অনেকের পড়াশোনা শেষ হয়ে যায় কিন্তু ক্যারিয়ার নিয়ে মাথা ঘামান না, আবার যখন ক্যারিয়ার গড়ার সময় হয় তখন পরে যান অবসাদে। নিজের কোন কাজে আগ্রহ আছে, তা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করেন না। যে চাকরির সুযোগ সামনে আসে তাতেই কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু ক্যারিয়ার যদি হয় অপছন্দের এবং কাজে যদি আগ্রহ না থাকে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া স্বাভাবিক। সে থেকে জন্ম নিতে পারে বিষণœতা ও দুশ্চিন্তার মতো নানা রকম সমস্যা। ফিনটেক কনসালটেন্ট ও পাবলিক স্পিকার, সাবেক ব্যাংকার ইঞ্জিনিয়ার মো. ফিরোজ কবিরের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মিনহাজুর রহমান নয়ন
আগে আপনার আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন
নিজের ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রথম ধাপ হওয়া উচিত আপনার কী কী কাজ বা বিষয়ে আগ্রহ আছে তা নিয়ে চিন্তা করা। স্কুলে আপনার পছন্দের বিষয় কোনটা ছিল এবং কেন সেই বিষয়টা আপনার প্রিয় ছিল? অথবা যদি এর আগে কোনো ইন্টার্নশিপ বা স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে থাকেন, সেই কাজের কোন অংশটি আপনার ভালো লেগেছে? এমনকি কোনো বিষয় আছে, যা নিয়ে পড়াশোনা করতে বা শিখতে আপনার ভালো লাগে? কী কী বিষয়ে আগ্রহ আছে বোঝার পর ভেবে দেখুন কীভাবে সেই দক্ষতাগুলো ভবিষ্যতে ক্যারিয়ারে কাজে লাগাতে পারবেন।
আপনার দক্ষতাগুলো কী, তা ভেবে বের করুন
ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজের সহজাত দক্ষতা ও গুণগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা থাকা সাফল্যকে তুলনামূলকভাবে সহজ তো করেই, পাশাপাশি কাজ নিয়ে ভয় বা উদ্বেগও কমাতে সাহায্য করে। নিজের দক্ষতার বিষয় নিয়ে কাজ করে আরও বেশি সফল ও পরিতৃপ্ত অনুভব করা সম্ভব। প্রথমে নিজের দক্ষতা ও গুণগুলো ভেবে বের করুন এবং তারপর এসব দক্ষতা ব্যবহার করে সফল হওয়ার মতো ক্যারিয়ারগুলোর একটি তালিকা বানান। যেমন আপনার যদি খুব ভালো অর্গানাইজেশনাল স্কিলস থাকে, তা ব্যবহার করে ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
টাকার ব্যাপারে চিন্তা করা যাবে না
চাকরির চাহিদা কেমন এবং বেতন কেমন পাওয়া যাবে ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে অন্যতম একটু ভূমিকা থাকে এ প্রশ্নগুলোর। আর হওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু একটা জিনিস ভুলে গেলে চলবে না। কাজ যদি আপনার অপছন্দের হয়, টাকার অঙ্ক যত বেশিই হোক না কেন তা আপনাকে শান্তি দিতে পারবে না। তাই কোন ক্যারিয়ারে কত টাকা বেতন পাওয়া সম্ভব এটা ভেবে চাকরির সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো।
আপনার শখগুলোর তালিকা তৈরি করুন
অবসর সময়ে কী করতে উপভোগ করেন? স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে ফুটবল খেলা পর্যন্ত শখ আপনার যাই হোক, ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ায় তা অনুপ্রেরণা জোগাতে সক্ষম।
সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি নিজের প্রিয় শখটাকে ফুল-টাইম ক্যারিয়ারে রূপান্তর করতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি যদি অবসর সময়ে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের জন্য জন্মদিন বা অন্যান্য উৎসব উপলক্ষে নানা রকম কার্ড বানাতে পছন্দ করেন, তাহলে এসব কার্ড অনলাইনে বিক্রি করার মাধ্যমে নিজের একটি ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব।
পরামর্শদাতার সঙ্গে কথা বলুন
ক্যারিয়ার পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া পরবর্তী সময়ে অনেকটা সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে এর মানে যদি হয় অপছন্দের একটি বিষয় নিয়ে চার-পাঁচ বছর পড়াশোনা করার মতো ভুল থেকে বেচে যাওয়া। ক্যারিয়ার পরামর্শকের সঙ্গে কথা বলা বিশেষ সাহায্য করবে যখন আপনি কোনো নির্দিষ্ট ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি। কারণ তাদের কাজ হচ্ছে আপনার লক্ষ্য, আগ্রহ, নীতি ও পছন্দ-অপছন্দ খুঁজে বের করতে সাহায্য করা এবং নিজেকে আরও ভালোভাবে বোঝার সম্ভাবনা গড়ে তোলা। আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং সেবা প্রদান করে কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
আপনার কাছে কোন জিনিসটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে চিন্তা করুন
কোন ক্যারিয়ারটা আপনার জন্য সঠিক তা বোঝার জন্য আপনার কাছে কোন জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা জরুরি। তা হতে পারে আপনার কাজের জন্য স্বীকৃতি পাওয়া, নিজের নীতি ধরে রেখে কাজ করা অথবা নিজের দেশ ও বিশ্বের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। এ ধাপে নেওয়া তথ্য ও সিদ্ধান্ত ব্যবহার করে আপনার জন্য কোন ধরনের ক্যারিয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত এবং তা থেকে আপনি কী অর্জন করতে চান তা বুঝতে পারবেন। কারণ সাফল্যের সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে সব সময় এক হয় না।
ছোটবেলার স্বপ্নগুলোর কথা মনে করুন
ছোটবেলায় বড় হয়ে কী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন আপনি? মহাকাশচারী? নাকি চিকিৎসক? সেই স্বপ্ন আপনার জন্য ততটা অধরা নাও হতে পারে। আপনার ছোটবেলার স্বপ্ন যদি বর্তমান ব্যক্তিত্ব ও আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে তা আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই এই আগ্রহগুলো তাদের ব্যক্তিত্বের একটি অংশকে প্রতিফলিত করে। তাই ছোটবেলার স্বপ্নগুলো বিশ্লেষণ করে আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার খুঁজে পেয়েও যেতে পারেন।
বিভিন্ন ক্যারিয়ার নিয়ে পড়াশোনা করুন
একবার আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা নিয়ে ধারণা হয়ে গেলে সম্ভাব্য ক্যারিয়ারগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং প্রতিটি ক্যারিয়ার নিয়ে রিসার্চ করুন। এ ক্যারিয়ারে প্রতিদিন কী কী কাজ করতে হয় এবং কোন ধরনের সাংগঠনিক পরিবেশে এ কাজের সুযোগ আছে? কোন স্কিলগুলো কাজে লাগে এবং কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়, এ ক্যারিয়ারে চাকরির সুযোগ ও চাহিদা কেমন,নিজেকে প্রতিদিন এই ক্যারিয়ারে দেখতে চানÑ প্রয়োজনে এই ক্যারিয়ারে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফলো করুন এবং গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিটি ক্যারিয়ার সম্পর্কে যতটা সম্ভব তথ্য খুঁজে বের করুন। কারণ পর্যাপ্ত তথ্য ছাড়া কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।