বলিউডের ইতিহাসে তুমুল সাফল্যের নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টিকারী রোমান্টিক মিউজিক্যাল সিনেমার সংখ্যা কম নয়। যুগে যুগে এ রকম অসংখ্য সিনেমা এসেছে। যার শ্রুতিমধুর অসাধারণ মনোমুগ্ধকর গান দীর্ঘদিন শ্রোতা-দর্শকদের হৃদয়ে অনুরণন সৃষ্টি করেছে। আবিষ্ট করে রেখেছে। সেই অনন্য সংগীতবহুল দুর্দান্ত সফল রোমান্টিক সিনেমার তালিকায় নতুন সংযোজন হয়ে এসেছে ‘সাইয়ারা’ সিনেমাটি।
গতকাল মুক্তি পেয়েছে এই সিনেমা। তবে এ সিনেমার গান সম্প্রতি দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে শ্রোতা-দর্শকদের মনে। অনেকেরই প্রত্যাশা এবং ধারণা, ‘সাইয়ারা’ বলিউডের রোমান্টিক মিউজিক্যাল সিনেমার
ইতিহাসে অনন্য সাফল্যের প্রমাণ দিয়ে
জায়গা করে নেবে।
‘আশিকি ২’-এর পরিচালক মোহিত সুরি এটি তৈরি করেছেন। এই সিনেমার হাত ধরে চাঙ্কি পান্ডের ভাইপো অহন পান্ডের অভিষেক হয়েছে। তার বিপরীতে দেখা গেছে অনিত পড্ডাকে। এই সিনেমার গানগুলো ইতোমধ্যেই ট্রেন্ডিং। জুলাইয়ের ব্যস্ত মুক্তির ক্যালেন্ডারে আলোচনায় না থাকলেও চুপিসারে নিজস্ব জায়গা করে নিচ্ছে এই রোমান্টিক সিনেমা ‘সাইয়ারা’। সিনেমাটি এখনো বড় মাপের ব্লকবাস্টারের তকমা পায়নি, কিন্তু ক্রমেই তৈরি হচ্ছে
আশার আলো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে একটা কথাই ঘুরছে- এই সিনেমা হতে পারে বছরের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত চমক। দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে একদম নতুন এক জুটি অহন পান্ডে ও অনিত পাড্ডা। তাদের কেমিস্ট্রি ইতোমধ্যেই সিনেমাপ্রেমীদের কৌতূহল বাড়িয়েছে।
বড় তারকা নয়, বরং নতুন মুখ; আন্তরিক অভিনয় আর সুরের আবেগ দিয়েই তৈরি হচ্ছে সাইয়ারার আবহ। মোহিত সুরি মানেই গান, আর সেই জায়গাতেই সিনেমাটি দিয়েছে সবচেয়ে বড় চমক। ইতোমধ্যেই মুক্তি পাওয়া চারটি গান রোমান্সপ্রেমী শ্রোতাদের মনে এনে দিয়েছে পুরোনো দিনের বলিউডের সুবাস।
কারো মনে পড়েছে ‘আশিকি ২’, কারো মনে বাজছে ‘তুম হি হো’। গানগুলোয় রয়েছে দুই হাজার দশকের সেই হারানো সুরের আবেশ, যা একদিকে মিলেনিয়ালদের টানে আবার অন্যদিকে, নতুন প্রজন্মকেও মোহিত করে।
মোহিত সুরির ক্যারিয়ার ঘাঁটলেই বোঝা যায়, তিনি হৃদয়ের গল্প বলতে জানেন। ‘আশিকি ২’, ‘এক ভিলেন’, ‘মালাং’- সব সিনেমাতেই তিনি গান আর আবেগকে একসূত্রে বেঁধে দিয়েছেন। সাইয়ারাতেও সেই ধারা বজায় থাকায় আশার জায়গা তৈরি হয়েছে। এমনকি এই রিমিক্স-নির্ভর যুগে যেখানে আসল গান যেন হারিয়েই যাচ্ছিল, সেখানে এই সিনেমার অ্যালবাম যেন এক ধনসম্পদ। এমনটাই মত পরিচালক মোহিত সুরির। এই রোমান্টিক সিনেমার টিজার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই চর্চায় রয়েছে।
মোহিতের কথায়, এই সিনেমা গানে আমার চিন্তা, মেলোডি রয়েছে। বেশ নিজের মনে হয় গানগুলো। এই সিনেমার গান কিউরেট করতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছেন পরিচালক। সিনেমাটির নির্মাতা সংস্থা যশ রাজ ফিল্মস আর মোহিত সুরি রোমান্টিক সিনেমা বানানোর জন্য বেশ প্রসিদ্ধ।
মোহিতের আশা, এই সিনেমার গানগুলো দর্শকদের অনেক দিন মনে থেকে যাবে। পরিচালকের কথায়, আমার খুব কাছের বন্ধুরা জানেন, নতুন গায়ক, কম্পোজারদের সঙ্গে মিট করতে ভালোবাসি আমি। যারা বই পড়তে ভালোবাসেন তারা যেমন বই কালেক্ট করেন, আমি তেমনই মিউজিক কালেক্ট করি। ‘সাইয়ারা’য় সেই সব গান আছে যা আমি পাঁচ বছর ধরে সংগ্রহ করেছি।
এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, আমি খুব ফ্রেশ, রোমান্টিক গান রাখতে চেয়েছিলাম অ্যালবামে। এই গানগুলো আমার খুব প্রিয়। ‘সাইয়ারা’র টাইটেল ট্র্যাক মুক্তি পেতেই মানুষের যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সিনেমায় জুবিন নটিয়ালের কণ্ঠে ‘বরবাদ’ গান প্রেম-বিরহের কারণে আলাদা মানে খুঁজে নিয়েছে শ্রোতা দরবারে। এর ফিমেল ভার্সন গেয়েছেন শিল্পা রাও।
