রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহরুন নিশি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০১:৩০ এএম

হতে হবে সব্যসাচী

মেহরুন নিশি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০১:৩০ এএম

হতে হবে সব্যসাচী

একটা সময় ছিল, তরুণেরা কেউ বলত, আমি লেখক, কেউ বলত আমি গায়ক, আমি ফটোগ্রাফার আরও কত কী। তবে এখনকার তরুণেরা সহজেই বলে ফেলে, আমি কনটেন্ট ক্রিয়েটর।  হাতে একটা স্মার্টফোন, আর তাতে ইন্টারনেট; তার সঙ্গে যদি থাকে সৃজনশীল মন, তবেই যেন শুরু হয়ে যায় নতুন এক পেশার যাত্রা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শুধু ভিডিও বানালেই কি  কেউ কনটেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে যায়? উত্তরটা সহজ নয়। কারণ, এই সময়ের সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে একটা বিষয়ে ভীষণ মিল পাওয়া যায়; তারা সবাই প্রায় সব্যসাচী। আজকের কনটেন্ট জগতে একক কোনো দক্ষতা দিয়ে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। এখন একজন ক্রিয়েটরকে একসঙ্গে হতে হয় পরিচালক, স্ক্রিপ্টরাইটার, এডিটর, গ্রাফিক ডিজাইনার, মার্কেটার। এমনকি কখনো কখনো নিজের ব্র্যান্ড ম্যানেজারও। অর্থাৎ এক মানুষকেই একাধিক ভূমিকায় মানিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে ক্রিয়েটর হতে গেলে কী কী গুণ থাকা চাই, তার বিস্তারিত থাকছে নিচের লেখায়-

গল্প বলতে জানতে হয়

ভালো কনটেন্টের শুরু হয় একটা ভালো গল্প থেকে। সেটা হতে পারে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, দৈনন্দিন জীবনের মজার ঘটনা কিংবা কোনো সামাজিক বার্তা। একজন দক্ষ ক্রিয়েটর জানেন কীভাবে সাধারণ বিষয়কেও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় ইউটিউব বা টিকটকের জনপ্রিয় ক্রিয়েটরদের; তাদের ভিডিওর গল্প বলার ধরন আলাদা। গল্পের ভেতরে থাকে সংলাপ, তাল, রিদম এবং দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগের এক অদ্ভুত টান। তাই আপনিও যদি হতে চান কনটেন্ট ক্রিয়েটর, আপনাকেও অবশ্যই গল্প বলা এবং বোঝার দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে। নিচে রইলো ভালো স্ক্রিপ্টের গঠন-

হুক বা আকর্ষণ: ভিডিওর প্রথম ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডে দর্শকের মনোযোগ কাড়তে হবে। যেমন ‘আপনি জানেন কি, প্রতিদিন এক মিনিটেই নিজের জীবন বদলে দেওয়া যায়?’ এ ধরনের বাক্য দর্শককে ধরে রাখে।

বডি বা মূল বার্তা: এখানেই আপনার গল্প, তথ্য বা শিক্ষা থাকতে হবে। চেষ্টা করবেন কথার ফ্লো স্বাভাবিক রাখতে-অতিরিক্ত জটিল নয়, আবার ফাঁপাও নয়।

কল টু অ্যাকশন বা শেষ বার্তা: ভিডিও করা শেষ হলে দর্শককে কিছু করার অনুপ্রেরণা দিতে হবে। যেমন ‘আজই আপনি চেষ্টা করে দেখুন, পরের সপ্তাহে নিজেই পরিবর্তনটা টের পাবেন!’

নিজের কণ্ঠের স্টাইল: অন্য কারো মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন না, বরং নিজের কথা বলার নির্দিষ্ট শৈলী কিংবা স্টাইল তৈরি করুন।

শুটিং ও এডিটিং

কিছু বছর আগেও কনটেন্ট প্রডাকশনে একাধিক লোকের দল লাগত। তবে এখন সময় বদলেছে, এখন একজন মানুষই পুরো কাজ সামলাতে পারে। নিজের ফোনেই শুট করা, সঠিক অ্যাঙ্গেল বেছে নেওয়া, লাইটিং ঠিক করা, এমনকি মিউজিক বেছে নেওয়ার কাজও এখন ক্রিয়েটরের হাতের মুঠোয়। এছাড়া ভিডিও এডিটিংয়ের দক্ষতা এখন বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। কারণ এক মিনিটের কনটেন্টে দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখা অনেক কঠিন। কোথায় কাট দিতে হবে, কোথায় মিউজিক ঢুকবে; এই সূক্ষ্ম জিনিসগুলো নির্ধারণ করে ভিডিওর প্রভাব। তাই নিজেকে দক্ষ করতে হবে এসব বিষয়েও।  নিচে কিছু শুটিং টিপস দেওয়া হলো-

আলো: ক্যামেরা আলোর খেলা। চেষ্টা করবেন প্রাকৃতিক আলো (যেমন জানালার পাশে সকাল বা বিকেলের সূর্যালোক) ব্যবহার করতে। এতে ভিডিওর আবহই পাল্টে যাবে।

অ্যাঙ্গেল: চোখের সমান উচ্চতায় ক্যামেরা রাখলে ভিডিও স্বাভাবিক লাগে, আর নিচ থেকে ধরলে শক্তিশালী দেখায়। এ ছাড়া ওপর থেকে ধরলে দেখায় কোমল।

