শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:১৯ এএম

পশ্চিমাদের বাধা পেরিয়ে ভারতে পুতিন

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:১৯ এএম

পশ্চিমাদের বাধা পেরিয়ে ভারতে পুতিন

পুতিনের আগমন ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো দিল্লি। নিরাপত্তায় কাজ করছে ভারত-রাশিয়ার বিশেষ টিম। আগেই ভারতে পৌঁছান বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত রুশ নিরাপত্তারক্ষীরা, রয়েছেন ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের শীর্ষ কমান্ডো- এনএসজির সদস্যরাও। এছাড়াও থাকছে এআই প্রযুক্তি ও ড্রোনের ব্যবহার। সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় স্নাইপাররাও সজাগ দৃষ্টিতে রয়েছেন, বসানো হয়েছে জ্যামারও। এমনকি ভারতের কোনো গাড়িতে চড়বেন না পুতিন, তাই আগেই মস্কো থেকে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র লিম্যুজিন কার। রুশ প্রেসিডেন্টের কনভয় নজরে রাখতে রয়েছে স্পেশালাইজড ড্রোন ও এআই প্রযুক্তির ব্যবহারও। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার ওপর মার্কিন ও পাশ্চিমা চাপ অব্যাহত। হুমকি উপেক্ষা করে মস্কোর কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝাও বইতে হচ্ছে ভারতকে। কোনো কিছুই দিল্লি-মস্কো সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনি। উল্টো আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পুতিন-মোদি সম্পর্ক।

 ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। দুই দিনের সরকারি সফরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে পৌঁছান রুশ প্রেসিডেন্ট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দিল্লিতে অবতরণের পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ব্যক্তিগত নৈশভোজে যোগ দেন পুতিন। গত বছর জুলাইয়ে মোদির মস্কো সফরের সময় পুতিন যে বিশেষ আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন, এবার ভারত সেই সৌজন্য ফেরত দিচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক এই নৈশভোজ দুই নেতার মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

পুতিনের সফরসূচি অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এরপর তিনি রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ দিনই সফরের মূল আয়োজনে অংশ নিতে হায়দরাবাদ হাউসে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত হবেন। সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট পুতিন তাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া করবেন।

মার্কিন শুল্ক ঝড় ও নিষেধাজ্ঞার মাঝে পুতিনের দিল্লি সফরকে বেশ গুরুতপূর্ণ হিসেবে দেখেছেন বিশ্লেষকরা। মোদি ও পুতিনের মধ্যে হতে যাওয়া বৈঠকে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরালো হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অমিতাভ সিং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য যেসব ভারতীয় পণ্যের চাহিদা ছিল সেগুলো যদি রাশিয়ায় থাকে, তা হলে তাদের কাছে কেন তা বিক্রি শুরু করতে পারি না? ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।’

ভূরাজনীতি হলো ‘জিওগ্রাফি’ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া, আর কূটনীতি হলো সেই ভৌগোলিক বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি কৌশলগত প্রক্রিয়া।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দুদিনের সফরে ভারতে এসেছেন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তার আগেই রাশিয়ার পার্লামেন্ট ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক সামরিক চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরকে লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দেবে, অর্থাৎ এক দেশের বাহিনী অপর দেশে গিয়ে সামরিক পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে।

দুই দেশের আলোচনায় প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সফরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভারতে রাশিয়ার তৈরি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে যে বিলম্ব দেখা দিয়েছে, তা সমাধানে জোর দেবে মোদি সরকার। আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে অতিরিক্ত এস-ফোর জিরো জিরো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল ভবন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, মস্কোর কাছে থেকে দিল্লির পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহও আলোচনায় আসতে পারে। এসইউ-৫৭ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ও ভারত মূল্যায়ন করছে। পাশাপাশি রাফাল, এফ-২১, এফ/এ-১৮ এবং ইউরোফাইটার টাইফুনসহ অন্য মডেলও তাদের বিবেচনায় রয়েছে। দুই নেতার বৈঠকে রাশিয়ান তেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন পেসকভ। তিনি বলেন, ‘ভারতের রুশ তেল আমদানি সাময়িকভাবে কিছুটা কমতে পারে, তবে রাশিয়া সরবরাহ বজায় রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে।’ মোদি ও পুতিন ছাড়াও দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও আন্দ্রে বেলোউসোভ সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাত নিতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে আলাদা বৈঠকে বসবেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, পুতিনের এমন সময়ে ভারত সফর করছেন, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া রুশ তেল আমদানির সঙ্গে জড়িত পণ্যে অতিরিক্ত আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এর পর থেকে ভারত রুশ তেল কেনা আংশিকভাবে কমালেও মস্কো চায় নয়াদিল্লি আবার আগের মতোই বড় বাজার হিসেবে থাকুক। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের বাজার রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালের আগে ভারতের রুশ তেল আমদানি ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ, যা যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ শতাংশে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূরাজনীতিতেও সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই যুদ্ধবিরোধী অবস্থান ধরে রেখেছে মোদি সরকার। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখায় ভারত শুরু থেকেই এই সংকট সমাধানে সব ধরনের সংলাপকে সমর্থন করছে। তবে মস্কোর প্রকাশ্যে সমালোচনা থেকেও তারা বিরত থেকেছে এবং মোদি নিজেকে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ‘সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!