ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

চলো চাঁদে যাই...

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০১:৪২ এএম

চাঁদ নিয়ে আমাদের কৌতূহল কখনো ফুরায় না, তাই না! রাতের আকাশে টিমটিম তারা ঘেরা রুপালি চাঁদকে দেখে কে না ভেবেছে, ওখানে আসলে কী আছে? হয়তো এক রাজকন্যা, হয়তো এক পরি! কতজন কত কী ভাবে তার ঠিক নেই। তবে আসলে ওখানে রয়েছেন এক দেবী; যিনি চুপচাপ বসে আছেন কারো অপেক্ষায়। না, বাস্তবে নয়; বলছিলাম অ্যানিমেশন মুভি ‘ওভার দ্য মুন’ এর কথা।  ভালোবাসা আর হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার এক অসাধারণ অভিযাত্রা নিয়ে তৈরি এই মুভি।

গল্প শুরু হয় চীনের একটি ছোট্ট শহর থেকে। সেখানে থাকে বুদ্ধিমান ও কল্পনাপ্রবণ এক মিষ্টি মেয়ে। মেয়েটির নাম ফেই ফেই। ছোটবেলায় সে প্রতিরাতে মায়ের কাছ থেকে চাঁদের দেবী চ্যাং’ই-এর গল্প শোনে। বলা হয়, চ্যাং’ই তার প্রিয়জনকে হারিয়ে চাঁদে চলে যান। তিনি এখনো সেখানে একা বসে আছেন, ভালোবাসার মানুষটির অপেক্ষায়। এই গল্পগুলো ফেই ফেইয়ের মনে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, সে বিশ্বাস করতে শুরু করে চ্যাং’ই সত্যিই এখনো চাঁদে আছেন।

আনন্দেই কাটছিল দিন। কিন্তু সে আনন্দ বেশিদিন আর রইল না। হঠাৎ করেই ফেই ফেইয়ের জীবনে নেমে আসে দুঃখ। তার মা অসুস্থ হয়ে মারা যান। কয়েক বছর পর, ফেই ফেইয়ের বাবা আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেই ফেই মনে করে, এতে তার মায়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা হারিয়ে যাবে। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, চাঁদে গিয়ে প্রমাণ করবে যে ভালোবাসা কখনো মরে না, চ্যাং’ই সত্যিই আছেন! সে উদ্দেশ্যে ফেই ফেই নিজের হাতে বানায় একটি ছোট রকেট। চাঁদে যাওয়ার এই পাগলাটে আইডিয়া শুনে সবাই হাসে, কিন্তু ফেই ফেই কিছুতেই হাল ছাড়ে না। নিজের বানানো রকেটে চড়ে সে সত্যিই উড়ে যায় আকাশে; সঙ্গে থাকে তার পোষা খরগোশ বান বান। 

চাঁদে পৌঁছে ফেই ফেই লুনার কাসল নামে রঙিন এক আলোকিত শহর দেখতে পায়। সেখানে গিয়ে সে দেবী চ্যাং’ই-এর দেখা পায়; যার চোখে এখনো লুকিয়ে আছে ভালোবাসার বেদনা। ফেই ফেই তাকে বোঝাতে চায় যে ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও তার অর্থ হারায় না। কিন্তু দেবী চ্যাং’ই যতক্ষণ না তার হারানো প্রেমিক হৌ ই-কে ফিরে পান, তিনি ফেই ফেইয়ের কথা মানতে চান না। এরপর কীভাবে গল্পটি হাসিখুশি পরিণতি পেয়েছে তা জানতে মুভিটি দেখতে বসে যাও। 

ওভার দ্য মুন-এর সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো এর অনুভূতি। মুভিটা বলে দেয়, প্রিয় মানুষ চলে গেলেও তাদের ভালোবাসা কোথাও হারায় না। গল্পে চ্যাং’ই আর ফেই ফেই একে অপরের প্রতিচ্ছবি। একজন প্রিয়জনের জন্য চাঁদে অপেক্ষা করছেন, অন্যজন পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসা খুঁজছে। শেষ পর্যন্ত তারা দুজনেই শিখে যায়, ভালোবাসা মানে ধরে রাখা নয়, বরং মনে রাখা। এই সিনেমার অ্যানিমেশন যেমন- চোখ ধাঁধানো, তেমনভাবে সিনেমার গানগুলোও গল্পেরই অংশ। একটি মুহূর্তও এমন নেই যেখানে দর্শক বিরক্ত হয়। কখনো হাসি, কখনো কান্না; সব মিলিয়ে মুভিটি এক আবেগঘন অভিজ্ঞতা। ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘ওভার দ্য মুন’-এর পরিচালক গ্লেন কিন।

ডিজনির প্রাক্তন এই অ্যানিমেটর চাইনিজ কল্পকাহিনীর মিশেলে এমন এক গল্প বানিয়েছেন, যা শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও উপভোগ করবে।