ফ্রেমিং: ‘রুলস অব থার্ড’ মেনে চললে ভিডিও কিংবা ছবির ভারসাম্য সুন্দর হয়। আপনার মুখ বা মূল বিষয়টি ফ্রেমের মাঝখানে না রেখে সামান্য এক পাশে রাখুন।

স্ট্যাবিলিটি: কাঁপা ভিডিও দেখলে দর্শকের মনোযোগ নষ্ট হয়। তাই হাত কাঁপলে ট্রাইপড বা গিম্বল ব্যবহার করুন। না হলে টেবিলের ওপর কিছুর সঙ্গে রেখে দিন।

ডিজাইন ও ভিজ্যুয়াল সেন্স

কনটেন্টের প্রথম ইমপ্রেশন আসে থাম্বনেইল থেকে।  এই ছবিটাই দর্শককে আপনার কনটেন্টে ক্লিক করতে বাধ্য করে। এজন্য কিছুটা গ্রাফিক ডিজাইন জানাও দরকার। শুধু সুন্দর মুখ বা ভালো ক্যামেরা থাকলেই হবে না, রঙের ব্যবহার, ব্যালান্স, ফন্ট এবং ভিজ্যুয়াল স্টাইলিং নিয়েও ভাবতে হয়। একজন ভালো কনটেন্ট ক্রিয়েটর বুঝে যান, কোন ভিজ্যুয়াল দর্শকের মনে দাগ ফেলবে।

মার্কেটিংয়ের জ্ঞান

দারুণ কনটেন্ট বানালেও যদি সেটি দর্শকের কাছে না পৌঁছায়, তবে সব পরিশ্রম বৃথা। তাই ক্রিয়েটরকে জানতে হয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম, কীভাবে পোস্টে রিচ বাড়ানো যায়, কখন ভিডিও আপলোড করলে বেশি দর্শক পাওয়া যায়। এমনকি ব্র্যান্ড কলাবোরেশনের সময়ও মার্কেটিং বুঝতে হয়, কারণ এখন ক্রিয়েটররাই একেকটা ব্র্যান্ড।

মনস্তত্ত্ব বোঝা

দর্শক কী চায় তা বোঝার ক্ষমতাই একজন ক্রিয়েটরের সবচেয়ে বড় শক্তি। সব সময় ট্রেন্ড অনুসরণ করলেই হয় না; কখনো কখনো ট্রেন্ড তৈরি করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন পর্যবেক্ষণ, গবেষণা এবং সঠিক সময়ের বোধ। মানুষ কী নিয়ে হাসে, কী শুনে অনুপ্রাণিত হয়, বা কীসে রাগে; এসব জানলে এবং নিজের কনটেন্টে প্রয়োগ করলে কনটেন্ট আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।

যোগাযোগ দক্ষতা

কনটেন্ট তৈরি মানে একরকম পারফর্মিং আর্ট। ক্যামেরার সামনে কীভাবে কথা বলতে হয়, কোথায় বিরতি দিতে হবে, কোথায় হাসতে হবে এসব শেখা দরকার। একজন ভালো ক্রিয়েটর নিজের কণ্ঠ, শরীরের ভাষা এবং অভিব্যক্তিকে ব্যবহার করেন দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরিতে।

আজীবনের শিক্ষার্থী

কৃষি কাজ করতে গেলে যেমন অধিকাংশ কাজ একবার শিখেই তা কাজে লাগিয়েই আজীবন পার করা যায়; কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে চাইলে কিন্তু এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। এই পেশায় একবার কিছু শিখলেই শেখা শেষ হয়ে যায় না। প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু আসে, যেমন- নতুন অ্যাপ, নতুন ট্রেন্ড, নতুন টুল। যারা শেখা বন্ধ করে দেয়, তারা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। তাই সফল ক্রিয়েটররা সারাজীবন লার্নিং মোডে থাকে। তারা ভুল করে, পরীক্ষা চালায় আবার নতুনভাবে শুরু করে।

এআই যুগের স্মার্ট ক্রিয়েটর

এআই এখন কনটেন্ট নির্মাতাদের বড় শক্তি। একজন স্মার্ট নির্মাতা জানেন, কীভাবে প্রযুক্তিকে নিজের সহকর্মী বানাতে হয়। যেমন চ্যাটজিপিটি দিয়ে স্ক্রিপ্ট আইডিয়া তৈরি করা, মিডজার্নি বা লিওনার্দো দিয়ে থাম্বনেইল ডিজাইন করা, রানওয়ে দিয়ে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড বদলে ফেলা কিংবা ডিস্ক্রিপ্ট দিয়ে ভয়েস ক্লিন করা-সবই এখন সম্ভব কয়েক মিনিটের মধ্যে। আগে একটি ভিডিও বানাতে সময় লাগত পুরো দিন কিংবা তারও বেশি সময়, এখন এআইয়ের সাহায্য নিয়ে কয়েক ঘণ্টায় তা শেষ করা যায়।

ধারাবাহিকতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ

একটা ভিডিও ভাইরাল হলে অনেকেই মনে করে, সেখানেই সাফল্য। কিন্তু বাস্তবে কনটেন্ট জগতে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো ধারাবাহিক থাকা। নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করা, সময়মতো পোস্ট করা এবং নিজের মান ধরে রাখা; এই তিনটাই বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে আত্মনিয়ন্ত্রণ আর সময় ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। কনটেন্ট ক্রিয়েশন এখন শুধু বিনোদন নয়; এটা একটা পূর্ণাঙ্গ পেশা। কেউ যদি সত্যি এই জগতে আসতে চায়, তাকে হতে হবে বহুমুখী।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!