ক্রেতাও বিক্রেতার মাঝে যিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি মার্চেন্ডাইজার। বর্তমানে মার্চেন্ডাইজার হিসেবে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার। মার্চেন্ডাইজারদের কাজ মূলত বায়িং হাউস ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। এ প্লাস গ্রুপের সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার ইশতিয়াক হাছান আশিক জানাচ্ছেন বিস্তারিত।
কী কাজ
বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজাররা বিদেশি ক্রেতা বা বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রডাক্ট বিক্রি বা পোশাক তৈরির অর্ডার নেন। বিদেশি বায়ারকে কাঙ্খিত প্রডাক্টের কয়েকটি স্যাম্পল বা নমুনা দেখানো হয়। পাশাপাশি প্রডাক্ট তৈরির উপকরণ, মান, বৈশিষ্ট ও গুণাগুণ বায়ারের কাছে তুলে ধরা হয়। বায়ার স্যাম্পল দেখে পছন্দ করলে দামের ব্যাপারটি চূড়ান্ত করেন। এরপর প্রডাক্টের সংখ্যা, শিপমেন্টের সময় ও দরদাম উল্লেখ করে উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। বায়ারের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে কি না, তা মার্চেন্ডাইজারকেই নিশ্চিত করতে হয়। প্রডাক্ট তৈরি থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত পুরো কাজ ও পরিকল্পনা মার্চেন্ডাইজারকেই দেখভাল করতে হয়।
যেসব দক্ষতা দরকার
ইশতিয়াক হাছান আশিক জানান, বায়িং হাউসগুলোই মূলত দেশের গার্মেন্টস-টেক্সটাইল এবং বিদেশি বায়ারদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দেশের বায়ায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়, তাই মার্চেন্ডাইজারকে ইংরেজিতে কথোপকথন ও যোগাযোগে পারদর্শী হতে হয়। পাশাপাশি অন্য আরও যত ভাষা জানা থাকবে, প্রার্থীকে ততটাই যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে দরকারি কিছু কাজে দক্ষতা থাকতে হবে। যেমন- ইমেইল পাঠানো, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা স্কাইপির ব্যবহার, ইমেজ ফরমেটে স্যাম্পল উপস্থাপন, দরকারি তথ্য জুড়ে দেওয়া ইত্যাদি।
নিয়োগ যেভাবে হয়
অনলাইন জব পোর্টাল ও প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অনলাইনে আবেদনের পাশাপাশি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সরাসরি সিভি জমা দেওয়ার সুযোগ থাকে। এরপর হয় সরাসরি ভাইভা, নয়তো প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার পর ভাইভার জন্য ডাকা হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে একাধিক ধাপে ভাইভা নেওয়া হয়।
পড়াশোনা
স্নাতক শেষে মার্চেন্ডাইজিংয়ের ওপর ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি কোর্স করা যায়। ১ বছরের ডিপ্লোমা ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং কোর্সের খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে ৪৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা। আর ৬ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ের খরচ পড়বে ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। সবচেয়ে ভালো হয় ‘এমবিএ ইন প্রডাক্ট অ্যান্ড ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিং’ (১-২ বছরের কোর্স, খরচ দেড় থেকে তিন লাখ টাকা) করতে পারলে। ভর্তির সময় নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বাকিটা মাসে মাসে কিস্তিতে দেওয়া যাবে। কোর্সে ওভেন, নিট ও সোয়েটারের ওপর থিওরিটিক্যাল ক্লাসের পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও নেওয়া হবে। এ ছাড়া অনার্স লেভেলে পড়াশোনা করা যায়।
সুযোগ-সুবিধা
একেবারে নতুন বা অনভিজ্ঞ প্রার্থীকে অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সাধারণত মার্চেন্ডাইজার, সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার ও মার্চেন্ডাইজার ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। এ প্লাস গ্রুপের মার্চেন্ডাইজার আশিক আরও জানান, শুরুতেই একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজারের বেতন সাধারণত ২০-৩০ হাজার টাকা ধরা হয়। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় দক্ষতা-অভিজ্ঞতাভেদে
সিনিয়রদের বেতন লাখের বেশি হতে পারে। সিনিয়র কর্মকর্তাদের গাড়ি-বাড়িসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। একজন মার্চেন্ডাইজার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই বায়িং হাউস কিংবা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন।
মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজের সুযোগ কেমন?
বিশ্বের অনেক নামকরা পোশাক প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড তাদের প্রডাকশনের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে। ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব আঞ্চলিক বা লিয়াজোঁ অফিসের পাশাপাশি ট্রেডিং হাউসের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি সব মিলিয়ে দেশে বায়িং হাউসের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আর বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। এ ছাড়া টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান, কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান ও ফ্যাশন ডিজাইন হাউস তো আছেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মার্চেন্ডাইজারের দরকার হয়।
একজন মার্চেন্ডাইজারের প্রধান কাজগুলো
বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ:
বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরির প্রস্তাব দেওয়া।
স্যাম্পল তৈরি ও অনুমোদন:
বায়ারদের চাহিদা অনুযায়ী স্যাম্পল তৈরি করা এবং তাদের অনুমোদন নিশ্চিত করা।
উৎপাদন পরিকল্পনা ও সমন্বয়:
পণ্যের উৎপাদন পরিকল্পনা তৈরি করা এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা।
উপকরণ সংগ্রহ:
পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (যেমন: কাপড়, সুতা, অনুষঙ্গ) সংগ্রহ করা এবং তার মান নিশ্চিত করা।
গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ (ছঈ):
উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করা এবং বায়ারের প্রত্যাশা অনুযায়ী মান বজায় রাখা।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা:
বায়ারদের কাছ থেকে অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পণ্যের বিক্রি পর্যন্ত সব আর্থিক হিসাব-নিকাশ তত্ত্বাবধান করা।
শিপমেন্ট বা রপ্তানি:
প্রস্তুতকৃত পণ্য সময়মতো বায়ারের ঠিকানায় রপ্তানি করা বা শিপমেন্টের ব্যবস্থা করা।
সমস্যা সমাধান:
উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধান করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
অনুলিখন: মিনহাজুর রহমান নয়ন