প্রশ্ন: অতীতের তুলনায় বর্তমানে বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কি বাড়ছে?
উত্তর: অতীতের তুলনায় বর্তমানে বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ছে বলেই আমরা মনে করি। বীমা বিষয়ে বর্তমানে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। বিমা সম্পর্কে যথাযথ প্রচার ও প্রসারের ফলে বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের চেয়ে বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং সব
স্টেকহোল্ডারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিমার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন বিধিবিধান প্রণয়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন হচ্ছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে এই সেক্টরের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।
প্রশ্ন: দেশের জনসংখ্যার তুলনায় জীবন বিমা গ্রাহকের হার অতি নগণ্য। পার্শ্ববর্তী দেশেসহ উন্নত বিশ্বে বিমা গ্রাহকের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশের মানুষ বিমা গ্রহণে অনাগ্রহী কেন?
উত্তর: দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো বিমা খাত। আমাদের লক্ষ্য ছিল জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১ শতাংশের বেশিতে উন্নীত করা। কিন্তু বর্তমানে বিমা খাত জিডিপিতে প্রায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অবদান রাখতে পারছে। এখন পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশকে বিমার আওতায় আনা যায়নি। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বিমার আওতায় আনতে হলে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রান্তিক পর্যায়ে বিমার সুবিধা সম্পর্কে যথাযথ প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিমা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি বিমার সেবাসমূহ আরও দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রদান করতে পারলে বিমা গ্রহণ করতে মানুষ আরও উৎসাহিত হবেন। বিমা গ্রহণে মানুষের অনাগ্রহের মূল কারণ হলো বিমা বিষয়ে জনগণের সচেতনতার অভাব এবং সঠিক প্রচার ও প্রচারণার অভাবে বিমার সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে না পারা বলে আমি মনে করি। তবে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং আমরা বিমাশিল্পের স্টেকহোল্ডাররা বিমা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় সঠিক ও দ্রুততম সময়ে বিমা দাবি নিষ্পত্তি এবং পরিশোধের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এর ফলে বর্তমানে বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং এই আস্থা ও বিশ্বাস ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: ব্যাঙ্কাস্যুরেন্সের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন?
উত্তর: ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স আমাদের দেশের জন্য অনেক সম্ভাবনাময়, ব্যাঙ্কাস্যুরেন্সের সম্ভাবনা এ দেশে প্রবল, কারণ এর ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা পণ্য বিপণন সহজলভ্য হবে। তা ছাড়া ব্যাঙ্কাস্যুরেন্সের মাধ্যমে বিমা ব্যবসা হলে তা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স নির্দেশিকা জারির পর ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স ব্যবসা চালু হয়েছে, যা ব্যাংক ও বিমা উভয় খাতের জন্যই লাভজনক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রশ্ন: বিমা দাবি পরিশোধ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন উল্লেখ করুন?
উত্তর: বিমা দাবি পরিশোধ হলো বিমা গ্রাহককে সেবাদানের মূল বিষয়, আমাদের সবাইকে এটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। কারণ আমাদের মূল্যবান বিমা গ্রাহকগণ তাদের কষ্টার্জিত আয় থেকে সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিমা পলিসি গ্রহণ করেন এবং সঞ্চিত অর্থ দিয়ে প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন। তারা জানেন যে, মেয়াদ শেষে অথবা অনাকাক্সিক্ষত কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তারা বিমা পলিসির সুবিধা, অর্থাৎ বিমা দাবি প্রাপ্য হবেন। তাই সঠিক সময়ে এবং বিপদের দিনে তাদের বিমা দাবি পরিশোধ করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব। তা ছাড়া বিমা আইন অনুযায়ীও দাবি পরিশোধে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই আমি মনে করি, দ্রুততম সময়ে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বিমা দাবি পরিশোধের মাধ্যমেই আমরা গ্রাহকদের বিমার প্রতি আগ্রহ ও বিশ্বাস বাড়াতে পারি এবং এর মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ জনগণকে বিমার আওতায় এনে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিশেষ অবদান রাখতে পারি।
প্রশ্ন: বিমা খাতের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে কী কী ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: বিমা খাতের উন্নয়নে আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিমা সেক্টরের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বিমার সুবিধা সম্পর্কে সঠিক প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বিমা সেক্টরের কর্মী ও কর্মকর্তাদের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়ন করে এবং বিমাসেবাকে ডিজিটাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিমাকে জনগণের মধ্যে সর্বজনীন করে তোলার জন্য কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে ভবিষ্যতে এই সেক্টরের উন্নয়ন ও অগ্রগতি আরও ত্বরাম্বিত হবে বলে আমি মনে করি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হলেন বি এম ইউসুফ আলী