দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় আটকে আছে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)। আর এই অচলাবস্থা কাটাতে নতুন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়া আর বিভক্ত চিন্তাধারা ও অকার্যকর কাঠামোর মধ্যে আটকে থাকতে পারে না। তাই সার্কের বাইরে নতুন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের এখনই সময়। সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, গত বুধবার ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইএসএসআই) আয়োজিত পঞ্চম ইসলামাবাদ কংক্লেভের উদ্বোধনী অধিবেশনে ইসহাক দার এই প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার পক্ষে আর ‘অন্তঃসারশূন্য মানসিকতা, রাজনৈতিক বিভক্তি ও অকার্যকর আঞ্চলিক কাঠামো’ নিয়ে এগোনো সম্ভব নয়। তিনি জানান, পাকিস্তান ‘উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক সহযোগিতা’ চায় এবং সার্কের বাইরে উদীয়মান বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মগুলোকেও সমর্থন দিচ্ছে। ইসহাক দার বলেন, চলতি বছর পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও চীন একটি ত্রিপক্ষীয় কাঠামো গঠন করেছে, যার লক্ষ্য পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানো। তার ভাষায়, ‘এই ধারণা আরও সম্প্রসারিত ও প্রয়োগযোগ্য। আমি আগেও বলেছি, অর্থনীতি থেকে আঞ্চলিক অগ্রাধিকার, সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তনশীল কাঠামোর দেশগুলোকে কারো অনমনীয়তার কাছে জিম্মি হওয়া উচিত নয়।’ তার এ মন্তব্যকে ভারতকে নিয়ে পরোক্ষ ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর পাকিস্তান-চীন-বাংলাদেশের মধ্যে চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল এ ধরনের প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠক এবং নতুন আঞ্চলিক কাঠামো নিয়ে চলমান আলাপের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সেখানে তিন দেশের সিনিয়র কূটনীতিকরা সম্ভাব্য জোটের রূপরেখা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সেখানে ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকে যুক্ত করার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, ভারতকেও এই প্রস্তাবিত ফোরামে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
তবে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত দূরত্ব বাড়ায় নয়াদিল্লি এতে যোগ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে না। উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ হিসেবে কল্পনা করা হলেও সার্ক আসলে ২০১৬ সাল থেকে কার্যত অচল। সে বছর পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন বয়কট করে ভারত, পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশও একই সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে সার্কের আর কেনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি ব্যাবসায়ীদের জন্য সার্কের অধীনে ভিসা ছাড় প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ সংস্থাটিকে আরও দুর্বল করেছে। আলোচনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, সার্ক পুনর্জাগরণের অপেক্ষায় থাকা আর সম্ভব নয় বলে পাকিস্তান ও চীন মনে করছে। আর তাই এখন ‘মনোভাবে মিল আছে’ এমন দেশগুলোকে এগিয়ে যেতে হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বৃহত্তর আঞ্চলিক কাঠামো নিয়ে আরও সতর্ক হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন