরছাড়া। ক্যাম্পাসেই তাঁবুর নিচে আশ্রয় নিয়ে অনলাইনে চলছে পড়াশোনা। স্বপ্নভঙ্গ, দুর্ভোগ ও যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে করুণ বাস্তবতার মুখে ফিলিস্তিনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরাইলি আগ্রাসনে করুণ বাস্তবতার মুখোমুখি গাজা উপত্যকার হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এমন কঠিন সময়েও যাতে স্বপ্ন ভেঙে না যায়, তার জন্য অনলাইন ক্লাস হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসা। তবে এতে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় বাস্তুচ্যুত শিক্ষার্থীরা। অনলাইনের চেয়ে ক্লাসরুমে সশরীরে পাঠদান বেশি কর্যকরী বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও একটি স্বস্তির সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দেখা পাননি গাজাবাসী। শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞের নিষ্ঠুর খেলায় নিদারুণ কষ্টে দিন-রাত কাটছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের। বাস্তুচ্যুত হওয়ায় থমকে গেছে গাজার আল-আকসা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নও। তবে অস্তিত্বের প্রশ্নে; কঠিন এই জীবনযুদ্ধে হার মানতে নারাজ অনেক শিক্ষার্থী। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে বিশ^বিদ্যালটির ক্যাম্পাসে থাকা শত শত তাঁবুতে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেক তরুণ-তরুণী। তাদের একজন ২০ বছর বয়সি ছাত্রী আল-সাঈদি। বাঁচার সংগ্রামের মধ্যে পড়াশোনাও অব্যাহত রাখতে হচ্ছে শিক্ষার্থী আল-সাঈদিকে। এরকম ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর একমাত্র ভরসা এখন অনলাইন ক্লাস। তবে বিশ^বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে সশরীরে উপস্থিত হয়ে পড়াশোনা করতে না পারার আক্ষেপ আল-সাঈদির মতো শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করা, সহপাঠীদের সঙ্গে বসে ক্লাস করা। আমার অনলাইনে ক্লাস করতে ভালো লাগে না। আমি জীবনে যেভাবে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, তা করতে পারছি না।’ ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রভাবে স্বপ্নভঙ্গ, দুর্ভোগ ও করুণ বাস্তবতার মুখোমুখি গাজা উপত্যকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমে অনেক ঘাটতি থেকে যায় বলে মনে করছেন আল-আকসা বিশ^বিদ্যালয়ের এই শিক্ষাগুরু। আল-আকসা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফয়েজ আবু হাজার বলেন, ‘এটা সত্যি যে অনলাইনে কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞানী ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হলে সশরীরে পাঠদানের বিকল্প নেই।’ ধ্বংসস্তূপের নগরীতে বাসস্থান, খাদ্য, ওষুধ ও জ¦ালানিসংকট থেকে উত্তরণে চলমান লড়াইয়ের পাশাপাশি; শিক্ষার্থীদের শিক্ষাব্যবস্থার সংকট মোকাবিলায়ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বর্বরতায় কয়েক দশকের প্রবৃদ্ধিতে ধস নামায় গাজা উপত্যকার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তাই এখন একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে।

গাজাবাসী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যে স্বস্তি আশা করেছিল, তা আসেনি। ‘অস্ত্রবিরতি’ ঘোষণার পরপরই ইসরায়েলি বাহিনী আবার গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে। তখন থেকে তা আর থামেনি। গাজার সরকারি মিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল ৪৪ দিনে প্রায় ৫০০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যাতে ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। ২৯ অক্টোবর ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, সেদিন ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ১০৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ৫২ জন ছিল শিশু। গত বৃহস্পতিবার গাজা সিটির কাছে জেইতুন এলাকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় একটি ভবনে আশ্রয় নেওয়া পুরো পরিবারসহ ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। কেবল বোমাবর্ষণই চলছে না; তাদের ক্ষুধামুক্তিও ঘটেনি। ‘যুদ্ধবিরতি’ চুক্তির শর্ত অনুসারে প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ট্রাক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। অথচ ইসরায়েল তা মানেনি। আলজাজিরার সাংবাদিক হিন্দ আর-খাউদারির প্রতিবেদন অনুসারে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী আইওএফ কেবল ১৫০টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। এমনকি তারা পুষ্টিকর খাবারসহ মাংস, দুধ, সবজির পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং আশ্রয়ের তাঁবু প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে।

ইসরায়েলের সহিংসতা পশ্চিম তীরে দ্রুত বেড়ে চলেছে। গাজা যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের হাতে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আগের তুলনায় তাদের হামলার পরিমাণও বেড়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের এরিয়া সি, যেখানে ফিলিস্তিনিদের সামান্য প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও নেই, সেখানে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেসব ফিলিস্তিনি এখন বাস্তুচ্যুত। অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমেও ৫০০ মানুষ গৃহহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, সেসব বাড়ি নির্মাণের সময় অনুমতি নেওয়া হয়নি, তাই ভেঙে দেওয়া হয়েছে।  অধিকৃত পশ্চিম তীরে এসব কর্মকা-ের জন্য ইসরায়েলকে এখন পর্যন্ত সেভাবে জবাবদিহি করতে হয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান এবং বেসামরিক মানুষের চলমান বাস্তুচ্যুতি নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেমের নির্বাহী পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীনতা দেখছি। গাজায় যে ভয়াবহ সহিংসতা চলছে, ইসরায়েল তার চেয়েও বেশি কিছু করতে সক্ষম। পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে এবং আরও খারাপ হবে। কারণ ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ বা থামানোর জন্য অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, ইসরায়েলের দায়মুক্তির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।’

ইসরায়েলি সরকারের বহু শীর্ষ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, তাদের লক্ষ্য পশ্চিম তীর দখল করে নেওয়া। গত অক্টোবরে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে একটি প্রাথমিক বিল অনুমোদন পেয়েছে। ওই বিলের মাধ্যমে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের বসতি সম্প্রসারণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ নিয়ে একাধিক দেশ আপত্তিও জানিয়েছে। ইসরায়েলের কট্টরপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিচ বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন তিনি কী চান। আল-জাজিরার খবর বলছে, স্মটরিচ নিজেও অবৈধ বসতিতে থাকেন। গত বছর রিলিজিয়াস জাওনিজম পার্টির এক বৈঠকে তিনি জানান, পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানাতে ‘মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা তৈরি করছেন’ তারা। প্রসঙ্গত, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বর্তমানে সাত লাখের বেশি ইসরায়েলি অবৈধ বসতিতে বসবাস করছে। সূত্র: আল-জাজিরা

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!