ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

তরুণদের জন্য রাশিয়ার অবারিত সুযোগ

শাওন সোলায়মান, রাশিয়ার নিজনি নভোগরদ থেকে ফিরে
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:০৫ এএম

প্রতিভা বিকাশে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনে তরুণদের জন্য অবারিত সুযোগ দিচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়া ও রাশিয়ার বাইরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তরুণ ও যুব প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এক ঝাঁক আকর্ষণীয় আয়োজনে। আয়োজনের নেতৃত্বে রয়েছে দেশটির ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরেট’। এসব আসরে আয়োজকদের অর্থায়নে ভ্রমণ করা যাবে রাশিয়া, যেখানে আন্তর্জাতিক যুব প্রতিনিধির সাথে তৈরি হবে যোগাযোগ। শুধু তাই নয়, এসব আয়োজনে রাশিয়ায় অবস্থান করে অথবা নিজ দেশে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে ফান্ডিং, দিকনির্দেশনা, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং নেটওয়ার্কিংয়ের মতো সাহায্য পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হতে পারে বাংলাদেশের যুব প্রতিনিধি এবং তরুণরাও। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অধিদপ্তর যেসব অনুষ্ঠান ও সমাবেশ আয়োজন করতে যাচ্ছে, সেগুলোর বিস্তারিত থাকছে এখানে।

ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি

যুব প্রতিনিধিদের জন্য রাশিয়ায় আয়োজিত সবথেকে আকর্ষণীয় আসরের নাম ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি’। প্রতি বছর রাশিয়াসহ বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশ থেকে কয়েক হাজার যুব প্রতিনিধি এই অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলকে বিশ্ব প্রতিনিধিদের কাছে পরিচিত করতে প্রতি বছর দেশটির ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এই অ্যাসেম্বলিকে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল সচিবালয়ের ‘সিগনেচার’ অনুষ্ঠান বলা যেতে পারে। এই অনুষ্ঠানটিকে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল সচিবালয় এতটা গুরুত্ব দেয় যে, প্রতি বছর এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। গত ১৬ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার এক হাজার এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের আরও এক হাজার যুব প্রতিনিধিদের নিয়ে নিজনি নভোগরদ শহরে বসেছিল ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি। এই অনুষ্ঠানে আয়োজকদের আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে সংবাদকর্মী হিসেবে উপস্থিত ছিলাম আমি নিজেও। ২০২৬ সালের অ্যাসেম্বলি আয়োজিত হবে ‘ক্রাসনোয়ার্স্ক’ শহরে। রাশিয়ার পাঁচ হাজার এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের আরও পাঁচ হাজার অর্থাৎ মোট ১০ হাজার প্রতিনিধি আগামী আসরে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। আর ২০৩০ সালে এই অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন ২০ হাজার জন প্রতিনিধি।

সামার স্কুল

রাশিয়ায় তরুণদের অংশগ্রহণের আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে ‘সামার স্কুল’। এই সামার স্কুল আসরের অধীনে লোক প্রশাসন খাত থেকে অংশগ্রহণকারীরা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ‘সেনেজ’ কর্মশালা, ডিজাইন ও মিউজিক খাতে ‘মেগানোম’ কর্মশালা এবং রুশ ভাষা ও ইতিহাসবিষয়ক শিক্ষক-গবেষক ও ব্লগার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা বিশেষ কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ২০২৫ সালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোসহ দেশটির বিভিন্ন আঞ্চলিক শহরে আয়োজিত সামার স্কুলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিন শতাধিক পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন।

ব্লগ ট্যুর

গত ৫ থেকে ১০ মে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল সচিবালয় বিশ্বের ১৯টি দেশের সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে একটি ‘ব্লগ ট্যুর’ আয়োজন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে বিদেশি ব্লগারদের নিয়ে বিশেষ এই ট্যুর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সোশ্যাল মিডিয়া তথা নিউ মিডিয়ার ৩৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে মস্কো, তুলা, পেট্রোজাভোদস্ক, ভলগোগ্রাদ (স্টালিনগ্রাদ) ও সেন্ট পিটার্সবার্গসহ (লেনিনগ্রাদ) ঐতিহাসিক শহরগুলো পরিদর্শন করেন এবং ইউরোপ ও বিশ্বকে নাৎসিবাদ থেকে মুক্ত করার ইতিহাস সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য ও দলিল অধ্যয়ন করেন।

ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ক্লাব

ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অধিদপ্তরের আরেকটি অন্যতম উদ্যোগ হলো আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ক্লাব বা ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ক্লাব। কোন আয়োজনে তরুণরা একে অপরের সাথে যোগাযোগের সুযোগ পান, তবে সেই যোগাযোগ ও সম্পর্ক ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। এই বিবেচনায় ক্রমাগত যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব বজায় রাখার পরিম-ল তৈরির উদ্দেশ্য থেকে গঠন করা হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ ক্লাব। রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ৯০টি ক্লাবের পাশাপাশি বিশ্বের ১৪০টি দেশে এই ক্লাব রয়েছে, যার মাধ্যমে তরুণদের অংশীদারিত্ব স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশেও রয়েছে এই ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ক্লাব’। ক্লাব কার্যক্রমে ইতিমধ্যে ৩২ হাজারের বেশি তরুণ অংশগ্রহণকারী যুক্ত হয়েছেন এবং এক হাজারেরও বেশি অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করা হয়েছে।

শিশুদের জন্যও থাকছে নানা আকর্ষণীয় সুযোগ

ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অধিদপ্তর তাদের আয়োজনগুলোতে শিশু ও কিশোরদের সম্পৃক্ত করতেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক শিশু সেশন আয়োজন করছে ‘ওশান অল-রাশিয়ান চিলড্রেনস সেন্টার’ এবং ‘আরতেক-আন্তর্জাতিক শিশু কেন্দ্র’। ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীরা এখানে দলগতভাবে কাজ করা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা শেখা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মৌলিক ধারণা অর্জন করে। যেমন গত জুলাইতেই ‘আরতেক’ এ চালু হয় একটি অনন্য প্রোগ্রাম ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অব ব্রিকসÑ দ্য ওয়ার্ল্ড অব দ্য ফিউচার’। এই কর্মসূচির আওতায় ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অন্যান্য ২০টিরও বেশি দেশের ১০০ জন অংশগ্রহণকারী একত্র হয়। এই অধিবেশনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শিশু কূটনীতি বিকাশ, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সাংস্কৃতিক সংলাপ জোরদার করা।

এর ঠিক পরের মাসে গত ৭ থেকে ২৭ আগস্ট আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠনগুলোর মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় সমুদ্রতীরবর্তী শিশু ক্যাম্পে, যেখানে ১১টি দেশের ২০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। এতে আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, জর্ডান, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, সুইজারল্যান্ড ও রাশিয়ার শিশুরা অংশ নেয়। এর লক্ষ্য ছিল শিশু কূটনীতি বিকাশ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা স্থাপন এবং এমন প্রকল্প তৈরি করা যা বিশ্বের সব দেশের শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় ও বাস্তবায়নযোগ্য।

এসব নিয়মিত আয়োজনের বাইরেও, ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অধিদপ্তর বিদেশি অংশীদার সংগঠনগুলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়, যৌথ উদ্যোগ ও প্রকল্প বাস্তবায়নেও কাজ করছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ১১৪টি আন্তর্জাতিক প্রকল্প অফিস খোলা হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের ১৩৬টি দেশের দূতাবাস, যুব সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে সংস্থাটি।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আসর আয়োজন ও আবেদনের সময় : উপরে উল্লেখিত আয়োজনগুলো বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময় না বরং একেক বছর একেক সময়ে আয়োজিত হয়। এ জন্য এসব আসরে অংশগ্রহণে আবেদনের সময়সীমাও নির্দিষ্ট নয়। ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অধিদপ্তর এ জন্য আগ্রহীদের সংস্থাটির ওয়েবসাইট যঃঃঢ়ং://ুিভভবংঃ.পড়স/বহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (টেলিগ্রাম) যঃঃঢ়ং://ঃ.সব/ুিভভবংঃথবহ নিয়মিত ভিজিট করার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি এও জানিয়েছে যে, অনুষ্ঠান আয়োজনের পূর্বে যথাযথ সময় রেখেই আবেদন গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়।

অর্থায়ন : এখন পর্যন্ত বিদ্যমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উপরে উল্লেখিত সব অনুষ্ঠানে নির্বাচিত অংশগ্রহণকারীদের যাবতীয় খরচ বহন করবে আয়োজক অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অধিদপ্তর বা সচিবালয়। হোটেল এবং খাবারের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী রাশিয়ার বাইরের কোনো দেশ থেকে রাশিয়ায় সফর করলে, তার যাতায়াতের (উড়োজাহাজ, ট্রেন ইত্যাদি) খরচও বহন করবে আয়োজক। তবে রাশিয়া ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীর রুশ ভিসার প্রয়োজন হলে, ফি দিয়ে তার জন্য প্রযোজ্য রাশিয়ান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে অংশগ্রহণকারীকেই। অবশ্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা করে থাকে অধিদপ্তর।

ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ক্লাবে অংশগ্রহণের লিংক : যঃঃঢ়ং://ুিভভবংঃ.পড়স/বহ/রভপ.