টালিউডের হাস্যোজ্জ্বল অভিনেত্রী রাতাশ্রী দত্ত। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে নানা ধরনের চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। কখনো তার অভিনীত চরিত্র নিয়ে চর্চা হয়েছে। আবার কখনো তার চরিত্র দর্শকহৃদয় ছুঁয়ে গেছে। সম্প্রতি এই অভিনেত্রী নতুন একটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এক সম্পর্কের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমা ‘হাউ আর ইউ ফিরোজ’। সিনেমাটিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তার বিপরীতে আছেন আরিয়ান ভৌমিক।
এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার পার্সি চরিত্রে অভিনয় করে উচ্ছ্বসিত রাতাশ্রী। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন রূপসা গুহ। এটি নির্মাতার প্রথম সিনেমা। সম্প্রতি সিনেমার পোস্টার ও ট্রেলার প্রকাশ্যে এসেছে। কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে আসছে আগস্টে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে বলে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন রাতাশ্রী।
নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে মিষ্টি হাসির এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এই সিনেমার গল্পটি অন্যরকম। অদ্ভুত এক প্রেমের গল্পে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। যেই প্রেম এখন নেই, হারিয়ে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হয়তো অচেনা লাগবে। প্রথমবার পার্সি চরিত্রে অভিনয় করেছি। এটি আমার জন্য নতুন একটি চরিত্র। এই চরিত্রে আমাকে ভাবাটাই অন্যরকম বিষয় ছিল। রূপসা গুহ আগে অভিনয় করতেন। প্রথমবার সিনেমা পরিচালনা করেছেন। আশা করছি, সিনেমাটি দর্শক পছন্দ করবেন।’
রাতাশ্রী অতনু বসুর ‘অচেনা উত্তম’-এ শর্মিলা ঠাকুরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। মাঝে সিনেমা থেকে বিরতি ছিল। অভিনেত্রী এবার পার্সি মেয়ের চরিত্রে পর্দায় ফিরছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে আগস্টে পর্দায় দেখা যাবে তাকে।
রাতাশ্রীর কথায়, আমায় বাঙালি ছাড়া কেউ ভাবতেই পারেন না। রূপসাদি যখন অন্য ভাষার এক নারী চরিত্রে আমায় ডাকলেন, রাজি হয়ে গেলাম। এই সিনেমার ‘সামিরা’ রাতাশ্রীর মতোই। ছটফটে, চনমনে, কথা বলতে ভালোবাসে। একইসঙ্গে তিনি পার্সি ভাষা, সেই সমাজের শিষ্টাচার জানতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে সিনেমাতে কাজ করতে গিয়ে তিনি আদতে ঋদ্ধই হয়েছেন।
আরিয়ানের সঙ্গে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন রাতাশ্রী। অভিনেতার সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে রাতাশ্রী বলেন, ‘খুব সহজাতভাবে ও আমার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তাতে কেমিস্ট্রিটা পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেও সুবিধা হয়েছে আমাদের।’
ফিরোজের জীবনে কোনো বন্ধু নেই। মনের কথা বলার জন্য সে সবসময় পাশে পায় একমাত্র সামিরাকে (রাতাশ্রী)। অভিনেত্রী বলেন, ‘সামিরা আসলে জীবনকে খানিক অন্যভাবে দেখতে চায়। সে একমাত্র বন্ধু ফিরোজের। সামিরাই একমাত্র বোঝে ফিরোজকে। যার চোখ দিয়ে ও দুনিয়া দেখে।’
যে সময়ে সম্পর্কে এত ওঠাপড়া, চারদিকে শুধুই বিচ্ছেদের সুর, সেখানে বাস্তবে কি সত্যিই কেউ কাউকে দুনিয়া দেখায়, এমন অনুপ্রেরণা জোগায়? রাতাশ্রীর কথায়, ‘এমনটা তো আমার ক্ষেত্রেই হয়েছে। আমাকেও কেউ নতুন করে পৃথিবী দেখতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কারণ, আমি একটা সময়ে গৃহে বন্দি থাকতাম। ইচ্ছে করত দুনিয়া দেখার। কিন্তু সাহস হয়ে উঠত না। খুবই রক্ষণশীল পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। ফলে আমার জীবনে এমন মানুষও রয়েছেন, যারা আমায় সাহস জুগিয়েছেন দুনিয়া দেখতে।’
সিনেমার ট্যাগলাইনে লেখা ‘কেমন আছ?’ সত্যিই কি এখন কেউ আর কাউকে কেমন আছো প্রশ্নটা করে? কেউ কারও মনের কথা জানতে চায়? রাতাশ্রী বলেন, ‘না সত্যিই, কেউ হয়তো এই প্রশ্নই করে না। খুব কম মানুষ সত্যিই জানতে চায় কেমন আছি। অথচ সকলের জীবনেই কোনো না কোনো বিশেষ মানুষ আছেন। কখনো হয়তো ইচ্ছে করে জানতে কেমন আছে কাছের মানুষটা। হয়তো উপায় হয় না।’
রাতাশ্রী জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সিনেমাটি বার্লিন, মস্কোসহ সাতটি চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরেছে। আরও ১৩টি উৎসবে প্রতিযোগিতার জন্য নমিনেশন পেয়েছে। এটি তার জন্য ভীষণ আনন্দের বলে জানান রাতাশ্রী।
সিনেমা থেকে ওয়েব সিরিজ সব মাধ্যমেই রাতাশ্রীর সাবলীল অভিনয় মন কেড়েছে দর্শকদের। কিন্তু হঠাৎই বেশ কয়েক মাস রিল লাইফ থেকে দূরে ছিলেন তিনি। ভক্তদের মন খারাপও হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই সব মন খারাপ দূর করে দিয়ে অভিনেত্রী চেনা ছন্দে ফিরছেন। ‘কেমন আছ ফিরোজ?’ সিনেমাতে সামিরার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের বুঝিয়ে দিলেন তিনি হারিয়ে যাননি। হয়তো সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন এবং তারপর আবার সেই লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন।
সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন খেয়া চট্টোপাধ্যায়, অনুশা বিশ্বনাথন, অশোক বিশ্বনাথন, রানা বসু ঠাকুর, বিদ্যুৎ দাস প্রমুখ।