গায়িকা জানিয়েছেন, তার কাছে মিউজিক মানে মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে যোগ তৈরি করা। তিনি জানিয়েছেন, ‘বরবাদ’ গান আসলে মন ভাঙার গান। আর ফিমেল ভার্সন গাওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি আপ্লুত। গানের মধ্যে অন্যরকম আবেগের ছোঁয়া তিনি খুঁজে পেয়েছেন।
শিল্পা বলেন, এই গান সামনে আসার পর আমি অনেকের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছিল। প্রত্যেকের পজিটিভ রিভিউ পেয়েছি এই গান নিয়ে। আর এই ভালোবাসাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা। যশ রাজ ফিল্মসের ব্যানার ও মোহিত সুরির সঙ্গে কাজ করা মানে শিল্পা রাওয়ের ঘরে ফেরা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদের সঙ্গে কাজ করে ক্রিয়েটিভ কমফোর্টের জায়গা তৈরি হয়েছে। ফলে অনেকদিন পর পুরোনো মানুষদের সঙ্গে কাজ করা মানে অবশ্যই আমার কাছে ঘরে ফেরার মতো। তবে প্রশ্ন উঠছে-এই ভালোবাসা কি বক্স অফিসে রূপ নেবে সাফল্যে? তার সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ফ্রেশ জুটি, গাননির্ভর রোমান্স, আর জেনারেশনের সঙ্গে রেজোনেট করা আবেগ, সব মিলিয়ে সাইয়ারা হতে পারে সেই সিনেমা, যা ধীরে ধীরে দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়।
তবে ঝুঁকিও কম নয়। নেই কোনো বড় তারকা, প্রচারও কম। সঙ্গে রয়েছে ওটিটির যুগে রোমান্টিক ঘরানার কিছুটা ক্লান্তি। কিন্তু সিনেমার ইতিহাস বলে- প্রথম দিনের ঝড় নয়, বরং ধীরে ধীরে শ্রোতাদের মনে ঢুকে যাওয়া সিনেমাই হয় আসল ‘স্লিপার হিট’। আর সেই সম্ভাবনা সাইয়ারার মধ্যে প্রবলভাবে জাগছে। মোহিত সুরি কি আবার ফিরিয়ে আনতে পারবেন হারিয়ে যাওয়া প্রেমের জাদু?
তবে এখনই একটা কথা বলা যায়, এই সিনেমা হৃদয়ে বাজতে পারে, ঠিক যেমন এক সময় বাজত ‘তুম হি হো’। গানের হাত ধরে সিনেপর্দায় একাধিক প্রেম কাহিনি তৈরি হয়েছে। ‘রকস্টার’ হোক কিংবা ‘আশিকি ২’, প্রেম-বিরহের সঙ্গে গানের যোগ গভীর। তেমনই আরও এক প্রেমগাঁথা ফুটে উঠতে চলেছে রুপালি পর্দায়? ‘সাইয়ারা’ ট্রেলার দেখে নেটপাড়ার একাংশ তেমনটাই মনে করছে।
যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত ‘সাইয়ারা’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে পা রাখলেন আরও এক তারকা সন্তান। বলিউড তারকা চাঙ্কি পান্ডের ভাইপো আহান পান্ডে নয়া অবতারে। এর আগে মোহিত ‘আশিকি ২’, ‘এক ভিলেন’ এবং ‘মালাং’-এর মতো ব্লকব্লাস্টার প্রেমকাহিনি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। এবার এলো তার পরবর্তী রোমান্টিক মিউজিক্যাল ড্রামা ‘সাইয়ারা’।
সিনেমাটির ট্রেলারে প্রেম-বিচ্ছেদ এবং বেদনায় পরিপূর্ণ। আহান এবং অনিতের মধ্যে রোমান্টিক দৃশ্যও দেখা যায়। একইসঙ্গে আহানকে তার ভালোবাসা পেতে নিজের সঙ্গে লড়াই করতেও দেখা যায়। আহান পান্ডের পর্দায় উপস্থিতি অসাধারণ। একজন গায়ক এবং প্রেমিকের ভূমিকায় তার লুক দুর্দান্ত। এই ট্রেলার দেখতে দেখতে অনেক জায়গায় আদিত্য রয় কাপুর এবং শ্রদ্ধা কাপুর অভিনীত ‘আশিকি ২’ সিনেমার কথা মনে পড়বে দর্শকদের। সিনেমায় পাশাপাশি অনিত সিনেমার জন্য গান লিখেছেন। আহান এবং অনিতের জুটি ট্রেন্ড করছে নেটপাড়ায়।
এক নেটিজেন লিখেছেন, আহানের অভিনয় দেখে রকস্টার সিনেমায় রণবীর কাপুরের কথা মনে পড়ে গেল। এই অভিনেতা অনেক দূর যাবে। আবার কেউ লিখেছেন, যখন সকলে মিলে সাইয়ারা গানটা গাইছে, গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আবার কেউ লিখেছেন, বাপরে, প্রথম সিনেমা আর এমন অভিনয়! মনে হচ্ছে ‘আশিকি ২’ সিনেমার মতো সুপারহিট হবে এটাও। অপেক্ষা করছি। আহান-অনিতকে একসঙ্গে দুর্দান্ত লাগছে।
এর আগে কাজল অভিনীত ‘সালাম ভেঙ্কি’ সিনেমাতে অনিতাকে দেখা গিয়েছিল। এটি অহন পান্ডের প্রথম সিনেমা। সিলভার স্ক্রিনে অহন-অনিতের প্রেমকাহিনি কতটা জমে তা জানা যাবে খুব তাড়াতাড়ি।